ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বিনোদন

ক্যামেরার সামনে ছিলাম প্রেমিক-প্রেমিকা, বাইরে বাবা-মেয়ে

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০২৭ ঘণ্টা, জুলাই ১৩, ২০১৮
ক্যামেরার সামনে ছিলাম প্রেমিক-প্রেমিকা, বাইরে বাবা-মেয়ে দিলদার ও নাসরিন

বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসের কিংবদন্তি কৌতুক অভিনেতা দিলদার। তিনি ছিলেন ঢাকাই চলচ্চিত্রের ‘কমেডি কিং’। অপ্রতিদ্বন্দ্বী এই অভিনেতা ২০০৩ সালের ১৩ জুলাই পৃথিবী থেকে বিদায় নেন। তার চলে যাওয়ার ১৫তম বার্ষিকী শুক্রবার (১৩ জুলাই)।

দিলদার চলে গেছেন, কিন্তু তার জায়গাটি এখনো কেউ পূরণ করতে পারেনি। দিলদারের মৃত্যুর পর অনেকে কৌতুক অভিনেতা হিসেবে পরিচিতি পেলেও জনপ্রিয়তায় দিলদারের ধারের কাছেও ঘেঁষতে পারেননি কেউ।

দীর্ঘ ক্যারিয়ারে দিলদার সিনেমায় সবচেয়ে বেশি জুটি বেঁধে অভিনয় করেছেন অভিনেত্রী নাসরিনের সঙ্গে। পর্দায় তাদের উপস্থিতি দর্শকদের ভিন্নমাত্রার আনন্দের খোরাক যোগাতো। নব্বইয়ের দর্শকে দিলদার-নাসরিনকে ছাড়া সিনেমা যেনো জমতোই না!

তবে দিলদারের প্রয়াণের পর সিনেমায় নাসরিনের আগের মতো উপস্থিতি নেই। স্বামী-সন্তান-সংসার নিয়ে এখন তার ব্যস্ততা। কিন্তু এরমাঝেও শ্রদ্ধাভরে দিলদারকে স্মরণ করেন প্রায় ৬শ’ সিনেমার অভিনেত্রী নাসরিন। দিলদারের সঙ্গে কাজের স্মৃতিগুলো এখনও তাকে আপ্লুত করে।

বাংলানিউজের সঙ্গে আলাপে নাসরিন বলেন, দিলদার ভাইয়ের সঙ্গে আমার সম্পর্কের গভীরতা বলে বোঝানো যাবে না। ক্যামেরার সামনে আমাদের সম্পর্ক ছিল প্রেমিক-প্রেমিকার। আর ক্যামেরার পেছনে সেটা বাবা-মেয়ের মতো। তিনি আমাকে খুব স্নেহ করতেন, আদর করতেন, মেয়ের মতো যত্ন নিতেন। তার কথা খুব মনে পড়ে। এখন বেঁচে থাকলে হয়তো আমার সন্তানদের তিনি দেখতে আসতেন, দোয়া করতেন।

দিলদারের সঙ্গে সম্পর্কের গভীরতা বোঝাতে গিয়ে নাসরিন বলেন, ‘আমি যখন সিনেমায় কাজ শুরু করি, তখন আমার বয়স ছিল সাড়ে ১২ বছর। এর আগেই আমি বাবা-মাকে হারাই। থাকতাম আত্মীয়ের বাসায়। তখন সকালে না খেয়েই শুটিংয়ে চলে যেতাম। দিলদার ভাই সেটা জানতেন। তাই আমি সেটে গেলেই তিনি আমাকে নাস্তা করাতেন। অনেক সময় নিজের নাস্তাটাও আমাকে খাওয়াতেন। ’

১৯৯৪ সালে দিলদারের সঙ্গে প্রথম অভিনয় করেছেন নাসরিন। কিন্তু তাদের প্রথম সিনেমাটি এখন পর্যন্ত মুক্তি পায়নি। নাসরিন বলেন, ‘দিলদার ভাইয়ের সঙ্গে প্রথম সিনেমাটির নাম মনে করতে পারছি না। তবে মনে আছে প্রথম সিনেমা থেকেই তিনি আমাকে কাজ করতে অনেক সাহায্য করেছিলেন। এরপর আমরা প্রায় ৩শ’রও বেশি সিনেমায় অভিনয় করেছি। সবার প্রশংসা পেয়েছি। ’

দিলদারের সঙ্গে নাসরিনের খুনসুটির অনেক স্মৃতি রয়েছে। একটি ঘটনার বর্ণনা দিয়ে নাসরিন বলেন, ‘একবার আমরা দু’জন ঠিক করলাম একসঙ্গে আর কাজ করবো না। তখন অনেকদিন পর হঠাৎ এফডিসির আলাদা দু’টি ফ্লোরে একদিন আমাদের শুটিং চলছিল। সেদিন আমি মেকআপ রুম থেকে বেরিয়ে শুটিং সেটের দিকে যাচ্ছিলাম। হঠাৎ দেখে কে যেনো আমার গায়ে পানি ছুড়ে মারলেন। পেছনে তাকিয়ে দেখি দিলদার ভাই। তখন ভাইয়ের সঙ্গে অনেক রাগ দেখাই। তবে ঘটনাটি মনে পড়ে এখন খুব হাসি পায়। ’

সিনেমা পাড়ায় নাসরিনের সঙ্গে দিলদারের প্রেমের গুঞ্জন ছিল। যার কারণে দিলদারের পরিবার থেকে নাসরিনের সঙ্গে কাজ করার বিষয়েও নিষেধাজ্ঞাও দেওয়া হয়েছিল। তবে বিষয়টি একদমই উড়িয়ে দিয়ে নাসরিন বলেন, ‘আমাদের মধ্যে তেমন কিছুই ছিল না। তৃতীয়পক্ষ কেউ আমাদের পেছনে শত্রুতা করে এগুলো রটাতো। ’

‘দিলদার ভাইয়ের জায়গা কেউ নিতে পারলেন না। আল্লাহ তাকে নিজে হাতে দিয়েছেন। তার মতো কেউ আর হতে পারবে না’। বলেন এই অভিনেত্রী।

অভিনেতা রিয়েল খানের সঙ্গে ঘর বেঁধেছেন নাসরিন। তার বড় মেয়ে আফ্রির বয়স সাড়ে ৪ বছর ও ছোট ছেলে রিজনের বয়স ২ বছর। সংসারের ব্যস্ততা কাটিয়ে লাইট ক্যামেরার ঝলমলে দুনিয়ায় তিনি আবারও ব্যস্ত থাকার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।

তার ভাষ্যে, ‘অনেকেই অভিনয়ের জন্য ডাকেন। কিন্তু সন্তানদের জন্য কাজ করতে পারি না। ছেলে যখন স্কুলে যাওয়া শুরু করবে তখন আবার অভিনয়ে নিয়মিত হওয়ার ইচ্ছে আছে। ’

দিলদার ১৯৪৫ সালের ১৩ জানুয়ারি চাঁদপুরে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৭২ সালে ‘কেন এমন হয়’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে ঢালিউডে অভিষেক হয় তার। তার অভিনীত উল্লেখ্যযোগ্য সিনেমাগুলোর মধ্যে রয়েছে- ‘বেদের মেয়ে জোসনা’ ‘বিক্ষোভ’, ‘অন্তরে অন্তরে’, ‘স্বপ্নের নায়ক’, ‘আনন্দ অশ্রু’, ‘শান্ত কেন মাস্তান’, ‘আবদুল্লাহ’ ইত্যাদি।

২০০৩ সালে ‘তুমি শুধু আমার’ ছবিতে কৌতুক অভিনেতা হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ১৬২১ ঘণ্টা, জুলাই ১৩, ২০১৮
জেআইএম/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।