ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

অবৈধ দখলে হুমকির মুখে বড়াল নদী

শাহীন রহমান, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৩৪ ঘণ্টা, আগস্ট ১৯, ২০১৩
অবৈধ দখলে হুমকির মুখে বড়াল নদী

পাবনা: চলনবিলের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত পাবনার চাটমোহর অংশে এক সময়ের স্রোতস্বিনী ঐহিত্যবাহী বড়াল নদীতে চলছে অবৈধ দখলের প্রতিযোগিতা। দিন দিন বাড়ছে দখলদারের সংখ্যা।

  তবে এ ব্যাপারে নিশ্চুপ প্রশাসন।

পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো সারা দেশের নদীর মুক্ত প্রবাহ ঠিক রাখতে নানা কর্মসূচি পালন করছে প্রতিনিয়ত। কিন্তু থেমে নেই পরিবেশের স্বাভাবিক রূপ ধ্বংসকারী এক শ্রেণীর অসাধু মানুষ। অবৈধ দখলদারদের কারণে বড়াল নদী তার আসল রূপ হারালেও দখলদারদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না প্রশাসন। ফলে বিলুপ্ত হচ্ছে নদী ও এর আশপাশের জীববৈচিত্র্য।

বাঁধ আর স্লুইসগেটের কারণে এমনিতেই হুমকির মুখে এখানকার জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশ। তার ওপর নতুন করে এই দখল নদীকে পরিকল্পিতভাবে মেরে ফেলারই একটি অংশ মনে করছেন সাধারণ মানুষ। নদী মুক্ত করার সরকারি ঘোষণার সঙ্গে মিল খুঁজে পাচ্ছেন না তারা।

সরেজমিনে দেখা গেছে, রাজশাহীর চারঘাট থেকে সিরাজগঞ্জের বাঘাবাড়ি পর্যন্ত ২২০ কিলোমিটারব্যাপী বড়াল নদীর প্রায় সব স্থানে চলছে দখল। ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় নেতাদের ছত্রছায়ায় এলাকার কিছু প্রভাবশালী যে যেভাবে পারছেন নদীর পাড় দখল করে বাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, কারখানা স্থাপন করছেন এমন অভিযোগ রয়েছে।
Pabna-Boral
চাটমোহর উপজেলার নুরনগর খেয়াঘাট, নতুন বাজার খেয়াঘাট, বোঁথড় খেয়াঘাটসহ বেশ কিছু এলাকায় নদীর পাড় দখলের উৎসব চলছে। নদীপাড়ের মানুষের অভিযোগ, ক্ষমতাসীন দলের ছত্রছায়ায় ও প্রশাসনের সহযোগিতায় চলছে এ দখলের প্রতিযোগিতা। আর নদী রক্ষায় পেশাজীবী মানুষদেরও বাধা দেওয়া হচ্ছে।

চাটমোহরের বিশিষ্ট হোমিও চিকিৎসক ডা. অঞ্জন ভট্রাচার্য বাংলানিউজকে বলেন, বর্তমানে কিছু অসাধু লোক আধা মরা বড়াল নদীতে দখলের প্রক্রিয়া অব্যাহত রেখেছে। মাটি ভরাট করে যার যেখানে যেমন ইচ্ছা দোকানপাট, বাড়ি নির্মাণ করছে।

চাটমোহর প্রেসক্লাবের সভাপতি ও বড়াল রক্ষা আন্দোলনের অন্যতম সদস্য হেলালুর রহমান জুয়েল বাংলানিউজকে জানান, নদীর দখল প্রক্রিয়া এটা অব্যাহত আছে। খেয়াল-খুশি মতো দখল করছে দখলকারীরা। আমরা চেষ্টা করছি বড়ালকে অবমুক্ত করার।

জুয়েল বলেন, আমাদের পদে পদে বিভিন্নভাবে বাধা দেওয়া হচ্ছে। যার কারণে নদী মুক্ত করা সম্ভব হচ্ছে না। বড়ালকে অবমুক্ত করা না গেলে চলনবিল অঞ্চলের মানুষ সবদিক থেকেই হুমকির মুখে পড়বে।

নদীর পাড় ঘিরে গড়ে ওঠা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিকরা বাংলানিউজকে জানান, তারা শুধু দোকান ভাড়া নিয়ে ব্যবসা করছেন, নদী দখলের বিষয়ে তারা কিছু জানেন না। আর দখলদারদের বক্তব্য, নদীর পাড় অবৈধ দখল করে নয়, তাদের কেনা জমিতে বৈধভাবে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন তারা।

স্থানীয়দের অভিযোগ, নতুন বাজার খেয়াঘাট এলাকায় নদীর পাড় দখল করে কারখানা স্থাপন করেছেন চাটমোহর পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আকতার হোসেন। শুধু তাই নয়, তিনি নদীর পাড়ে দোকান নির্মাণ করে ভাড়াও দিয়েছেন।

এবিষয়ে জানতে চাইলে কাউন্সিলর আকতার হোসেন বাংলানিউজকে জানান, আসলে আমার বিরুদ্ধে নদী দখলের যে অভিযোগ তা সত্য নয়। আমি দু’জনের কাছ থেকে নদী সংলগ্ন এই জমি কিনেছি। একজনের কাছ থেকে ২০ শতক অপরজনের কাছ থেকে ৯ শতক। যদি আমার জমি নদীর মধ্যে গিয়ে থাকে, সরকার যখন চায় তখন জায়গা ছেড়ে দেবো।

চাটমোহর উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক মির্জা রেজাউল করিম দুলাল বাংলানিউজকে বলেন, ক্ষমতাসীন দলের ছত্রছায়ায় কেউ নদী দখলের সঙ্গে জড়িত নয়। কেউ দখল করে থাকলে তারা ব্যক্তিগতভাবেই করছে। আর প্রশাসন আছে। যদি কেউ দখল করে থাকে তার বিরুদ্ধে তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে পারে।

বড়াল রক্ষা আন্দোলনের সদস্য সচিব এসএম মিজানুর রহমান বাংলানিউজকে জানান, দখলদারদের বিরুদ্ধে সরকারের পক্ষ থেকে যদি এখনই আইনগত কার্যকর ব্যবস্থা না নেওয়া হয় তাহলে বড়াল নদী ইতিহাস থেকে মুছে যাবে।

এবিষয়ে জানতে চাইলে চাটমোহর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম বড়াল নদীর দখল বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি।

তবে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোহাম্মদ বাংলানিউজকে বলেন, বড়াল নদী একটি দীর্ঘদিনের সমস্যা। অভিযোগ পাওয়ার পর দখলদারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। নদী রক্ষায় সরকার ও ভূমি অফিস তৎপর রয়েছে।

বড়াল নদীর সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত রয়েছে নদী পাড়ের ৫০ লাখ মানুষের জীবন-জীবিকা। তাই সরকারের পক্ষ থেকে অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওযার দাবি নদীপাড়ের মানুষের।

বাংলাদেশ সময়: ১৭১৮ ঘণ্টা, আগস্ট ১৯, ২০১৩
এএ/আরকে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।