ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বিনোদন

‘ফিরোজা বেগম ছিলেন আমার কাছে গানের ঈশ্বর’

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২৫৮ ঘণ্টা, জুলাই ২৮, ২০১৬
‘ফিরোজা বেগম ছিলেন আমার কাছে গানের ঈশ্বর’

‘ফিরোজা বেগমের মতো গুণী মানুষের জন্মতিথিতে এমন একটি বড় সম্মান পেলাম, আমার জীবন সার্থক। ফিরোজা বেগম আমার কাছে কোনো শিল্পী নন, তিনি আমার কাছে ছিলেন গানের ঈশ্বর’- বলছিলেন কিংবদন্তি কণ্ঠশিল্পী সাবিনা ইয়াসমিন।

ফিরোজা বেগম স্মৃতি স্বর্ণপদক গ্রহণের তিনি একথা বলেন।

নজরুলসংগীত সম্রাজ্ঞী ফিরোজা বেগমের জন্মদিনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রথমবারের মতো প্রদান করা হলো ‘ফিরোজা বেগম স্মৃতি স্বর্ণপদক ও পুরস্কার-২০১৬’। দেশীয় সংগীতাঙ্গনে অসামান্য অবদানের জন্য এই পুরস্কার পেয়েছেন সাবিনা। গত বছর ঢাবি’র সংগীত বিভাগে প্রথম স্থান অধিকারী শিক্ষার্থী পার্থ প্রতিম মিত্রও পেয়েছেন একই পুরস্কার। এ ছাড়া সংগীত বিভাগের একজন প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীকে দেওয়া হয় অর্থ সাহায্য।

বৃহস্পতিবার (২৮ জুলাই) বিকেলে নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবন মিলনায়তনে সাবিনা ও প্রতিমের হাতে পুরস্কার তুলে দেন প্রধান অতিথি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক। সাবিনাকে স্বর্ণপদক এবং এক লাখ টাকার সম্মানী এবং পার্থ প্রতিম মিত্রকে স্বর্ণপদক ও অর্থ সম্মানী দেওয়া হয়।

এ পুরস্কার পেয়ে আবেগাপ্লুত সাবিনা আরও বলেন, ‘ফিরোজা বেগমকে নিয়ে ভারতীয় উপমহাদেশের বিখ্যাত সব শিল্পীরা সেই সময় ঈর্ষা করতেন। শিল্পী হিসেবে তিনি আমাদের দেশের ও সংস্কৃতির অমূল্য সম্পদ ছিলেন। তার মতো এতো গুণী শিল্পী আমরা হয়তো আর পাবো না। ’ অনুষ্ঠানে তিনি গানও গেয়েছেন।

ফিরোজা বেগমের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে সাবিনা বলেন, ‘প্রায় তিন-চার বছর আগে ফিরোজা আপার সঙ্গে আমার শেষ দেখা হয়েছিলো কমল দাশগুপ্তর জন্মশতবার্ষিকীতে। তখন দেখলাম ফিরোজা আপা একের পর এক গান গেয়ে শোনাচ্ছেন। আমার পাশে বসে ছিলো শাফিন আহমেদ। তখন শাফিনকে বললাম, ‘দ্যাখ, এই বয়সেও আপা কি গাইলো। আমরা কি এমন পারবো?’ 

ফিরোজা বেগমকে বাঙালি এবং বাংলা সংস্কৃতির গর্ব হিসেবে আখ্যায়িত করেন উপাচার্য। শিল্পীকে নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নানামাত্রিক গবেষণা কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে বলেও জানান তিনি। অনুষ্ঠানের শুরুতে সংগীত বিভাগের শিক্ষার্থীরা ফিরোজা বেগমকে উৎসর্গ করে নজরুলসংগীত পরিবেশন করেন। নেচেছেন নৃত্যকলা বিভাগের ছাত্রীরা।

ফিরোজা বেগম স্মৃতি স্বর্ণপদক ট্রাস্ট ফান্ডের দাতা এসিআই ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ফিরোজা বেগমের ভাই এম আনিস-উদ-দৌলা স্বাগত বক্তব্যে প্রয়াত শিল্পীর স্মৃতিচারণের মাধ্যমে তার জীবনদর্শন ও কর্মময় জীবনের নানাদিক তুলে ধরেন। আক্ষেপের সুরে তিনি বলেন, ‘জীবদ্দশায় ফিরোজা বেগমকে মূল্যায়ন করতে আমরা ব্যর্থ হয়েছি। ’ নতুন প্রজন্মের কাছে ফিরোজা বেগমকে তুলে ধরতে তাকে নিয়ে গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনার আহ্বান জানান তিনি।

বিশেষ অতিথি ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের কলা অনুষদের ভারপ্রাপ্ত ডিন অধ্যাপক ড. বেগম আকতার কামাল বলেন, ‘ফিরোজা বেগমের মতো শিল্পীর মৃত্যু হয় না। তিনি বেঁচে থাকবেন বাঙালিদের হৃদয়ে। ’

নৃত্যকলা বিভাগের চেয়ারপার্সন রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা বলেন, ‘ফিরোজা বেগমের মতো শিল্পী আমাদের আরও অনেক যুগ প্রয়োজন ছিলো। তার অভাব কোনোদিনই পূরণ হওয়ার নয়। ’

অনুষ্ঠানে আরও ছিলেন ফিরোজা বেগমের সন্তান মাইলস ব্যান্ডের শিল্পী শাফিন আহমেদ, হামিন আহমেদ, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব:) মসিহ-উদ-দৌলা, রুবাবা দৌলা, তার ভাইয়ের মেয়ে নজরুলসংগীত শিল্পী সুস্মিতা আনিস, বিজনেস ফ্যাকাল্টি অনুষদের ডিন শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম।

ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীত বিভাগের চেয়ারপার্সন ড. লীনা তাপসী খান, সভাপতিত্ব করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার অধ্যাপক ড. মো: কামাল উদ্দীন। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও আপ্যায়নের মাধ্যমে শেষ হয় এবারের ফিরোজা বেগম স্মৃতি স্বর্ণপদক ও পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠান। এ আয়োজন সরাসরি দেখিয়েছে চ্যানেল আই। তত্ত্বাবধান ও পরিচালনা করেন চ্যানেল আইয়ের প্রোগ্রাম ম্যানেজার রাজু আলীম।

বাংলাদেশ সময়: ২২৫২ ঘণ্টা, জুলাই ২৮, ২০১৬
টিএস/জেএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।