ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বিনোদন

চঞ্চল-শাওনের কণ্ঠে ‘যুবতী রাধে’ নিয়ে বিভ্রান্তি, কারণ জানালো সরলপুর

নিউজরুম এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৩২ ঘণ্টা, অক্টোবর ২২, ২০২০
চঞ্চল-শাওনের কণ্ঠে ‘যুবতী রাধে’ নিয়ে বিভ্রান্তি, কারণ জানালো সরলপুর চঞ্চল-শাওন

সম্প্রতি ‘আইপিডিসি’ নামের ইউটিউব চ্যানেল নতুন সংগীতায়োজনে চঞ্চল চৌধুরী ও মেহের আফরোজ শাওনের কণ্ঠে প্রকাশ পায় ‘যুবতী রাধে’ শীর্ষক গানটি। প্রকাশের পরই গানটি চারদিকে ছড়িয়ে পড়ছিল দ্রুতই।

এর মধ্যে দেখা দিলো বিপত্তি।

আপত্তি সরলপুর ব্যান্ডের। তাদের অভিযোগ-আপত্তির কারণেই ইউটিউব গান-ভিডিওটি কপিরাইট ক্লেইমের আওতায় ‘টেকডাউন’ করে।  

বুধবার (২১ অক্টোবর) সন্ধ্যায় সরলপুর ব্যান্ড গণমাধ্যমের কাছে একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি ও কপিরাইটের কাগজপত্র পাঠিয়েছে। যেখানে উল্লেখ করা হয়েছে, গানটির মালিক সরলপুর ব্যান্ড।

বিজ্ঞপ্তিতে তাদের দাবি, আমরা সরলপুর ব্যান্ড ২০১০ সাল থেকে বাংলাদেশে সংগীত চর্চা করে আসছি।  এ পর্যন্ত আমাদের ৫০টির মতো মৌলিক গান তৈরির পাশাপাশি বিভিন্ন কনসার্ট, টেলিভিশন লাইভ শোতে আমাদের আনরিলিজ ট্র্যাক হিসেবে ১০ থেকে ১২টি গান ইতোমধ্যেই শ্রোতামহল দারুণ জনপ্রিয় হয়েছে।

 

এর মধ্যে আমাদের লোকজ ধারার মৌলিক গান ‘যুবতি রাধে’ মানুষের মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়েছে। শুধু তাই নয়, গানটি নিয়ে মানুষের মধ্যে নানা ধরণের বিভ্রান্তিও ছড়িয়ে পড়েছে। মানে, এটি ময়মনসিংহ গীতিকা থেকে সংগৃহীত একটি গান। মূলত, গানটি আমাদের ব্যান্ডের প্রতিষ্ঠাতা ভোকাল ও গিটারিস্ট তারিকুল ইসলাম তপনের লেখা ও সুর করা এ গানটি সরলপুর ব্যান্ড শুরু থেকেই পরিবেশন করে আসছে। কিন্তু বিভিন্ন সময় আমাদের গানটি অনেকেই নিজের বলে প্রকাশের চেষ্টা করে এসেছেন। যার ফলে ২০১৮ সালে আমরা গানটির কপিরাইট সংগ্রহ করি।  

তারা জানান, গত ২০ অক্টোবর ‘আইপিডিসি আমাদের গান’ নামে একটি ইউটিউব চ্যানেল থেকে জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী পার্থ বড়ুয়ার সংগীতায়োজনে জনপ্রিয় দুই তারকা মেহের আফরোজ শাওন ও চঞ্চল চৌধুরীর কণ্ঠে গানটি প্রকাশ করা হয়। যাতে আমাদের গানটিকে লোকজ গান হিসেবে সংগৃহীত বলে উল্লেখ করা হয়। আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি।  

কপিরাইট কর্তৃপক্ষের সুষ্ঠ পদক্ষেপ প্রত্যাশা করে তারা বলেন, এরই মধ্যে আমাদের আবেদনের প্রেক্ষিতে গানটি ইউটিউব কর্তৃপক্ষ তাদের চ্যানেল থেকে সরিয়ে নিয়েছে। কিন্তু আইপিডিসি ফাইন্যান্স লিমিটেড কর্তৃপক্ষ গানটি তাদের ফেসবুক পেজসহ বিভিন্ন পেজ থেকে প্রকাশ করে আমাদের মেধাস্বত্তকে আরও বিপন্ন করে তুলছে। আমরা কপিরাইট কর্তৃপক্ষর কাছে সুষ্ঠ পদক্ষেপ প্রত্যাশা করছি। গণমাধ্যমের কাছে এ বিভ্রান্তি দূর করতে যথাযথ সহযোগিতা প্রত্যাশা করছি।  

সে প্রেক্ষিতে গণমাধ্যমের কাছে গানটি সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরার  সবাইকে অবগত করেন এভাবে, ২০০৬-০৭ সালের দিকে আমরা ‘যুবতি রাধে’ গানটি লেখা শুরু করি।  তখনকার সময়ে আমরা কয়েকজন এক দিন রাতে সারারাতব্যাপী পালাগান দেখতে যাই। যেখানে রাধাকৃষ্ণ সম্পর্কিত বিভিন্ন পালাগান হয়েছিল, যা আমাদের খুবই ভালো লাগে এবং মন কাড়ে। তারপর থেকে রাধাকৃষ্ণ’র গানগুলোর উপর নির্ভর করে আমরা এই গানটি লেখা শুরু করি। রাধা-কৃষ্ণের গল্প থেকে আমরা বিভিন্ন তথ্য-ভাবধারা, শব্দচয়ন সংগ্রহ করে থাকি। কিন্তু হুবহু কোনো কথা আমরা সংগ্রহ করিনি। আমাদের এ গানের সঙ্গে কোথাও কোনো গানের হুবহু মিল নেই। গানের গীতিকার এবং সুরকার তারিকুল ইসলাম তপন। গানটি আমরা সম্পূর্ণরূপে কীর্তন ও লীলা কীর্তনের উপর নির্ভর করে সুর করেছি। কীর্তন ও লীলা কীর্তনের ভাবধারা গানটিতে আনার চেষ্টা করেছি।

২০১০ সালে আমরা ‘যুবতী রাধে’ ময়মনসিংহের একটি কনসার্টে পরিবেশন করি। ২০১২ সালে চ্যানেল নাইনে আমরা এ গানটিসহ আরও সাতটি গান আনরিলিজ ট্র্যাক হিসেবে প্রকাশ করি। পরবর্তীতে বিভিন্ন চ্যানেলেই আমরা একইভাবে আমাদের আনরিলিজ ট্র্যাকগুলো গেয়েছি।     

২০১০ সালে সরলপুর ব্যান্ডের প্রথম আত্মপ্রকাশ ঘটে। ২০১৮ সালে আমরা সরলপুর ব্যান্ডের রেজিস্ট্রেশান করি। তার সঙ্গে সঙ্গে আমরা ১২টি মৌলিক গানের সনদ নিয়ে থাকি যার মধ্যে একটি ‘যুবতি রাধে’। ২০১৮ সালের জুন মাসে এর কপিরাইট হয়। সরলপুর ব্যান্ডের এ পর্যন্ত প্রায় ৫০টি মৌলিক গান রয়েছে। যার মধ্যে ১০ থেকে ১২টি গান আমরা বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে ও কনসার্টে আনরিলিজ ট্র্যাক হিসেবে প্রকাশ করেছি। এ পর্যন্ত সরলপুর ব্যান্ডের কোনো অ্যালবাম আমরা প্রকাশ করিনি।  

গানটি নিয়ে প্রথম বিভ্রান্তি তৈরি করে সুমী মির্জা নামের এক শিল্পী। তিনি গানটির কথা পরিবর্তন করে লেজার ভিশনের ব্যানারে তাদের ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশ করেন।  ইউটিউবের কমেন্টে সে আমাদের গানটিকে পালাগান, মহুয়াগান, গোয়ালিনীগান’সহ নানা নামে প্রচার করে। ঘটনার প্রেক্ষিতে আমরা তার সঙ্গে যোগাযোগ করলে সে আমাদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করে। যার প্রেক্ষিতে আমরা আইনের আশ্রয় নিতে বাধ্য হই।  

পরবর্তীতে কপিরাইট অফিস থেকে আমাদের দু’পক্ষকে ডাকে, সুমী মির্জা গানটিকে ময়মনসিংহ গীতিকার মহুয়াগান কিংবা গোয়ালিনিগান বলে দাবি করলেও কোনো প্রমাণ দেখাতে না পারায়  দু’টি শুনানির মাধ্যমে গানটির সত্যতা প্রকাশ হয় এবং গানটির কপিরাইট আমরা পাই।  

পরবর্তীতে সে আমাদের ‘যুবতি রাধে’ গানটির সুর ও কথার অংশ হুবহু নকল করে ‘বিনোদিনী রাই’ নামে আরেকটি গান প্রকাশ করে এবং সঙ্গে সঙ্গে গানটির কপিরাইট নিয়ে নেয়। এই গানের ব্যাপারে তাই বিভ্রান্তি তৈরি হতে পারে যে, ‘বিনোদিনী রাই’ এবং ‘যুবতী রাধে’ গানটি এক। আসলে বিষয়টি তা নয়। সে প্রেক্ষিতে সুমী মির্জার সঙ্গে আমাদের যে দ্বন্দ্ব, তা এখনও কোর্টে চলমান। করোনা পরিস্থিতির পাশাপাশি আমরাও দেশের বাইরে অবস্থান করায় মামলার কার্যক্রম থমকে আছে।  

এই গান নিয়ে তাদের আগামী আইনি পদক্ষেপ সম্পর্কে জানান, আমরা দেশে ফিরলেই পুনরায় কোর্টে মামলাটি নিয়ে অগ্রসর হবো এবং কলার টিউনসহ বিভিন্ন মাধ্যমে গানটি প্রকাশ করায় যে আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন আমরা হয়েছি, তার জন্য কোর্টে আবেদন করবো।

গণমাধ্যমের কাছে এ বিভ্রান্তি দূর করতে যথাযথ সহযোগিতা প্রত্যাশা করছি। এর পাশাপাশি যারা গানটি প্রকাশ করছেন, তাদের গানটি যত দ্রুতসম্ভব সরিয়ে নেওয়ার পাশাপাশি তাদের পক্ষ থেকে ক্ষমামূলক বিবৃতি প্রত্যাশা করছি। অন্যথায়, আমরা আইনের আশ্রয় নিতে বাধ্য হবো।

সরলপুর ব্যান্ডের বর্তমান লাইন আপ- ভোকাল প্রধান: মারজিয়া আমিন তুরিন এবং তারিকুল ইসলাম তপন, লিড গিটারিস্ট: তারিকুল ইসলাম তপন, রিদম গিটারিস্ট: সুব্রত উল্লাস, বেজ গিটার: তপু, ড্রামস: সজীব, কিবোর্ড: প্রীতম, দোতারা ও ব্যাঞ্জো: শিশির, খমক: তুরিন।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৩২ ঘণ্টা, অক্টোবর ২২, ২০২০
ওএফবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।