ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বিনোদন

আব্দুল কাদেরের প্রতি নাট্যকর্মীদের শ্রদ্ধা

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭২৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৬, ২০২০
আব্দুল কাদেরের প্রতি নাট্যকর্মীদের শ্রদ্ধা আব্দুল কাদেরকে শ্রদ্ধা জানানো হচ্ছে। ছবি: ডিএইচ বাদল

ঢাকা: বাংলাদেশের মঞ্চ নাটকের উন্মেষকালের অন্যতম সারথি আব্দুল কাদেরের প্রতি শেষ শ্রদ্ধা নিবেদন করলেন নাট্যকর্মীরা। তার সঙ্গে স্মৃতিময় সময়কেও স্মরণ করেছেন তারা।

শনিবার (২৬ ডিসেম্বর) বিকেলে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালা প্রাঙ্গণে আয়োজন করা হয় নাট্যাভিনেতা আব্দুল কাদের শ্রদ্ধানুষ্ঠান।

 
বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের ব্যবস্থাপনায় এ শ্রদ্ধানুষ্ঠান হয়।
 
আব্দুল কাদেরের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন নাট্যজন রামেন্দু মজুমদার, ফেরদৌসী মজমুদার, নাসির উদ্দীন ইউসুফ, শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক ও গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের চেয়ারম্যান লিয়াকত আলী লাকী, খায়রুল আনাম সবুজসহ নাট্যাঙ্গণের বিশিষ্টজনরা।

প্রাতিষ্ঠানিক ও সাংগঠনিকভাবে শ্রদ্ধা নিবেদন করে শিল্পকলা একাডেমি, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশন, পথনাটক পরিষদ, গণসংগীত সমন্বয় পরিষদ, সুবচন নাট্য সংসদ, সময় নাট্যদল, থিয়েটার ও ঢাকা থিয়েটার।

আব্দুল কাদেরকে মূল্যায়ন করতে গিয়ে রামেন্দু মজুমদার বলেন, থিয়েটারের অভিনেতা এবং সংগঠক হিসেবে আব্দুল কাদের ছিলেন অপিরহার্য্য। দীর্ঘদিন তিনি থিয়েটারের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। আমি তার উপর নির্ভর করতাম। তার মতো ধীমান অভিনেতা আমি খুব কম দেখেছি। তিনি নিজে আনন্দে থাকতেন, অন্যকে আনন্দে রাখতেন।

 
একসঙ্গে বহু নাটকে অভিনয় করেছেন জানিয়ে ফেরদৌসী মজুমদার বলেন, খুবই ভালো ও বিরল অভিনেতা ছিলেন। পুরোটা নাটক তার মুখস্থ থাকতো। নাটকের সংলাপের বাইরে বাস্তবতার সঙ্গে মিলিয়ে সংলাপ বলতেন। অসম্ভব রসবোধ সম্পন্ন মানুষ ছিলেন। তার এসব সুখস্মৃতি নিয়েই থাকতে চাই।

নাসির উদ্দীন ইউসুফ বলেন, কাদের আমার দীর্ঘদিনের বন্ধু। অত্যন্ত সুশৃঙ্খল ও সুঅভিনেতা ছিলেন। সাবলীল অভিনয়ের মধ্য দিয়ে তিনি নিজেকে সুঅভিনেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। নাটক অন্তপ্রাণ অজাতশত্রু একজন মানুষ ছিলেন তিনি।

ব্যক্তিগত স্মৃতিচারণ করে ত্রপা মজুমদার বলেন, একবার বিটিভিতে আব্দুল্লাহ আল মামুন কাকার একটি নাটকে আমি, মা (ফেরদৌসী মজমুদার) ও কাদের কাকা অভিনয় করছিলাম। সেখানে একটি দৃশ্য ছিল- আমার মরদেহ খাটিয়া পড়ে আছে। কাদের কাকা বলে উঠলেন, আমি এ দৃশ্যে অভিনয় করতে পারবো না। ত্রপা আমার সামনে খাটিয়া শুয়ে আছে এ দৃশ্য আমার পক্ষে করা সম্ভব না। মামুন কাকা ধমক দিয়ে বললেন, আরে এটা তো অভিনয়। মাও বলেন, আমি তো অভিনয় করছি। সেই কাদের কাকা আমার সামনে খাটিয়ায় শুয়ে আছেন, এ বেদনা ভাষায় প্রকাশ করার মতো না।

শ্রদ্ধানুষ্ঠানে এসে আব্দুল কাদেরের নাতনি সিমরিন লুবাবা বলে, দাদু যখনই আসতেন, আমরা খুব মজা করতাম। বাইরে গেলে দাদু আমাকে সবকিছু কিনে দিতেন। আমার দাদু আমাকে সিঙ্গার হতে বলতেন। আরও বলেন, ভালো মানুষ হবা। ভালো কাজ করবা। আপনারা দোয়া করবেন, দাদার যাতে বেহেশত নসিব হয়।  

এক মিনিট নীরবতা পালনের মধ্য দিয়ে শেষ আব্দুল কাদেরের শ্রদ্ধানুষ্ঠান। এরপর শিল্পকলা একাডেমি থেকে আব্দুল কাদেরের মরদেহ নিয়ে যাওয়া হচ্ছে বনানী কবরস্থানে। সেখানে মায়ের কবরে তিনি চিরনিদ্রায় শায়িত হবেন।

শনিবার (২৬ ডিসেম্বর) সকালে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন গুণী অভিনেতা আব্দুল কাদের। এরপর তার প্রথম জানাজা রাজধানীর মিরপুর ডিওএইচএস কেন্দ্রীয় মসজিদে অনুষ্ঠিত হয়।

বাংলাদেশ সময়: ১৭২৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৬, ২০২০
ডিএন/জেআইএম

 

আরও পড়ুন:

>> একজন আব্দুল কাদের এবং তার কমর্ময় জীবনের যত দ্যুতি

>> শিল্পকলায় শ্রদ্ধা জানানো হবে কাদেরকে

>> দাদার মরদেহের অপেক্ষায় ছোট্ট লুবাবা

>> বনানী কবরস্থানে চিরশায়িত হবেন ‘বদি’

>> দাদা বলেছেন সিঙ্গার হবা: কাদেরের নাতনি লুবাবা

>>‘কাদের সাহেব আমাকে সম্মান দিয়ে কথা বলতেন’

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।