ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বিনোদন

বিশেষ প্রতিবেদন  

এফডিসির খাবারের খোঁজে…

সোমেশ্বর অলি, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৩২ ঘণ্টা, আগস্ট ২৭, ২০১৬
এফডিসির খাবারের খোঁজে… ছবি-নূর, বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

‘কী খাইতে চান? ব্যবস্থা অইবো’- এফডিসিতে খাবার সরবারহকারীদের চ্যালেঞ্জটা এরকমই। এফডিসির খাবার খাননি বিনোদন অঙ্গনে এমন শিল্পী বা কলাকুশলী খুঁজে পাওয়া দুষ্কর।

চলচ্চিত্র, টিভি নাটক আর বিজ্ঞাপনের শুটিং মানেই উদয়াস্ত ব্যস্ততা। এর বড় একটা অংশজুড়ে থাকে খাবারের বিষয়টি। সংশ্লিষ্টরা কাজ করবেন নাকি খাবার নিয়ে মাথা ঘামাবেন! উপায় একটাই- এফডিসির খাবার, কোনো ঝক্কি নেই, স্বাস্থ্যসম্মত আর সুস্বাদু। ‘অল্প টাকায় অর্ডার করো, পেটপুরে খাও। ’ 

দু’একজন তারকা শিল্পী বাদে সবারই পছন্দ এফডিসির খাবার। জিহ্বায় খাবারের স্বাদ লেগে থাকার গল্প করেন অনেকেই। এফডিসির খাবার তেমনই। শুটিং দেখতে গিয়ে খেয়েছেন এমন ব্যক্তিরা নিজের অঞ্চলে গিয়ে ভূয়সী প্রশংসা করেন, সেসব গল্প মিথ্যে নয়, তবে মিথের পর্যায়ে পড়ে! কারা তৈরি করেন জগদ্বিখ্যাত সেই খাবার? কীভাবে তৈরি হয় এগুলো? কী রহস্য? খোঁজ নিয়েছে বাংলানিউজ।  

এফডিসির ক্যান্টিন বাদ দিলে, বিভিন্ন শুটিংস্পটে খাবার সরবরাহ করা হয় আরও তিনটি জায়গা থেকে। এফডিসিতে ঢুকতে কয়েক গজ দুরে হাতের বায়ে মেইন রোডের পাশে গাড়ির গ্যারেজের ‘চিপায়’ গড়ে উঠেছে তিনটি খাবার হোটেল। মূলত এখান থেকেই এফডিসির ভেতর, ঢাকা, উত্তরা, গাজীপুরসহ বিভিন্ন স্থানে পৌঁছে দেওয়া হয় বাহারি সব খাবার। ৮০-১০০ টাকায় মাছ, মাংস, সবজি, ভর্তা, ডাল ও ভাতের প্যাকেজ পাওয়া যায়। অর্ডারকারীর পরিবহন খরচ বহন করেন। কালুর হোটেল, সালেক হোটেল ও হালিম হোটেল বছরের পর বছর খাবার সরবরাহ করে নিশ্চিন্ত রাখছে সবাইকে।  

জোছনা ও তার প্যারালাইজড স্বামীর গল্প
এ সময়ে এসে হালিম হোটেলের জৌলুস কিছুটা কমে গেছে। ২৫ বছরের বেশি সময় ধরে তারা খাবার সরবরাহের কাজটি করছেন। কয়েক বছর ধরে হোটেলের মালিক হালিম সাহেব প্যারালাইজড হয়ে বিছানায় শায়িত। তার স্ত্রী জোছনা বেগম এখন হোটেলটি পরিচালনা করছেন। হোটেলের আয় দিয়ে চলছে সংসার। স্বামীর চিকিৎসার খবর, এক ছেলে ও মেয়ের পড়াশোনা। হোটেলে আছে পাঁচজন স্টাফ। আজিজ বাবুর্চি ১৫ বছর ধরে এখানে রান্না করছেন। জোছনা বেগম বলেন, ‘স্বামী অসুস্থ, এর পর থাইক্যা অর্ডার কইম্যা গেছে। তার মতন কইরা আমরা চালাইতে পারতেছি না। তা-ও ভালা আছি, দিন চলতেছে। ’

জোছনা বেগম জানান, হরেক পদের খাবার তৈরি হয় তার হোটেলে। ২০০০ লোকের জন্য খাবার প্রস্তুত করার অভিজ্ঞতা আছে তাদের। আজিজ বাবুর্চি প্রতিদিন ভোর ছয়টায় হোটেলে আসেন। খাবার প্রস্তুত করেন দুপুর অবধি। তারপর ছুটি। এজন্য তিনি রোজ পান ৮০০ টাকা। জোছনা আরও জানান, এখন শুটিং কমে যাওয়ায় ও উত্তরায় বিকল্প খাবার দোকান গড়ে ওঠায় তারা একটু বেকায়দায় আছেন। এতোকিছুর পরও খাবারের সুনাম ধরে রেখেছে হালিম হোটেল।  

হোটেলের পরিবেশ দেখতে ‘অস্বাস্থক্যর’ হলেও এখানকার মাটির চুলা থেকেই তৈরি হয় সব খাবার। ব্যবহার করা হয় লাকড়ি। এফডিসি এলাকায় গ্যাস নেই। তাতে কোনো সমস্যা নেই তাদের। মাটির চুলায় রান্না হয় বলেই এফডিসির খাবারের এতো স্বাদ বলে জানালেন সংশ্লিষ্টরা। আগে এফডিসির পুরনো গেটের পাশে থাকলেও আড়াই বছর ধরে এখানে চলছে তাদের রান্নাযজ্ঞ। অন্য দুটি হোটেলও এখানেই। ১৫ হাজার টাকা মাসিক ভাড়ায় তার ঘরটি নিয়েছেন জোছনা।

কালু কালু ডাক পাড়ি…
এফডিসির খাবারের জন্য কালু মিয়া এখন সবচেয়ে বিশ্বস্ত ও জনপ্রিয় নাম। বলতে গেলে হালিম সাহেবের পুরনো জায়গাটিতে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন তরুণ কালু। মাত্র ছয় বছর ধরে এ পেশায় এলেও প্রতিযোগিতায় এগিয়ে আছেন তিনি। তার কাছে অর্ডার (সাধারণত ফোনে যোগাযোগ করেন কাস্টমাররা) আসে বেশি। সবার পছন্দের এই মানুষটি জানালেন তার দোকানের কোনো নাম নেই। একটু পর আমতা আমতা করে বললেন, ‘ভাই ভাই ক্যাটারিং’ও বলতে পারেন…’।

কালুর মতে, বর্তমানে চলচ্চিত্রের অবস্থা বেশি ভালো নয়। কাজেই তারাও ভালো নেই। বেশি বেশি শুটিং হলে বেশি বেশি খাবার সরবরাহ করা যাবে- এমনটাই ভাবেন তারা। এখন শুটিংই হয় কম। এ নিয়ে আফসোস হলেও কিছু করার নেই বলে জানান কালু।

কালু মিয়ার হোটেলে কর্মী আছেন ১৫ জন। কাজের ওপর ভিত্তি করে বাবুর্চি রতনকে মজুরি দেওয়া হয়। ঘরের জন্য মাসে ভাড়া গুনতে হয় ১৬০০০ টাকা। পারিশ্রমিক মিললে বাবুর্চি নিজেই চলে যান আউটডোরে। সেটা হতে পারে গাজীপুর, সিলেট কিংবা অন্য কোনো স্থান। কালু মিয়া জানালেন কিছু কমন খাবার তারা সরবরাহ করেন, মেন্যুর রদবদল হয় খুব কম। অন্যদের বেলায়ও এটাই ঘটে। আলুভর্তা, কালিজিরা ভর্তা, পাঁচমিশালি সবজি, বেগুনভর্তা, চিংরি ভর্তা, লাউয়ের সবজি, ডাল ভুনা, শুটকি ভর্তা, রুই মাছ, কাতল মাছ, মুরগির মাংস, গুরু মাংসের কালা ভুনা প্রভৃতি।         

নিজেই মালিক, বাবুর্চিও!
হালিম হোটেল ও ভাই ভাই ক্যাটারিংয়ের অবস্থান একদম পাশাপাশি। একটা ঘর বাদেই সালেক মিয়ার হোটেল। এর বয়স ৯ মাস। একই ধরনের খাবারই সরবরাহ করেন মালিক সালেক। চমকপ্রদ ব্যাপার হলো, তিনি নিজেই বাবুর্চি। আগে অন্য হোটেলে কাজ করতেন। এখন নিজেই হোটেল পরিচালনা করছেন। সালেক মিয়া বললেন, ‘আমি শুরু করলাম কিছুদিন আগে। এখনও অর্ডার তেমন পাই না, টুকটাক আর কি! আমার এখানে কাস্টমার আসে মোটামুটি, তাতেই দিন চইল্যা যায়। ’

পছন্দের নেই শেষ
এদিকে কোনো কোনো শিল্পী বড় চিংড়ি, কাজলী মাছ, পাবদা মাছ, বোয়াল মাছ, হাঁসের মাংস, মোরগ বা সাদা সবজি খেতে ভালোবাসেন। তাদের এসব পছন্দকে প্রাধান্য দিয়ে খাবার তৈরি করতে হয় কালু কিংবা জোছনাকে। কমন খাবারের বাইরে সাধারণত খুব কমই এমনটা হয়। কারণ শুটিংওয়ালাদেরও তো একটা বাজেট মেনে চলতে হয়!

তিতা কথা
এফডিসির খাবারের তরকারিসহ অন্য রসদ আসে কারওয়ান বাজার থেকে। হোটেলওয়ালারা খুব সকালে বাজারের কাজটি সেরে নেন। সাধারণত টাটকা জিনিসটাই রান্না করেন তারা। এরপরও কিছু অভিযোগ উঠেছে আজকাল। অনেকে মনে করেন, কারওয়ানবাজারের পঁচা কিংবা ফেলে দেওয়া সবজি তারা রান্নায় ব্যবহার করে। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্টরা আত্মপক্ষ সমর্পন করে জানান, এটা একদম মিথ্যে কথা। এমনটা তারা সজ্ঞানে করেন না।  

বাংলাদেশ সময়: ১৫৩০ ঘণ্টা, আগস্ট ২৭, ২০১৬
এসও/জেএইচ 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।