ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বিনোদন

প্লেব্যাক সম্রাট এন্ড্রু কিশোরের আদ্যোপান্ত

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০২০ ঘণ্টা, জুলাই ৬, ২০২০
প্লেব্যাক সম্রাট এন্ড্রু কিশোরের আদ্যোপান্ত

রাজশাহী: উপমহাদেশের কিংবদন্তি সংগীতশিল্পী এন্ড্রু কিশোর আর নেই। সবাইকে শোকের সাগরে ভাসিয়ে রোববার (৬ জুলাই) ৬টা ৫৫ মিনিটে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। 

দেশে ফেরে দেশের এই প্লেব্যাক সম্রাট রাজশাহী মহানগরের মহিষবাথান এলাকায় থাকা তার বড় বোন ডা. শিখা বিশ্বাসের বাসায় ছিলেন। সেখানেই তার চিকিৎসা চলছিল।

ক্যান্সার আক্রান্ত এন্ড্রু কিশোরকে দেখাশোনার দায়িত্বে থাকা শফিকুল আলম বাবু জানান, দেশে ফিরলেও এন্ড্রু কিশোরের শারীরিক অবস্থা ভালো যাচ্ছিল না। রোববার (৫ জুলাই) সকাল থেকে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটে। কারও সঙ্গে কথা বলার মতো অবস্থাতেই ছিলেন না তিনি। বিকেলে এন্ড্রু কিশোরের জন্য পরিবারের পক্ষ থেকে সবার কাছে দোয়া চাওয়া হয়েছিল।

প্রায় ৯ মাস পর সিঙ্গাপুর থেকে গত ১১ জুন দেশে ফিরেন সংগীতশিল্পী এন্ড্রু কিশোর। ২০ জুন তিনি রাজশাহীতে আসেন। তবে গুরুতর অসুস্থ ছিলেন। কারও সঙ্গেই কথা বলতে চাননি তিনি।

এন্ড্রু কিশোরের জন্ম 
বাংলাদেশের কিংবদন্তি এই সংগীতশিল্পীর জন্ম ১৯৫৫ সালের ৪ নভেম্বর রাজশাহেীতে। তিনি বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের বহু চলচ্চিত্রের গানে কণ্ঠ দিয়েছেন। যেজন্য তিনি 'প্লেব্যাক সম্রাট' নামে পরিচিত। তার সবচেয়ে জনপ্রিয় গানের মধ্যে রয়েছে, জীবনের গল্প আছে বাকি অল্প, হায়রে মানুষ রঙের ফানুস, ডাক দিয়াছেন দয়াল আমারে, আমার সারা দেহ খেয়ো গো মাটি, আমার বুকের মধ্যে খানে, আমার বাবার মুখে প্রথম যেদিন শুনেছিলাম গান, ভেঙেছে পিঞ্জর মেলেছে ডানা, সবাই তো ভালোবাসা চায় প্রভৃতি। বাংলা চলচ্চিত্রের গানে অবদানের জন্য তিনি ৮ বার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন গুণী এই শিল্পী।  

সংগীত জীবন
প্লেব্যাক সম্রাট এন্ড্রু কিশোর রাজশাহীর আব্দুল আজিজ বাচ্চুর অধীনে প্রাথমিকভাবে সংগীত পাঠ গ্রহণ শুরু করেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি এই সংগীত প্রতিষ্ঠানের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের পর এন্ড্রু কিশোর নজরুল, রবীন্দ্রনাথ, আধুনিক, লোক ও দেশাত্মবোধক গানে রেডিওতে তালিকাভুক্ত শিল্পী ছিলেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের পর কিশোর নজরুল, রবীন্দ্রনাথ, আধুনিক, লোক ও দেশাত্মবোধক গান শ্রেণীতে রাজশাহী বেতারের সঙ্গে তালিকাভুক্ত ছিলেন।

প্লেব্যাক জীবন
এন্ড্রু কিশোরের চলচ্চিত্রে প্লেব্যাক যাত্রা শুরু হয় ১৯৭৭ সালে আলম খান সুরারোপিত মেইল ট্রেন চলচ্চিত্রের ‘অচিনপুরের রাজকুমারী নেই যে তার কেউ’ গানের মধ্য দিয়ে। তার রেকর্ডকৃত দ্বিতীয় গান বাদল রহমান পরিচালিত এমিলের গোয়েন্দা বাহিনী চলচ্চিত্রের ‘ধুম ধাড়াক্কা। তবে এ জে মিন্টু পরিচালিত ১৯৭৯ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত প্রতীজ্ঞা চলচ্চিত্রের ‘এক চোর যায় চলে’ গানে প্রথম দর্শক তার গান শুনে এবং গানটি জনপ্রিয়তা লাভ করে। তিনি অন্যান্য প্লেব্যাক গান রেকর্ড করেন যেমন ‘ডাক দিয়াছেন দয়াল আমারে', 'ভালবেসে গেলাম শুধু' এর মত জনপ্রিয় সব গান।

ব্যক্তিগত জীবন
এন্ড্রু কিশোরের দুটি সন্তান রয়েছে। প্রথম সন্তানের নাম সংজ্ঞা আর দ্বিতীয় জনের নাম সপ্তক। কিশোর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ম্যানেজমেন্ট বিভাগে পড়াশোনা করেছেন।

প্রতিষ্ঠান
এন্ড্রু কিশোর সংগীতশিল্পী ছাড়াও একজন ব্যবসায়ী। ১৯৮৭ সালে তিনি বরাবর আহমাদ ইউসুফ, আনোয়ার হোসেন বুলু, ডলি জহুর, দিদারুল আলম বাদল, শামসুল ইসলাম নান্টু সাথে টিভি নাটক, বাণিজ্যিক এবং অন্যান্য প্রযোজনার জন্য একটি বিজ্ঞাপন প্রতিষ্ঠান 'প্রবাহ' শিরোনামে উদ্বোধন করেন।

পুরস্কার ও মনোনয়ন
জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ১৯৮২ শ্রেষ্ঠ পুরুষ কণ্ঠশিল্পী বড় ভালো লোক ছিল বিজয়ী
১৯৮৭ সারেন্ডার- বিজয়ী।
১৯৮৯ ক্ষতিপূরণ- বিজয়ী।
১৯৯১ পদ্মা মেঘনা যমুনা- বিজয়ী।
১৯৯৬ কবুল-বিজয়ী
২০০০ আজ গায়ে হলুদ- বিজয়ী
২০০৭ সাজঘর- বিজয়ী
২০০৮ কি যাদু করিলা- বিজয়ী

বাচসাস পুরস্কার ১৯৮৪ সেরা পুরুষ কণ্ঠশিল্পী প্রিন্সেস টিনা খান বিজয়ী
১৯৮৭ স্বামী স্ত্রী- বিজয়ী
২০০১ প্রেমের তাজমহল- বিজয়ী
২০০৮ মনে প্রাণে আছ তুমি- বিজয়ী
২০১০ গোলাপী এখন বিলাতে- বিজয়ী

মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার ১৯৯৮ শ্রেষ্ঠ গায়ক বিজয়ী
১৯৯৯ ‘পদ্ম পাতার পানি’ বিজয়ী

বাংলাদেশ সময়: ২০২১ ঘণ্টা, জুলাই ০৬, ২০২০
এসএস/ওএফবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।