ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বিনোদন

মুক্তিযুদ্ধের ছবি: আমরা প্রযোজক পাইনি, এখন পেয়েও হয় না!

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৫৩০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৩, ২০১৭
মুক্তিযুদ্ধের ছবি: আমরা প্রযোজক পাইনি, এখন পেয়েও হয় না! কাজী হায়াৎ

ঢাকা: মহান মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন প্রেক্ষাপট নিয়ে নির্মিত হয়েছে অসংখ্য পূর্ণদৈর্ঘ্য, স্বল্পদৈর্ঘ্য ও প্রামাণ্যচিত্র। বহু নির্মাতা বিভিন্ন সময় সেলুলয়েডে তুলে এনেছেন মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানিদের বর্বরতা ও বাঙালির বিজয়গাথা। তেমন একজন নির্মাতা কাজী হায়াৎ। বিজয়ের মাসে এই পরিচালকের সঙ্গে কথা হয় বাংলানিউজের।

কাজী হায়াৎ নিজেও একজন মুক্তিযোদ্ধা। মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে তিনি বেশ কয়েকটি চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছেন।

এরমধ্যে অন্যতম ‘সিপাহি’। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে এটি তার প্রথম চলচ্চিত্র ছিল। ১৯৮৮ সালে ছবিটির শ্যুটিং শুরু করেন। কিন্তু শুরুতেই হোঁচট খান। লগ্নিকারক চলে যাওয়ায় কয়েকদিনের মাথায় কাজ বন্ধ হয়ে যায়। তারপরও থেমে ছিলেন না ‘আম্মাজান’ খ্যাত এই নির্মাতা।

কাজী হায়াৎ বলেন, আমি যখন ‘সিপাহি’ নির্মাণ করি, তখন মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক গল্প নিয়ে কেউ চলচ্চিত্র নির্মাণ করতে চাইতেন না। সাহস করে উদ্যোগ নিয়েছিলাম। তবে ছবির প্রযোজক জানতেন না এটি মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপটের ছবি। শ্যুটিং শুরু হওয়ার পর জানতে পেরে তিনি ছবিটিতে লগ্নি করা থেকে সরে দাঁড়ান। এরপর তিনবার প্রযোজক বদলে। যখন কোনোভাবেই প্রযোজক ব্যবস্থা করতে পারছিলাম না, তখন আমি নিজের সম্মানি ও অন্যান্য খরচ না নিয়ে একজন প্রযোজক ব্যবস্থা করি। তিনি ছিলেন প্রয়াত কে এম আর মঞ্জুর। তার অর্থায়নে ছবি শেষ হয়।

শেষের পর? এমন প্রশ্নের জবাবে গুণী এ নির্মাতা জানান, তবুও ঝামেলা পিছু ছাড়েনি। কিছু স্পর্শকাতর দৃশ্যের কারণে নিষিদ্ধ হয়ে এক বছরেরও বেশি সময় ধরে আটকে ছিল সেন্সর বোর্ডে। পরে অবশ্য তৎকালীন তথ্যমন্ত্রীর নির্দেশে ছয় বছর পর ১৯৯৪ সালে ছবিটি মুক্তি পায়। এতে অভিনয় করেন ইলিয়াস কাঞ্চন, চম্পা ও মান্না।

আবেগঘন কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘সিপাহি’ নির্মাণ করতে গিয়ে প্রচণ্ড অর্থ সংকটে পড়ি। আমার পরিবারের পক্ষ থেকেই ছবিটি বন্ধ করে দিতে বলে। তবুও নির্মাণ থেকে সরে যাইনি। কারণ আমি একজন মুক্তিযুদ্ধা। সবসময় মুক্তিযুদ্ধের চলচ্চিত্র নির্মাণের স্বপ্ন দেখতাম। মানুষের কাছে মুক্তিযুদ্ধের সে বিভীষিকাময় সময়টা তুলে ধরতে চাইতাম। সে জায়গা থেকে আমি মুক্তিযুদ্ধের ছবি নির্মাণ থেকে সরে দাঁড়াতে পারিনি।
...
এরপর মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক গল্প নিয়ে কাজী হায়াৎ নির্মাণ করেন ‘যন্ত্রণা’। এছাড়াও তার পরিচালিত ‘দাঙ্গা’, ‘ত্রাস’, ও ‘দেশদ্রোহী’ ছবিতেও উঠে আসে ১৯৭১’র বিভিন্ন সময়ের চিত্র।

বর্তমানে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে খুব কম চলচ্চিত্র নির্মিত হচ্ছে। তবে বেশি বেশি মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র নির্মাণের পক্ষে তিনি। এই প্রসঙ্গে কাজী হায়াৎ বলেন, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস তুলে ধরতে বেশি বেশি ছবি নির্মাণ করা দরকার। এখন মুক্তিযুদ্ধের যেকোনো গল্প নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মাণের সুযোগ রয়েছে। যেটা আমরা পাইনি, প্রযোজকও পাইনি। এখন পেয়েও হয় না। পৃষ্ঠপোষকতা বেশি। নির্মাণ করতে হবে তা না হলে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক সিনেমা নির্মাণের সংখ্যা বাড়বে না।

এ বিষয়ে তরুণদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।

বৃদ্ধ বয়সে শেষবারের মতো মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে আরেকটি সিনেমা নির্মাণের ইচ্ছের কথা জানান। সেই ছবি নাম দেবেন ‘ওয়ার চায়েল্ড’। বলেন, অনেকদিন ধরে এই গল্পটি নিয়ে আমি কাজ করছি। একজন যুদ্ধশিশুর গল্প নিয়ে ছবিটি নির্মিত হবে। যদিও এখনও কিছুই ঠিক হয়নি। সময় ও সুযোগ হলে শ্যুটিং শুরু করবো।

বাংলাদেশ সময়: ১১২৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৩, ২০১৭
জেআইএম/আইএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।