খুলনা: কুয়াশার সঙ্গে পড়ছে তীব্র শীত, সূর্য কেবল পূর্ব আকাশে উঁকি দিতে শুরু করেছে। ভোরের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গে রূপসা নদীর পশ্চিম তীরে রূপসা কেসিসি পাইকারি মৎস্য আড়তটি জমজমাট হয়ে উঠেছে।
এটি খুলনা বিভাগের সবচেয়ে বড় পাইকারি মাছের বাজার। শীত উপেক্ষা করে মানুষের ঢল নেমেছে বাজারে। কেননা আড়তের মেসার্স মদিনা ফিস ট্রেডার্সে গভীর সমুদ্রে জেলের জালে ধরা পরা ২৩ কেজি ৬৮০ গ্রাম ওজনের একটি ভোল মাছ এসেছে। মাছটির দাম উঠেছে ৮ লাখ টাকা।
মাছটি নিয়ে সমগ্র বাজার জুড়ে হৈ চৈ পড়ে গেছে। বড় মুখের ভোল মাছটি দেখতে ভিড় করছেন অনেকে। কেউ কেউ মাছটির সঙ্গে সেলফি তুলছেন।
বৃহস্পতিবার (১২ জানুয়ারি) ভোরে আড়তে ভোল মাছটি নিয়ে আসেন সাতক্ষীরার আশাশুনির কুড়িকাহুনিয়া গ্রামের জেলে মাসুম বিল্লাহ। সুন্দরবনের দুবলার চর এলাকা থেকে ভোল মাছটি ধরে নিয়ে এসেছেন তিনি।
মাসুম বাংলানিউজকে বলেন, ১০ জানুয়ারি ভোর ৬টার দিকে সুন্দরবনের দুবলার চরের বঙ্গোপসাগর থেকে মাছটি ভেহেন্দিজালে ধরা পড়ে। মাছটির প্রথম দাম উঠেছিল ৪০ হাজার টাকা কেজি। সে হিসেবে তখন দাম হয় ৮ লাখ ৪০ হাজার টাকা। পরে সিন্ডিকেট করে ওরা দাম কমিয়েছে বলে মাছ বিক্রি না করে বাজারে নিয়ে এসেছি। প্রথম ভোল মাছ ধরতে পেরে খুব খুশি হলেও সিন্ডিকেটের কারণে দাম নিয়ে সংশয়ে আছি।
জেলে মাসুমের ছোট ভাই মারুফ বিল্লাহ বাংলানিউজকে বলেন, মাছটা যখন সমুদ্র থেকে চরে আসে তখন ৪০ হাজার টাকা কেজি দরে ২৩ কেজি ৬৮০ গ্রাম মাছের দাম হয় ৮ লাখ ৪০ হাজার টাকা। পরে মাছ রূপসার আড়তে নিয়ে আসা হয়েছে ভালো দামের আশায়। এখানে দাম ভালো না পেলে চট্টগ্রামে বিক্রি করবো।
তিনি আরও বলেন, ভোল মাছ খুবই কম পাওয়া যায়। বছরে দুই-একটি মাছ পাওয়া যায়। মূলত মাছের প্যাটা ও বালিশের কারণে দাম বেশি। আমরা শুনেছি এগুলো দিয়ে মেডিসিন ও প্রসাধনী তৈরি হয়।
ভোল মাছটি জেলে যেন নিরাপদে ন্যায্য মূলে বিক্রি করতে পারেন সেজন্য ঘাটে মাছটি আসার সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ পাহারায় বাজারে উঠানো হয়।
পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) কাজী মোস্তফা আজীজ বাংলানিউজকে বলেন, জেলেরা আমার পূর্ব পরিচিত। মাছটি ধরা পরার পর আমাকে ফোন দিয়ে জানায় তাদের সার্বিক নিরাপত্তা দিতে। তারা যেন নিরাপদে মাছটি বিক্রি করতে পারে সেজন্য ভোরে বাজারে এসেছি।
কেসিসি রূপসা পাইকারি মৎস্য আড়তের মেসার্স মদিনা ফিস ট্রেডার্স পরিচালক মো. আবু মুছা বাংলানিউজকে বলেন, ভোলা মাছ আগে কখনও দেখিনি। এটি একটি দুষ্প্রাপ্য মাছ। তবে বেশ কয়েক বছর আগে এ আড়তে একটি ভোলা মাছ উঠেছিল।
তিনি আরও বলেন, সমুদ্রের সোনা খ্যাত ভোল মাছের চাহিদা অনেক, স্বাদেও বেশ। সামুদ্রিক সব মাছেরই বালিশ (মাছের পেটের ভেতরের এক ধরনের অংশ) থাকে। তবে ভোল মাছের বালিশ সার্জিক্যাল অপারেশনের সুতা, প্রসাধনী ও ওষুধ তৈরিতে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এটি বিদেশে রপ্তানিও হয়ে থাকে। যার কারণে ভোল মাছের এতো দাম।
বাংলাদেশ সময়: ১০১৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১২ , ২০২৩
এমআরএম/জেডএ