ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বিনোদন

বাধ্য হয়ে ইস্টবেঙ্গলের জার্সি পরে শুটিং করেছিলেন উত্তম কুমার

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৪৩ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৩, ২০২০
বাধ্য হয়ে ইস্টবেঙ্গলের জার্সি পরে শুটিং করেছিলেন উত্তম কুমার ইস্টবেঙ্গলের জার্সি গায়ে উত্তম কুমার

কলকাতা: মহানায়ক উত্তম কুমারের ৯৪তম জন্মদিন বৃহস্পতিবার (৩ সেপ্টেম্বর)। উত্তম-সুচিত্রা জুটি, যার আজও কোনো বিকল্প হয়ে ওঠেনি।

কিন্তু অনেকেরই অজানা নন্দিত এই জুটি ছিল অতিমাত্রায় ফুটবল প্রেমী।

উত্তম কুমার, যার প্রকৃত নাম অরুণ কুমার চট্টোপাধ্যায়। যিনি ছিলেন একজন ভারতীয় বাঙালি। এবং মনে প্রাণে ছিলেন একজন মোহন বাগানপ্রেমী। অপরদিকে পাবনার জন্মগ্রহণ করা মহানায়িকা সুচিত্রা সেন ছিলেন একজন আদ্যপ্রান্ত ইস্ট বেঙ্গল সমর্থক। ফলে তাঁদের যেদিন যেদিন শুটিং থাকতো, সেদিন কাজের ফাঁকে মোহনবাগান ও ইস্টবেঙ্গল নিয়ে দুজনের মধ্যে চলতো খুনসুটি।

১৯৬০ সাল, 'সপ্তপদী'র শুটিং। শুটিং চলছে ভারতীয় চিকিৎসক দলের সঙ্গে ব্রিটিশ চিকিৎসকদের ফুটবল ম্যাচের দৃশ্যের। মহানায়িকা ব্রিটিশ সমর্থক আর ভারতীয়দের হয়ে মাঠে উত্তম। আর এই শুট চলছে সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রিত মোহনবাগান - ইস্টবেঙ্গল মাঠে। সে সময় গায়ে গায়ে ছিল এই দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ক্লাব। একই মাঠে দুই প্রধানের অনুশীলন চলত।

ফেরা যাক সপ্তপদীর শুটিংয়ে। ১৯৬০ সালে মৌসুম শুরুর মুখে মোহন বাগান ক্লাব। অফিসিয়ালরা দল তৈরির কাজে গিয়েছেন ইস্ট আফ্রিকা সফরে। ফলে ফুটবলের প্রাকটিস নেই, ক্লাবও বন্ধ। তাই উত্তমকুমার দ্বারস্থ হলেন ইস্ট বেঙ্গল ক্লাবের তৎকালীন ফুটবল সচিব মন্টু বসুর কাছে। মহানায়কের অনুরোধে মন্টু বসু খুলে দিয়েছিলেন ইস্ট বেঙ্গল ক্লাবের সদর দরজা।
 
এমন কী মন্টু বসুর উদ্যোগেই রেঞ্জার্স টিমের অ্যাংলো ইন্ডিয়ান ফুটবলারদের নিয়ে আসা হল ব্রিটিশ চিকিৎসক দলের হয়ে অভিনয়ের জন্য। শুটিংয়ের দিন ডাকা হলো ইস্টবেঙ্গল  খেলোয়াড় তুলসীদাস বলরামকে। বলে রাখা প্রয়োজন, 'সপ্তপদী' সিনেমায় মহানায়কের বল কন্ট্রোলের দৃশ্যে ছিলেন তুলসীদাস বলরাম।

শুটিংয়ের জন্য আনা সাদা জার্সি ইস্টবেঙ্গলের তৎকালীন কর্তা সুধাময় দাশগুপ্ত তুলে দিলেন রেঞ্জার্সের খেলোয়াড়দের হাতে। আর মহানায়কের দলকে দেওয়া হলো ইস্ট বেঙ্গলের ঐতিহ্যশালী লাল-হলুদ জার্সি।

জার্সি দেখেই বেকে বসলেন উত্তম। হাজারো হোক শত্রুর জার্সি। কীভাবে গায়ে জড়াবেন? পড়তে চাইলেন না উত্তম। বিকল্প জার্সি নিয়ে আসার অনুরোধ করলেন। শেষে পরিচালকের অনুরোধে এসপ্ল্যান্ড এলাকায় ময়দান মার্কেটে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হলো সুধাময় দাশগুপ্তকে।

পথে যেতে যেতে সুধাময় দাশগুপ্ত মতলব আঁটলেন। সাইকেল নিয়ে ময়দান মার্কেটে না গিয়ে বড়বাজার সংলগ্ন ডালহৌসি এলাকা ঘুরে খালি হাতে ফিরলেন। জানালেন, ময়দান মার্কেটের সব দোকান বন্ধ। অগত্যা ইস্ট বেঙ্গল জার্সিই পরে শুটিং করতে হবে মহানায়কে।

যা শুনে হতাশ হলেন উত্তম। মনেপ্রাণে মোহনবাগান প্রেমী কিছুতেই ইস্টবেঙ্গলের জার্সি গায়ে তুলতে রাজি নন। প্রযোজক, পরিচালকে উত্তম বলে দিলেন, শুটিং প্যাকআপ করতে। কোনো মতেই শত্রু জার্সি চড়িয়ে শুটিং করবেন না তিনি।

ওদিকে মহানায়িকা মেক-আপ করে শুট দেওয়ার জন্য রেডি। কিন্তু উত্তমের টালবাহানায়  ভীষণ চটে গেলেন সুচিত্রা সেন। পরিচালক ডেকে জানতে চাইলেন, উত্তমকে ঘিরে ওখানে কিসের জটলা?

পুরো কথা শুনে মহানায়িকা পরিচালকে বলে দিলেন, ‘ওনাকে (উত্তম) বলে দিন, এই জার্সি পড়েই শুটিং করতে বলা হয়েছে, ইস্টবেঙ্গল সমর্থক হতে বলা হয়নি। কিসের এত টালবাহানা। শটের জন্য ২০ মিনিট অপেক্ষা করছি। নইলে এ ছবির শুটিংই আর করবো না। ’

মহানায়িকার এক হুমকিতেই কাজ হয়েছিল। হাজার অনিচ্ছা সত্ত্বেও ইস্টবেঙ্গলের ঐতিহ্যশালী লাল-হলুদ জার্সি গায়ে চাপিয়েই অভিনয় করেছিলেন মহানায়ক উত্তম কুমার। উত্তম সমর্থকরা আজও বলেন মহানায়িকা সবই জানতেন। উত্তমকে ইস্টবেঙ্গলের জার্সি পরিয়ে শুটিং করাবে বলেই তার এই পরিকল্পনা। অবশ্য ইতিহাসে এর কোনো সত্যতা নেই।

তবে একথা ঠিক ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগান নিয়ে দুই তারকাদের মধ্যে খুনসুটি এক এক সময় ঝগড়ায় পরিণত হতো।  যার আঁচ পড়তো শুটিংএও।  এমনও দিন গেছে উত্তম-সুচিত্রার ফুটবল খেলার দ্বন্দ্বে পরিচালকসহ গোটা ইউনিট মাথায় হাত দিয়ে বসে আছেন।

অথচ দুই অভিনেতা-অভিনেত্রী পর্দায় কতনা সাবলীল। যে জুটির আজও বিকল্প হয় না।  এতটাই ফুটবলপ্রেমী ছিলেন যা আজও অনেকের অজানা।  

***তথ্য সূত্র ইস্টবেঙ্গল ক্লাব।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৪২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৩, ২০২০
ভিএস/জেআইএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।