ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

৩০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতে সিলেটর চা শিল্পে নবযৌবন

বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন, ডিভিশনাল সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯০৮ ঘণ্টা, মার্চ ৮, ২০২১
৩০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতে সিলেটর চা শিল্পে নবযৌবন নতুন কুঁড়িতে ভরে উঠেছে চা বাগান। ছবি: বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন

মৌলভীবাজার: সিলেটের চা শিল্পাঞ্চলে সাম্প্রতিক বৃষ্টিপাতে দু’টি পাতা একটি কুঁড়িতে ফিরে এসেছে নবযৌবন। বৃষ্টির ফলে প্রাণের স্পর্শ পেয়ে একদিনেই পাল্টে গেছে চা গাছের রূপ-লাবণ্য।

সামগ্রিক বিবেচনায় এই বৃষ্টিপাতকে অত্যন্ত ইতিবাচক বলেই মূল্যায়ন করেছেন চা বিশেষজ্ঞরা।

বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর, সিলেট সূত্র জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় সিলেট এবং এর পার্শ্ববর্তী এলাকায় ৩০ মিলিমিটার (মিমি) বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। সারাদেশের মাঝে আর কোথায়ও গত ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টিপাত হয়নি। তবে শ্রীমঙ্গলে অবস্থিত আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের রেকর্ড অনুযায়ী চায়ের রাজধানী শ্রীমঙ্গলে গত ২৪ ঘণ্টায় ১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে।

রোববার (৭ মার্চ) বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর, সিলেট এর আবহাওয়াবিদ সাঈদ আহমেদ চৌধুরী বাংলানিউজকে এই বৃষ্টিপাতের তথ্য জানিয়েছেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশের কোথায় বৃষ্টিপাত হয়নি। শুধু সিলেটেই হয়েছে। এটি কৃষিজাত পণ্যের জন্য বেশ উপকারী। অনেকদিন ধরে কৃষকরা এই বৃষ্টির প্রত্যাশায় ছিল।

তিনি আরও বলেন, সারা বছর যতখানি বৃষ্টিপাত হয় তার ৩০ ভাগ হয় শীতকালে। এবার ফেব্রুয়ারিতে কোনো বৃষ্টিপাত হয়নি। নভেম্বর-ডিসেম্বর-জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি এই চার মাসের মধ্যে মাত্র পয়েন্ট থ্রি (দশমিক ৩) পরিমাণ বৃষ্টিপাত হয়েছে। এ বৃষ্টিপাত নভেম্বর হয়েছিল। আর খুব অল্প পরিমাণে অপরিমাণযোগ্য বৃষ্টিপাত হয়েছে, যা রেকর্ডে আসেনি।

সাম্প্রতিক সময়ে সিলেটে আর বৃষ্টিপাত নেই। তবে আগামী ৭২ ঘণ্টার ভেতর শ্রীমঙ্গলে কিছু বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানান এ আবহাওয়াবিদ।  

এদিকে চা বাগানের বিস্তৃর্ণ জনপদে ঘুরে দেখা গেছে, চা গাছগুলোর প্রুনিং (মাথা ছাটাই) করা অংশগুলোতে দুটি পাতা একটি কুঁড়ি চলে এসেছে। বহুদূর পর্যন্ত সবুজের এই নবযৌবনের সমারোহ। যা হৃদয়কে দারুণভাবে মুগ্ধ করে।

এ ব্যাপারে বাংলাদেশীয় চা সংসদ (বিটিএস), সিলেট ব্রাঞ্চ চেয়ারম্যান এবং অভিজ্ঞ টি-প্লান্টার গোলাম মোহম্মদ শিবলি বাংলানিউজকে বলেন, এই বৃষ্টিপাত আমাদের চায়ের জন্য অবশ্যই অত্যন্ত ইতিবাচক সুফল বয়ে নিয়ে আসবে। এ বৃষ্টিপাতকে আমরা গোল্ডেন সাওয়ার অর্থাৎ সোনালী প্রপাত বলি। এটি সিম্বলিক অর্থে ব্যবহৃত। এর মানে হলো দীর্ঘ সময় চা বাগানগুলো খরার মুখোমুখি থাকার পর এমন বৃষ্টিপাত পেয়ে তারা নতুন কুঁড়িতে জেগে ওঠে। গাছগুলোতে এখন তাড়াতাড়ি কুঁড়ি বেড়ে যাবে। আমাদের তাড়াতাড়ি প্লাকিং (পাতা চয়ন) করতে সুবিধে হবে।

বসন্ত এলেই চা গাছে কুঁড়ি ছাড়া শুরু হয়, তার মাঝে এমন বৃষ্টির পরশ পেলে চা গাছের উন্নতি বেড়ে যায়। তাড়াতাড়ি কুঁড়ি ছাড়াতে শুরু করে। সীমিত পরিসরে আমাদের ফ্যাক্টরী চালু হয়েছে। আপাতত চা পাতার পরিমাণ অনুযায়ী সপ্তাহে ২/১ দিন ফ্যাক্টরী চালাচ্ছি বলেও এসময় যোগ করেন তিনি।

এমন প্রাকৃতিক বৃষ্টিপাত চা বাগানে অব্যাহত থাকলে আমাদের ইরিগেসন (কৃত্রিম সেচ) থেকে এর উপকারিতা বহুগুণ বেশি। ফলে চা গাছে কুঁড়ির পরিমাণ তাড়াতাড়ি বাড়লেই চায়ে গড় উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে বলেও জানান এই অভিজ্ঞ টি-প্লান্টার গোলাম মোহম্মদ শিবলি।  

বাংলাদেশ সময়: ০৯০০ ঘণ্টা, মার্চ ০৮, ২০২১
বিবিবি/এইচএমএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।