ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

রঙিন পাখার প্রজাপতি

মীম নোশিন নাওয়াল খান, নিউজরুম এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২০৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ১, ২০১৩
রঙিন পাখার প্রজাপতি

প্রজাপতি। আমাদের অতি পরিচিত এবং ভালোলাগার একটি পতঙ্গ।

নানা রঙে রঙিন পাখার প্রজাপতিগুলোকে ফুলের উপর, ঘাসের ডগায় ওড়াওড়ি করতে দেখে সত্যিই ভালো লাগে। ফুলের সাথে প্রজাপতির বেশ ভালো বন্ধুত্ব। পাপড়িতে আলতো আদর ছুঁয়ে দিয়ে প্রজাপতি যেন বলে, এই তো বন্ধু, আমি এসে গেছি!

প্রজাপতিকে ইংরেজিতে বলা হয় Butterfly। এটি    Animalia কিংডমের প্রাণী। অর্ডার Lepidoptera । ফাইলাম Arthropoda ।  

শুঁয়োপোকা থেকে হয় প্রজাপতি। আর প্রজাপতি হওয়ার পর যতদিন বেঁচে থাকে, ততদিন এদের আকার-আকৃতি একই থাকে। বড় হয় না।

পুরো বছরজুড়ে কম-বেশি প্রজাপতি দেখা গেলেও মূলত আগস্ট থেকে নভেম্বর মাসেই বেশি প্রজাপতি দেখা যায়। ফেব্রুয়ারিতে খুব বেশি প্রজাপতি দেখা যায় না। সে হিসেবে এখন চলছে প্রজাপতির মৌসুম।

প্রজাপতি নানা রকমের হয়ে থাকে। প্রজাতিভেদে ভিন্নতা আছে তাদের শরীরের মাপ এবং পাখার রঙের। প্রজাপতির লম্বাটে ডানা এবং ৬টি পা থাকে। প্রজাপতির শরীর তিন ভাগে বিভক্ত।

প্রজাপতির চোখ কম্পাউন্ড আই বা পুঞ্জাক্ষী নামে পরিচিত। তাদের চোখে শত শত চোখ থাকে বলেই এমন নাম। পুঞ্জাক্ষীর কারণেই তারা একসঙ্গে সবদিক দেখতে পায়। তবে মানুষের মতো কোনো কিছু স্পষ্ট করে দেখতে পায় না প্রজাপতি, ওরা শুধু অস্পষ্ট অবয়ব দেখে। তাদের আল্ট্রা ভায়োলেত ভিশনও রয়েছে।

প্রজাপতি খুব সূক্ষ্ম নড়াচড়াও টের পায়। সে কারণেই তারা শত্রুর কবল থেকে পালিয়ে যেতে পারে দ্রুত। পুরুষ প্রজাপতির দৃষ্টিশক্তি মেয়ে প্রজাপতির চেয়ে বেশি হয়।

গ্লাসি টাইগারের মতো বড় আকারের প্রজাপতির পুরুষ প্রজাতির উদরের পেছনে হেয়ার পেন্সিল থাকে।

প্রজাপতির কোনো দাঁত নেই। সুতরাং তারা কাউকে কামড়ে আক্রমণ করতে পারে না, হুলও ফোটাতে পারে না। তাদের রয়েছে কেবল প্রবোসিস নামক শুঁঙ্গ। আক্রমণ করার কোনো সুযোগ না থাকাতেই প্রজাপতি পৃথিবীর সবচেয়ে নিরীহ জীব।

প্রজাপতিরা কিন্তু পরিযায়ীও হয়। ক্রো এবং টাইগার প্রজাতির প্রজাপতি রোদ ঝলমল দিনে একসাথে দলবেধে কোনো এক দিকে ছোটা শুরু করে। কয়েক মাইল শুধু নয়, শত শত মাইলও পাড়ি দেয় তারা।

একটি ছোট প্রজাপতির আয়ু হয় সাধারণত দুই থেকে তিন সপ্তাহ। তবে সোয়ালোটেইলের মতো প্রজাপতিরা কয়েক সপ্তাহ পর্যন্ত বাঁচে। প্রজাপতির গড় আয়ু দুই থেকে চার সপ্তাহ।

যদিও মানুষের ধারণা প্রজাপতি ফুলের মধু খায়, আসলে এটি পুরোপুরি সত্যি ধারণা নয়। সব প্রজাপতি ফুলের মধু খায় না। প্রজাপতির মূল খাদ্য হচ্ছে উদ্ভিদের রস, মানুষের ঘাম, প্রাণীর মল-মূত্র ইত্যাদি। শুনলে অবাক লাগবে, অনেক প্রজাপতি বিভিন্ন প্রাণীর মৃতদেহও খায়।

প্রজাপতিদের মধ্যে রাজাহ ও নয়াবেরা প্রজাতির প্রজাপতিরা পচা চিংড়ি এবং কাঁকড়া খেতে ভালোবাসে। ইভনিং ব্রাউন পছন্দ করে বিয়ার। ব্যারন, ক্যাস্টর, রাজাহ প্রজাতির প্রজাপতিরা বেশি পাকা ফল খেতে পছন্দ করে।

প্রজাপতিরা নিজেদের মধ্যে লড়াইও করে। ডানা ঝাপটিয়ে তাড়া করে লড়াই করে ওরা।

প্রজাপতি ভোরে বা সন্ধ্যায় রোদ পোহায়। প্রজাপতি শীতল রক্তের প্রাণী। তাই শরীরের অংশগুলোকে সচল রাখতে রোদ পোহানোর প্রয়োজন হয় তাদের। এই রোদ পোহানোকে বলে বাস্কিং।

শীতল রক্তের প্রাণী বলেই প্রজাপতিকে শীতকালে প্রায় দেখাই যায় না।

বাংলাদেশে যেসব প্রজাপতি রয়েছে, তাদের মধ্যে সবচেয়ে বড় হচ্ছে কমন বার্ডউইং এবং সবচেয়ে ছোট টাইনি গ্রাস ব্লু।

প্রজাপতি অত্যন্ত সুন্দর একটি জীব। প্রকৃতির সৌন্দর্য প্রজাপতি। রঙিন প্রজাপতিকে ফুলের উপর নেচে বেড়াতে দেখলে বারবারই গেয়ে উঠতে ইচ্ছে করে:

প্রজাপতি, প্রজাপতি,

কোথায় পেলে ভাই এমন রঙিন পাখা?

ওই লাল-নীল ঝিলিমিলি আঁকাবাঁকা।

কোথায় পেলে ভাই এমন রঙিন পাখা?

বাংলাদেশ সময়: ১২০০ ঘণ্টা, নভেম্বর ০১, ২০১৩
এমএনএনকে/এএ/জিসিপি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।