ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

ভূমিধস ঠেকাতে বিন্যা ঘাস ও ছন গাছ!

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২১২ ঘণ্টা, জুলাই ৩০, ২০১৭
ভূমিধস ঠেকাতে বিন্যা ঘাস ও ছন গাছ! ভূমিধস ঠেকাতে বিন্যা ঘাস ও ছন গাছ

ঢাকা: ভূমি ও পাহাড় ধসের মতো ঘটনায় প্রাণহানি ঠেকাতে বিন্যা ঘাস এবং ছন গাছ লাগানোর পরামর্শ দিয়েছেন এ সংক্রান্ত একজন বিশেষজ্ঞ। এই ঘাস ও গাছ দ্রুত সময়ে ঘাসের শিড়ক মাটির গভীরে গিয়ে মাটিকে শক্ত করে রাখবে। পাশাপাশি ন্যাড়া পাহাড়ে ধস রোধে জুট জিওটেক্সটাইল ব্যবহারের পরামর্শ এসেছে।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিষয়ক প্রথম জাতীয় কনভেনশনে এমন পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে দু’দিন ব্যাপী এ সম্মেলন শুরু হয়েছে রোববার (৩০ জুলাই)।


 
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া সকাল ৯টায় এ সম্মেলনের উদ্বোধন করেন।
 
‘ভূমিধস: কারণ চিহ্নিতকরণ ও করণীয় নির্ধারণ’ বিষয়ক কর্মশালায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক ড. আব্দুল জব্বার খান।
 
মূল প্রবন্ধে তিনি বলেন, গ্রামাঞ্চলে বিশেষ করে রংপুর অঞ্চলে বিন্যা ঘাস পাওয়া যায়। এই ঘাসের শিকড় অনেক গভীরে চলে যায়। ফলে মাটির ক্ষয় রোধ ও ধস ঠেকাতে পারে। পাশাপাশি ছন গাছের শিড়কও অনেক গভীরে চলে যায়।
 
বিদেশে ভূমি ধস ও ক্ষয় রোধে এ ধরনের ঘাস ব্যবহার করা হয় জানিয়ে তিনি বলেন, সে সব শিকড় ১০ফুট পর্যন্ত গভীরে গিয়ে মাটিকে শক্ত করে ধরে রাখে।  
 
ভূমির ক্ষয় রোধ ঠেকানোর জন্য আমাদের জুট জিওটেক্সটাইল বিদেশে রফতানি হলেও বাংলোদেশে এর ব্যবহার প্রায় নেই জানিয়ে অধ্যাপক আব্দুল জব্বার বলেন, এক মিটারের একটি আস্তরণ ৩-৪ কেজি পর্যন্ত পানি ধরে রাখতে পারে। পানি মাটির উপরিভাগে ধরে রাখায় ধস রোধ করা যায়।
 
অল্প সময়ে বেশি বৃষ্টিপাত হওয়ায় পাহাড় ও ভূমি ধসের ঘটনা ঘটছে জানিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের অধ্যাপক শহীদুল হক বলেন, ঘূর্ণিঝড় ও বন্যার পরে প্রাণহানির তৃতীয় কারণ হলো ভূমিধস।
 
জীবন বাঁচানোর জন্য ঝূঁকিপূর্ণ পাহাড় চিহ্নিতকরণ ও অবৈধ বাসিন্দাদের জোর করে সরিয়ে নেওয়ারও পরামর্শ দেন অধ্যাপক আব্দুল জব্বার ও শহীদুল হক।
 
আর সেপ্টেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি মাসের বাইরে পাহাড়ের রাস্তাঘাটসহ অন্যান্য উন্নয়ন কাজ না করার পরামর্শ এসেছে বুয়েট অধ্যাপক আব্দুল জব্বারের কাছে।
 
দু’দিনব্যাপী এ কনভেনশনে ছয়টি কর্মশালা ও ছয়টি সাইড ইভেন্ট অনুষ্ঠিত হবে।

বাংলাদেশের প্রধান প্রধান দুর্যোগগুলো নিয়ে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকবৃন্দ, বাস্তবায়নকারী সংস্থাগুলো, উপকারভোগী, এনজিও আইএনজিও, জনপ্রতিনিধি, সাংবাদিকরা, মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তা এবং বিগত কয়েকটি দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্তসহ প্রায় দেড় হাজার মানুষ এ কনভেনশনে অংশ নেন।
 
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন জনিত কারণে গত চার মাসে বড় বড় চারটি দুর্যোগ সংঘটিত হয়েছে। দুর্যোগগুলোতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সার্বক্ষণিক খোঁজ-খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়েছেন। আমাদের খাদ্যের কোনো অভাব নেই।
 
বাংলাদেশের দুযোগ নিয়ে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন এশিয়া প্যাসিফিক ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক ড. জামিলুর রেজা চৌধুরী।  
 
অন্যান্য দুর্যোগের পাশাপাশি ভূমিকম্পইসলেট, ময়মনসিংহ ও রংপুরের কিছু অংশ এবং এর বাইরে ঢাকা ও চট্টগ্রামও ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। এজন্য শুধু ঢাকাকে মাথায় নিয়ে নয়, ঢাকার বাইরে চট্টগ্রাম ও ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে থাকা বিভাগগুলোর জন্যও পরিকল্পনা নিতে হবে। সহনীয় ভবনের পাশাপাশি তা নির্মাণের জন্য মাটিকেও সহনীয় করে তুলতে হবে।  
 
দুর্যোগের সঙ্গে খাপ খাইয়ে কীভাবে মোকাবেলা করতে পারি সেটা নিয়ে কাজ করতে হবে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, দু’দিনের আলোচ্য বিষয়, মতামত ও সুপারিশমালা গ্রহণ করে তার আলোকে আগামী দিনের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার কর্মকাঠামো ও পরিকল্পণা গ্রহণ করা হবে।
 
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ সচিব শাহ কামালের সভাপতিত্বে অন্যান্যের মধ্যে সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম শিমুল, আব্দুর রহমান বদি, তালুকদার আব্দুল কালেক, ধীরেন্দ্র দেবনাথ শমভু প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৭৪৭ ঘণ্টা, জুলাই ৩০, ২০১৭
এমআইএইচ/এসএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।