ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বিনোদন

জহির রায়হান: একজন প্রগতিশীল চলচ্চিত্র আন্দোলনের পুরোধা

নিউজরুম এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৫৫ ঘণ্টা, আগস্ট ১৯, ২০২০
জহির রায়হান: একজন প্রগতিশীল চলচ্চিত্র আন্দোলনের পুরোধা জহির রায়হান

জহির রায়হান। একজন প্রখ্যাত বাংলাদেশী চলচ্চিত্র পরিচালক, ঔপন্যাসিক, গল্পকার এবং প্রগতিশীল চলচ্চিত্র আন্দোলনের পুরোধা।

 

দেশীয় চলচ্চিত্র জগতে এবং জীবনস্পর্শী প্রতিবাদী সাহিত্য ধারায় জহির রায়হান এক বিশিষ্ট শিল্পী। চলচ্চিত্র প্রতিভার পরবর্তী আশ্রয়স্থল হলেও তার আবির্ভাব ঘটেছিল কথাসাহিত্যে। সাংবাদিক, কথাসাহিত্যিক, রাজনৈতিক কর্মী, চিত্রপরিচালক- নানা পরিচয়ে তার কর্মক্ষেত্রের পরিধি স্পষ্ট।  

তিনি ছিলেন একাধারে কাহিনীকার, চিত্রনাট্য রচয়িতা, পরিচালক, চিত্রগ্রাহক এবং প্রযোজক। চলচ্চিত্রের আঙ্গিক ও গঠনশৈলীর নানান দিক নিয়ে তিনি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে এই শিল্পকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন।  
এদেশের সাধারণ মানুষের কাছে তাই জহির রায়হান কথাসাহিত্যিক অপেক্ষা চলচ্চিত্রকার হিসেবেই বেশি পরিচিত।

জহির রায়হান১৯৬১ সালে তার প্রথম পরিচালিত সিনেমা ‘কখনো আসেনি’ মুক্তি পায়। এরপর তিনি পরিচালনা করলেন ‘সোনার কাজল’ (১৯৬২), ‘কাঁচের দেয়াল’ (১৯৬৩), ‘সঙ্গম’ (উর্দু : ১৯৬৪), ‘বাহানা’ (১৯৬৫)’, ‘বেহুলা’ (১৯৬৬), ‘আনোয়ারা’ (১৯৬৭)’ এবং ‘জীবন থেকে নেয়া’ (১৯৭০)। তার ‘আর কতদিন’ উপন্যাসের ইংরেজি ভাষান্তরিত সিনেমা ‘লেট দেয়ার বি লাইট’ সমাপ্ত হবার আগেই বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হয়। তিনি চলে যান ওপার বাংলায়। সেখানে বাংলাদেশী সিনেমার এই প্রাণপুরুষ পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর অত্যাচারকে কেন্দ্র করে তৈরী করেন প্রামাণ্যচিত্র ‘স্টপ জেনোসাইড’ ও ‘বার্থ অব আ নেশন’। সেখানে তার তত্ত্বাবধানে বাবুল চৌধুরীর ‘ইনোসেন্ট মিলিয়ন’ এবং আলমগীর কবীরের ‘লিবারেশন ফাইটারস’ নামক প্রামাণ্যচিত্র দু’টি নির্মিত হয়।

চিত্র পরিচালনার পাশাপাশি জহির রায়হান অনেকগুলো সিনেমা প্রযোজনা করেন। এর মধ্যে- ‘জুলেখা (১৯৬৭)’, ‘দুই ভাই’ (১৯৬৮)’, ‘সংসার’ (১৯৬৮), ‘সুয়োরাণী-দুয়োরাণী’ (১৯৬৮), ‘কুচবরণ কন্যা’ (১৯৬৮), ‘মনের মত বউ’ (১৯৬৯), ‘শেষ পর্যন-’ (১৯৬৯) এবং ‘প্রতিশোধ’ (১৯৭২)।

এ দেশের সমকালীন রাজনৈতিক ঘটনাপ্রবাহের পটভূমিতে নির্মিত ‘জীবন থেকে নেয়া’ সিনেমাটি সংগ্রামী মানুষের আলেখ্য হিসেবে চিহ্নিত হতে পারে। যে সময়ে সিনেমাটির জন্ম, সে সময়ের রাজনৈতিক পরিস্থিতির কথা স্মরণ করলে এই সিনেমাকে একটি দুঃসাহসিক প্রচেষ্টা বলে মানতে হয়। এটি নির্মাণ করতে গিয়ে পরিচালক জহির রায়হান অনেক সরকারি বাধার সম্মুখীন হন।  

সিনেমা নির্মাণের নেপথ্যের কাহিনী: ’৭০ সালের ১৬ জানুয়ারি জহির রায়হান ‘তিনজন মেয়ে ও এক পেয়ালা বিষ’ নামে একটি সিনেমা করার জন্য এফডিসিতে আবেদন করেন। ২০ জানুয়ারি এফডিসি কর্তৃপক্ষ সিনেমাটির অনুমোদন দেয়। ২৮ জানুয়ারি জহির রায়হান সিনেমার নাম পরিবর্তন করেন- ‘জীবন থেকে নেয়া’। আর এই নামটি শুনলেই যে কারো চোখের সামনে ভেসে উঠেন একজন জহির রায়হান।

১৯৩৫ সালের ১৯ আগস্ট বর্তমান ফেনী জেলার অন্তর্গত মজুপুর গ্রামে জন্ম জহির রায়হানের। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭১ সালের ১৭ ডিসেম্বর নিখোঁজ হন বাংলা চলচ্চিত্রের এই পুরোধা ব্যক্তিত্ব। ধারণা করা হয় সেদিন বিহারী ও ছদ্মবেশী পাকিস্তানি সৈন্যদের হাতে তিনি নিহত হন।

বাংলাদেশ সময়: ১১৫৫ ঘণ্টা, আগস্ট ১৯, ২০২০
ওএফবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।