ঢাকা, বুধবার, ২৮ কার্তিক ১৪৩১, ১৩ নভেম্বর ২০২৪, ১১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

প্রাকৃতিক জলাভূমি থেকে হারিয়ে যাচ্ছে মাগুর

বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন, ডিভিশনাল সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬১৩ ঘণ্টা, মে ২৯, ২০২৩
প্রাকৃতিক জলাভূমি থেকে হারিয়ে যাচ্ছে মাগুর মাগুর মাছ।

মৌলভীবাজার: হাওর, বিল, খাল প্রভৃতি নিয়েই প্রাকৃতিক জলাশয়। জনসংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মানুষ তার নতুন ঠিকানা স্থাপন করছে হাওর পাড়ে।

জলাভূমি সংলগ্ন যে সীমানাগুলো এতদিন জনশূন্য ছিল কালক্রমে সেখানে গড়ে উঠেছে মানববসতি।

ফলে খুব স্বাভাবিকভাবে হাওর-বিল সংলগ্ন এলাকা নানাভাবে ঝুঁকির মুখে পড়েছে। সেখানকার প্রকৃতিতে আর অবশিষ্ট নেই প্রাকৃতিক সুস্থতাটুকু। অপেক্ষাকৃত ক্ষমতাধর মানুষ প্রাকৃতিক বিলগুলোকে নিজের দখলে নিয়ে নদী শাসন করে চলেছে নিজেদের খেয়ালখুশি মতো।

কখনো ইজারা না নিয়ে জোরপূর্বকভাবে, আবার কখনোবা ইজারা নিয়ে এবং ইজারার সরকারি শর্তভঙ্গ করে প্রাকৃতিক জলাভূমির মাছ ধরার নামে মাছের মূল্যবান প্রজাতিগুলো নির্মূল করে চলেছে চারগুণ লাভের আশায়। আর এভাবেই মারাত্মক ঝুঁকির মুখে পড়েছে দেশি প্রজাতির মাছগুলো।

মাগুর দেশি প্রজাতির মাছ। বর্তমানে হাওর, বিলসহ প্রাকৃতিক জলাশয়গুলো বিপন্ন হয়ে যাওয়ায় এরাও পড়েছে ঝুঁকির মধ্যে। এক সময় বাংলাদেশের সর্বত্র হাওর-বাঁওড়, পুকুর ও প্লাবনভূমিতে মাগুর মাছের সহজলভ্যতা থাকলেও বর্তমানে খুবই কম চোখে পড়ে।

সম্প্রতি মৌলভীবাজারের হাওর সংলগ্ন এলাকায় এক মৎস্যজীবীকে এই হাওরের মাগুর নিয়ে আসতে দেখা গেল। এই মাগুর মাছের দরদাম সম্পর্কে স্থানীয় মৎস্যজীবী সিফিল মিয়া বলেন, এই হাওরে মাগুরের দাম কেজি প্রতি ৭শ টাকা। কেজি প্রতি ৬শ টাকা তার কেনাই আছে বলে জানান তিনি।

মৎস্য অধিদপ্তরের সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা ফারাজুল কবির বাংলানিউজকে বলেন, জিওল অর্থাৎ জীবিত মাছগুলোর মাঝে মাগুর মাছ অধিক সুপরিচিত। বাজারে মরা মাগুর মাছের তুলনায় জীবিত মাগুর মাছের চাহিদা অনেক বেশি। প্রাকৃতিক জলাশয়ে একেকটি মাগুর ৩০ সেন্টিমিটার থেকে ৪৫ সেন্টিমিটার পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। এ মাছটি বৈজ্ঞানিক নাম Clarias batrachus

ইংরেজি নাম ‘walking catfish’। মাগুর মাছ বুকের ওপর ভর দিয়ে এদিক থেকে ওদিকে গড়িয়ে গড়িয়ে চলে যেতে পারে বলে তাদের এই ইংরেজি নামকরণ। এদের অতিরিক্ত শ্বাসযন্ত্র আছে বলে এরা বাতাস থেকে শ্বাস নিয়ে টিকে থাকতে পারে বলে জানান তিনি।

মৎস্য ঝুঁকি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমাদের দেশের মূল্যবান দেশি প্রজাতির মাছের প্রজননের ক্ষেত্রে মুক্ত জলাশয়ের পরিবেশ এবং প্রতিবেশ ব্যবস্থা ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। তবে বর্তমান সরকার দেশি প্রজাতি মাছের নিরাপদ প্রজনন এবং মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণের জন্য নানামুখী পদক্ষেপ নিয়েছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে জলজ জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ, মাছের অভয়াশ্রম স্থাপন, গবেষণা ও উন্নয়ন প্রযুক্তিনির্ভর কার্যক্রম প্রভৃতি। আমরাই এগুলো তৃণমূল পর্যায়ের মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দিচ্ছি।

মাগুরসহ অন্যান্য দেশি প্রজাতি মাছের বিলুপ্তি ঠেকাতে হলে আমাদের প্রাকৃতিক মুক্ত জলাশয়ের জনসম্পৃক্তমূলক উন্নয়ন ব্যবস্থাপনা নেওয়া এবং সে সঙ্গে দেশি প্রজাতির মাছের সংরক্ষণ ব্যবস্থাপনা কার্যক্রমকে গুরুত্ব দিতে হবে বলে জানান ওই মৎস্য কর্মকর্তা।

আন্তর্জাতিক প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ সংঘ (আইইউসিএন), বাংলাদেশের লাল-তালিকায় ওই মাছটি ‘ন্যূনতম বিপদগ্রস্ত’ প্রজাতি হিসেবে চিহ্নিত।

বাংলাদেশ সময়: ১৬১০ ঘণ্টা, মে ২৯, ২০২৩

বিবিবি/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।