ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বিনোদন

অভিনয় পছন্দ করিনি, গান গেয়েই আমার সুখ: লতা মঙ্গেশকর

বিনোদন ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩৩৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ২, ২০১৯
অভিনয় পছন্দ করিনি, গান গেয়েই আমার সুখ: লতা মঙ্গেশকর

সংগীতজগতে একটি বিস্ময়কর নাম লতা মঙ্গেশকর। সম্প্রতি জীবনের বর্ণময় ৯০ বছর পূর্ণ করেছেন উপমহাদেশের ‘নাইটিঙ্গেল’খ্যাত এ সংগীতশিল্পী। এমন কোন সুর, আবেগ বা অনুভূতি নেই যা তার সুমধুর কণ্ঠে গান হয়ে প্রকাশিত হয়নি। কর্মজীবনে ৭৭ বছর ধরে ৩৬টি ভাষায় অগণিত গান গেয়েছেন তিনি। অথচ অভিনয় দিয়েই শুরু হয়েছিল তার কর্মজীবন।

লতা মঙ্গেশকরের জীবন, কর্ম ও প্রেরণা নিয়ে মানুষের কৌতূহলও অনেক। জীবনের নয় দশক পেরিয়ে এখনও তিনি ভারতীয় সংগীতজগতে উজ্জ্বলতম নক্ষত্র হয়ে পথ দেখাচ্ছেন নবীনদের।

সম্প্রতি ফিল্মফেয়ারে প্রকাশিত একটি সাক্ষাৎকারে তার সম্পর্কে জানা যায় নানা অজানা কথা। এরই চুম্বকাংশ বাংলানিউজের পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো।


প্রথম জীবনের সংগ্রাম

১৯২৯ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর জন্মগ্রহণ করেন লতা মঙ্গেশকর। মাত্র পাঁচ বছর বয়সেই গানের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে ওঠে তার। পরিবারের দুর্দশার কারণে কিশোরী বয়সেই তাকে রুটি রোজগারে নামতে হয়। লতা বলেন, ‘আমার বাবা (শিল্পী দীননাথ মঙ্গেশকর) ১৯৪২ সালের এপ্রিলে মারা যান। সে বছর অক্টোবরেই আমি কাজ শুরু করি। তখন আমার বয়স ১৩-১৪ বছর। সুতরাং আমাকে নায়ক বা নায়িকার ছোট বোনের চরিত্রে অভিনয় করতে হতো। কিন্তু অভিনয় করতে আমার ভালো লাগতো না। মেকআপ করা, নির্দেশ অনুযায়ী হাসা বা কাঁদা আমি উপভোগ করতাম না। গান গাইতেই আমার সবচেয়ে বেশি ভালো লাগতো। ’

তিন বোন লতা, আশা, মীনা ও ভাই হৃদয়নাথ

সংগীতকে ঘিরে জীবনের একটি স্মরণীয় ঘটনা

‘১৯৬৩ সালের ঘটনা। সেবার প্রজাতন্ত্র দিবসকে সামনে রেখে একটি দেশাত্মবোধক গান গেয়েছিলাম। ১৯৬২ সালের ইন্দো-চীন যুদ্ধে শহীদ জওয়ানদের উদ্দেশ্যে গাওয়া ‘আয়ে মেরে উয়াতান কে লোগো’ গানটি দীর্ঘকাল ধরে মানুষ শুনেছে। এই গানটি শুনে পণ্ডিতজির (তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরু) চোখে জল এসেছিল। আমি কখনো ভাবিনি গানটি এত জনপ্রিয় হবে। এর কৃতিত্ব গীতিকবি প্রদীপজির। ’

লতা মঙ্গেশকর ও তার বোন আশা ভোঁসলে

খাবারের বিষয়ে কতটা সতর্ক

জননন্দিত ব্যক্তি হিসেবে লতা মঙ্গেশকরের ব্যক্তিগত পছন্দ ও রুচির ব্যাপারে সিনেমা ও সংগীতপ্রেমীরা অবগত। কিন্তু খাবারের বিষয়ে তিনি কতটা সতর্ক? লতা বলেন, ‘একদমই না। আমি খুব আইসক্রিম খেতাম, এমনকি গান রেকর্ডিং করার আগেও। চাটনি, মসলাদার খাবার, কাচা মরিচ সবকিছুই মজা করে খেতাম। কিছুতেই আমার সমস্যা হতো না,’ বলে হাসেন তিনি।


কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ সম্মাননা

ভারতের সর্বোচ্চ বেসামরিক নাগরিক সম্মাননা ‘ভারতরত্ন’ পদকে ভূষিত হয়েছেন লতা মঙ্গেশকর। এই সংগীত সম্রাজ্ঞীকে যখন একের পর এক সবাই সম্মাননা দিতে শুরু করেছিলেন, তখন তিনি বিনয়ের সঙ্গে এসব সম্মাননা গ্রহণ করতে অসম্মতি জানান। লতার বক্তব্য, ‘দয়া করে আমাকে আর সম্মাননার জন্য মনোনীত করবেন না। আমাকে সম্মাননা না দিয়ে বরং আমার সহকর্মী ও কনিষ্ঠদের স্বীকৃতি দিন, তাদের উৎসাহ ও প্রেরণা দিন। ’

লতা মঙ্গেশকরের বাড়িতে ভারতের বর্তমান রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ

বর্তমান সিনেমার গান সম্পর্কে মূল্যায়ন

হিন্দি সিনেমায় লতা মঙ্গেশকর সর্বশেষ গান গেয়েছেন ২০১১ সালে। ৮৭ বছর বয়স থেকেই তিনি আর প্লেব্যাক করতে আগ্রহী নন। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এখনকার গানগুলো এমনই যে আমাকে তা গাওয়ার কথা বললে আমি তা বিনয়ের সঙ্গে প্রত্যাখ্যান করি। গানের লিরিকস সম্পর্কে কী বলা উচিত আমি জানি না। আর নাচের গানগুলো তো  একেবারেই ধড়াম ধড়াম। কিন্তু আমি কাউকে দোষ দিই না। এসব বর্তমান সময়ের চাহিদা। তবে সুরেলা গানের সংখ্যাও রয়েছে অনেক। আর এই গানগুলোই আমার বিশ্বাসকে বাঁচিয়ে রাখে। ’


ভ্রমণপ্রেমী

‘আমি খুবই ভ্রমণপিয়াসী মানুষ। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে আমি এ পর্যন্ত ১০২টিরও বেশি শো করেছি। আমি অনেক দেশ ঘুরেছি। আর ভারতে আমি সবচেয়ে বেশি শো করেছি কলকাতায়। হিন্দির পর বাংলাতেই আমি সর্বাধিক সংখ্যক গান গেয়েছি। ’

অমর শিল্পী কিশোর কুমারের সঙ্গে লতা মঙ্গেশকর

গান করেছেন ৩৬টি ভাষায়

‘আমি সোয়াহিলি ভাষাতেও গান গেয়েছি। এটি একটি আফ্রিকান ভাষা। ফিজিয়ান ভাষাতেও আমি গান করেছি, রাশিয়ান আর ইংরেজিতেও। আর ভারতের বিভিন্ন ভাষা তো আছেই। ’ 


বর্তমান সময়ের কাজ

নব্বই বছর বয়সী এই গুণী শিল্পী এখন আধ্যাত্মিক গানের দিকে ঝুঁকেছেন। তিনি বলেন- ‘গত কয়েক বছরে আমি কিছু ভক্তিমূলক গান গেয়েছি। মূলত মহাদেব, কৃষ্ণ, হনুমান চলিশা এবং গজলও গেয়েছি। অন্য সব কিছুর চেয়ে এখন স্তোত্র গাইতেই আমার বেশি ভাল লাগে। আমার খুব ইচ্ছা রাম রক্ষা স্তোত্র রেকর্ড করার। মহারাষ্ট্রে অগণিত মানুষ এখনও প্রতিদিন রাম রক্ষা স্তোত্র গায়। ’

সাবেক প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ীর সঙ্গে লতা মঙ্গেশকর

তরুণ সংগীতশিল্পীদের প্রতি লতার বাণী

‘তরুণদের এমনটা ভাবা উচিত নয় যে, হাতে মাইক নিয়েই তারা কোন জাদু করে ফেলতে পারবে। ধ্রুপদী সংগীতে প্রশিক্ষণ ছাড়া, তা সে ভারতীয় হোক বা পশ্চিমা, কোন কিছুই করতে পারবে না। গানের তাল ও সুর বুঝতে পারাটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। ’

বাংলাদেশ সময়: ১৯৩০ ঘণ্টা, অক্টোবর ০২, ২০১৯
এমকেআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।