ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বিনোদন

চলচ্চিত্র নির্মাণ সংক্রান্ত নীতিমালা ঘোষণা

বিনোদন ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০২৯ ঘণ্টা, অক্টোবর ২২, ২০১৯
চলচ্চিত্র নির্মাণ সংক্রান্ত নীতিমালা ঘোষণা

বাংলাদেশে চলচ্চিত্র শিল্পের মন্দাদশা কাটাতে চলচ্চিত্র নির্মাণের জন্য ৯ দফা নীতিমালা সম্মিলিতভাবে প্রণয়ন করেছে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রযোজক-পরিবেশক, পরিচালক ও শিল্পী সমিতিসহ মোট ১৮টি সংগঠন।

সোমবার (২১ অক্টোবর) দুপুরে এফডিসির জহির রায়হান প্রজেকশন হলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ৯ দফা নীতিমালা ঘোষণা করা হয়। জানানো হয়, আগামী ১ নভেম্বর থেকে এই নীতিমালা কার্যকর হবে।

 

বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে বহুদিন ধরে সিনেমার মন্দাদশা কাটছে না। লগ্নিকৃত অর্থ ফেরত না পাওয়ায় দিন দিন কমছে সিনেমার প্রযোজক বা বিনিয়োগকারীর সংখ্যা। যারা আগে নিয়মিত সিনেমা নির্মাণের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তারাও লোকসান গুনতে গুনতে ইন্ডাস্ট্রি থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। সিনেমার এমন দুর্দশায় হাল ধরতে এগিয়ে এসেছে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রযোজক পরিবেশক সমিতিসহ সিনেমাসংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলো।  

ইতোপূর্বে চলচ্চিত্র প্রযোজক পরিবেশক সমিতি, চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতি, চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতি, ক্যামেরাম্যান অ্যাসোসিয়েশন ও চলচ্চিত্র এডিটরস গিল্ড’র মোট ১১জন সদস্য নিয়ে গঠন করা হয় ‘চলচ্চিত্র নির্মাণ সংক্রান্ত নীতিমালা প্রণয়ন কমিটি’। এই কমিটির আহ্বায়ক করা হয় প্রযোজক নেতা কামাল কিবরিয়া লিপুকে এবং পরিচালক বদিউল আলম খোকনকে করা হয় মহাসচিব।

ইতোপূর্বে সিনেমা নির্মাণের ব্যয় কমানো প্রসঙ্গে কামাল মোহাম্মদ কিবরিয়া লিপু বাংলানিউজকে বলেন, ‘দীর্ঘদিন প্রযোজক সমিতির নির্বাচিত কমিটি না থাকায় সিনেমার উন্নয়নে পরিচালক সমিতি একা কোনো উদ্যোগ নিতে পারছিল না। যার ফলে নানা অনিয়ম হতে হতে তা চরম পর্যায়ে চলে গেছে। ফলে সিনেমার ব্যয় বেড়েছে এবং লগ্নিকৃত অর্থ ফেরত পাওয়া প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। এভাবে চলতে থাকলে ইন্ডাস্ট্রি টিকিয়ে রাখা অসম্ভব হয়ে যাবে। তাই সিনেমা নির্মাণে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে ও ব্যয় কমাতে আমরা সংশ্লিষ্ট সকল সংগঠনের সহযোগিতায় নতুন নীতিমালা তৈরি করতে যাচ্ছি। আশা করছি এর ফলে কমে যাবে প্রায় ৪০ শতাংশ নির্মাণ ব্যয়। ’

গত ৬ অক্টোবর এই নীতিমালা প্রণয়ন করেন সংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলোর ২০ জন প্রতিনিধি। ২১ অক্টোবর সংবাদ সম্মেলনে এই নীতিমালা ঘোষণা করা হলো।  

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন প্রযোজক-পরিবেশক সমিতির সভাপতি খোরশেদ আলম খসরু, সাধারণ সম্পাদক সামসুল আলম, চিত্রগ্রাহক সংস্থার সভাপতি আব্দুল লতিফ বাচ্চু, চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির সভাপতি মুশফিকুর রহমান গুলজার, মহাসচিব বদিউল আলম খোকন, প্রযোজক পরিবেশক সমিতির ‘চলচ্চিত্র নির্মাণ সংক্রান্ত নীতিমালা প্রণয়ন কমিটি’র আহ্বায়ক কামাল মোহাম্মদ কিবরিয়া লিপু ও সদস্য আবু মুসা দেবু। এ সময় প্রযোজক, পরিচালকসহ অন্য সংশ্লিষ্ট সংগঠনের অনেকেই এ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

প্রযোজক সমিতির সভাপতি খোরশেদ আলম খসরু বলেন, চলচ্চিত্র নির্মাণে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার পাশাপাশি একটি সিনেমা নির্মাণের অতিরিক্ত খরচ কমানোর জন্য এই নীতিমালা গঠন করা হয়েছে। এটি সকল শিল্পী, পরিচালক এমনকি প্রযোজকের জন্যও সঠিকভাবে প্রয়োগ করা হবে।  

চলচ্চিত্র নির্মাণ সংক্রান্ত নীতিমালার ৯ দফার মধ্যে রয়েছে-

* সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত শুটিংয়ের সময় নির্ধারণ করা হয়েছে। কোনো শিল্পী বা কলাকুশলী যদি সময়মতো না আসেন, তার জন্য যদি শুটিং শুরু করা না যায় তাহলে তার দায়-দায়িত্ব বা ক্ষতিপূরণ তাকেই বহন করতে হবে।  

* কলাকুশলী ও শিল্পীদের অবশ্যই প্রযোজকের সাথে চুক্তিপত্র স্বাক্ষর করতে হবে। সেখানে প্রথম কিস্তিতে ২৫ ভাগ এবং পরবর্তীতে কাজের অগ্রগতির ভিত্তিতে ৭৫ ভাগ তিন কিস্তিতে পরিশোধ করার কথা উল্লেখ থাকবে।  

* এক লাখ টাকার উপরে যাদের সম্মানি তারা কোনো প্রকার কনভেন্স (যাতায়াত খরচ) পাবেন না এবং আউটডোরে অবস্থানকালীন শুটিংয়ের সহকারি পরিচালক ও সহকারি চিত্রগ্রাহকরা কনভেন্সের অর্ধেক হাত খরচ বাবদ পাবেন।  

* ড্রেস নির্মাণের জন্য কোনো শিল্পীকে টাকা প্রদান করা হবে না। গল্পের প্রয়োজন অনুযায়ি শিল্পীদের ড্রেস প্রোডাকশন থেকে তৈরী করে দেয়া হবে।  

* প্রধান চরিত্রের নায়ক, নায়িকা ও খলনায়ক একজন করে সহযোগী নিতে পারবেন। প্রোডাকশন থেকে তাদের ব্যয়ভার বহন করা হবে। এর অতিরিক্ত আর কারও ব্যয়ভার বহন করা হবে না।  

* ছবির প্রমোশনের জন্য প্রধান শিল্পীদের সিনেমা মুক্তির আগে ৫ দিন শিডিউল দিতে হবে।  

এছাড়া চলচ্চিত্র নির্মাণ সংক্রান্ত এসব নীতিমালা যথাযথভাবে পালন হচ্ছে কি-না তা মনিটরিং করতে কমিটিও করা হয়েছে। এই কমিটিতে প্রযোজক পরিবেশক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সামসুল আলমকে আহ্বায়ক করে আব্দুল লতিফ বাচ্চু, বদিউল আলম খোকন, জায়েদ খান, আবু মুসা দেবু, সোহানুর রহমান সোহান, মো. ইকবাল, আলিম উল্ল্যাহ খোকন, কবিরুল ইসলাম রানা, আসাদুজ্জামান মজনু ও সুব্রতকে সদস্য করা হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনের প্রশ্নোত্তর পর্বে জানানো হয়, মুখ দেখে নীতিমালা প্রয়োগ করা হবে না। তিনি প্রযোজক হোন বা পরিচালক হোন কিংবা শিল্পী হোন, নীতিমালা না মানলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে, ছাড় দেয়া হবে না।

বাংলাদেশ সময়: ২০৩৪ ঘণ্টা, অক্টোবর ২১, ২০১৯
এমকেআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।