ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

প্রায়ই আগুন লাগে আলতাদিঘী বনে, বিলুপ্ত হচ্ছে গাছ-বন্যপ্রাণী

তৌহিদ ইসলাম ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১০৯ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৭, ২০২৪
প্রায়ই আগুন লাগে আলতাদিঘী বনে, বিলুপ্ত হচ্ছে গাছ-বন্যপ্রাণী

নওগাঁ: মাঝেমধ্যেই নওগাঁর আলতাদিঘী জাতীয় উদ্যানে আগুন লেগে পুড়ে ছাই হচ্ছে বিশাল বিশাল শাল-সেগুনসহ অসংখ্য গাছ। এতে হুমকির মুখে পরিবেশ, বিলুপ্ত হচ্ছে অজগর, বানর, বাঘসহ অসংখ্য বন্যপ্রাণী।



সবশেষ আলতাদিঘী শালবনে আগুন লাগে ২৩ এপ্রিল। এতে পুড়ে ছাই হয়েছে বিশালাকৃতির শাল, সেগুন, জারুলসহ বহু বন্য গাছ। বন ছেড়ে পালিয়েছে নানা প্রজাতির বন্যপ্রাণী। গত দেড় মাসে বনের অন্তত নয়টি স্থানে বড় বড় অগ্নিকাণ্ড ঘটে। কিন্তু কে বা  কারা এই আগুন লাগার সঙ্গে জড়িত এখন পর্যন্ত জানা যায়নি।


স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল মালেক বাংলানিউজকে জানান, প্রতিবছর এই সময়টা এলে আগুন লাগে বনে। ২৩ এপ্রিলের আগুনে পুড়েছে বনের অনেক জায়গা। নষ্ট হয়েছে অনেক বন্য গাছ। এই গাছগুলো অনেক বছরের পুরোনো, ফলে এই গাছগুলো তৈরি হতে আবার অনেক সময় লাগবে। এভাবে প্রতিনিয়ত আগুন লাগে, কিন্তু এখন পর্যন্ত জানা যায়নি কে আগুন দিচ্ছে বনে। এর আগেও বহুবার বনে আগুন লেগেছে। কিন্তু বন কর্তৃপক্ষ এখন পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেনি। এই আগুন লাগার পেছনে বন বিভাগের উদাসীনতা রয়েছে।



স্থানীয় বাসিন্দা তরিকুল ইসলাম মাস্টার জানান, এই বনে অনেক বন্যপ্রাণীর বসবাস। তারা নিরাপদে এই বনে আশ্রয় নিয়েছে বসবাস করে। কিন্তু এই আগুন লাগার ঘটনাগুলোতে তাদের জীবন হুমকির মুখে পড়েছেন। অনেক পশুপাখি বন ছেড়ে পালিয়েছে। এভাবে দিন দিন বন উজার হয়ে যাচ্ছে। পরিবেশের পাশাপাশি হুমকির মুখে বন্যপ্রাণী জীবন। বনে আগুন দেওয়া এটা পরিকল্পিত কি না, দ্রুতই তা বের করতে হবে দায়িত্বশীলদের। অন্যথায় এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি হবে বারবার।



বহু বছর এই বনে পর্যবেক্ষকের দায়িত্ব পালন করছেন বসির উদ্দিন। তিনি জানান, দিনে দিনে এই বন ঘিরে মাদক কারবারিদের আধিপত্য বাড়েই চলেছে। জাতীয় উদ্যানের জন্য দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রতিনিয়ত হাজারো পর্যটক আছে এখানে। তারা বনে ঢুকে ঘুরে বেড়ায়। পাশাপাশি স্থানীয় কিছু মাদকসেবী ও ঘোরাফেরা করেন। বনে প্রবেশ করতে আমরা তো কাউকে নিষেধ করতে পারি না। তবে এর ফাঁকেই কে বা কারা আগুন লাগিয়ে পালিয়ে যায়। তবে অগ্নিকাণ্ডগুলোর জন্য মূলত মাদকসেবীরাই দায়ী।



রাজশাহী বিভাগীয় বন কর্মকর্তা রফিকুজ্জামান শাহ্ বাংলানিউজকে জানান, অগ্নিকাণ্ডের পর খবর পেয়ে বন বিভাগের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। এরই মধ্যে সংশ্লিষ্ট থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। আশা করি, তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের আইনের আওতায় আনা যাবে। তবে বন পাহারায় আমাদের জনবল সংকট রয়েছে। আমাদের নিয়োগ প্রক্রিয়া চলছে। নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ হলে জনগণ বাড়ানো যাবে, সেই ক্ষেত্রে বন পাহারায় আরও জোরদার হওয়া যাবে।

পরিবেশ নিয়ে কাজ করা সংগঠন একুশে পরিষদ নওগাঁর সাধারণ সম্পাদক এম এম রাসেল বাংলানিউজকে জানান, পরিকল্পিতভাবে বনে দেওয়া হচ্ছে আগুন। ফলে পরিবেশের পাশাপাশি আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দেশ। বিলুপ্ত হচ্ছে বন্যপ্রাণী। এভাবে চলতে থাকলে একটি সময় বোন উজার হয়ে যাবে। বন, গাছপালা এবং প্রাণিকুল না থাকলে মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এজন্য কারা এই আগুন দেওয়ার সঙ্গে জড়িত তাদের দ্রুতই আইনি ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।

বাংলাদেশ সময়: ২১১০ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৭, ২০২৪
এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।