ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় প্রয়োজন স্থায়ী পাখির হাট

মেহেদী নূর, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৪০ ঘণ্টা, মার্চ ১৮, ২০২২
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় প্রয়োজন স্থায়ী পাখির হাট

ব্রাহ্মণবাড়িয়া: সুবিধাজনক জায়গা আর স্থায়ী হাটের অভাবে ধুকছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পাখি ব্যবসায়ীরা। প্রতি হাটে লাখ টাকার ওপরে আয় করেও বসার জন্য জুটছে না স্থায়ী কোনো ঠিকানা।

 

কখনও পুরাতন কাচারি কখনও বর্ডিং মাঠ আবার বঙ্গবন্ধু স্কয়ার বা ভাদুঘর এলাকায় হাট বসাতে হয়। ভাসমান অবস্থায় চালিয়ে যেতে হচ্ছে তাদের হাটের কার্যক্রম। পৌরসভার বাধা আর পুলিশের তাড়া খেয়ে ছুটতে হয় দিক বেদিক। ফলে তরুণ ব্যবসায়ীদের মধ্যে হতাশা দেখা দিয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পাখির ব্যবসার সঙ্গে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার প্রায় চারশ’ থেকে পাঁচশ’ পরিবার জড়িত আছে। পুরো জেলায় প্রায় ছয়শ’র মতো খামার রয়েছে। অনেক পরিবার বিভিন্ন জাতের পাখি পুষে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হচ্ছে। বিশেষ করে করোনার সময় বেকার হয়ে পড়া তরুণরাই তাদের অবসরের সময়ে পাখি পুষে তা বিক্রি করে সংসার চালিয়ে আসছেন।

জেলা শহরের পুরাতন কাচারি রোডে গিয়ে দেখা যায়, শত শত মানুষের ভিড়। ভিড় ঠেলে এগুতেই কানে ভেসে আসছে পাখির কিচির-মিচির শব্দ। কাছে গিয়ে দেখা গেল সড়কের পাশে রাখা সারি সারি খাঁচায় দেশি-বিদেশি নানা জাতের পোষা পাখি।  

সিরাজী, দেশি গোল্লা, অপরাজিতা, গিরিবাজ, বোম্বাই, জেকাবিন, গিয়াচুল্লী, রেসার, ঘুঘু, শালিক, হার্মিংবার্ডসহ নানা জাতের পাখির পশরা সাজিয়ে বসেছেন ব্যবসায়ীরা। দূর-দূরান্ত থেকে পাখিপ্রেমীরা এ হাটে পাখি কিনতে ভিড় করেছেন।

কথা হয় পাখি ব্যবসায়ী সোহেল মিয়ার সঙ্গে। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের কোনো নির্দিষ্ট হাট নেই। হাটের জন্য পৌরসভা, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর ও জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করেছি। তারা আমাদের আশ্বাস দিলেও এখনো কোনো নির্দিষ্ট হাট পাচ্ছি না। আগে প্রতি হাটে ১০ লাখ টাকার মতো পাখি বিক্রি হতো। এখন তা কমে বড় জোর লাখ টাকায় ঠেকেছে। ফলে আমাদের বাজারটা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। অনেক বেকার যুবক চাকরি না পেয়ে পশুপাখি পুষে বেকারত্ব দূর করছেন।  

তিনি আরও বলেন, পৌরসভা থেকে আমাদের ভাদুঘর বাসস্ট্যান্ডে হাট বসানোর কথা বলা হয়েছিল। তবে এটি মূল শহর থেকে কিছুটা দূরে হওয়ায় সেখানে হাটের কার্যক্রম ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তাই আমরা ওই স্থানটির পরিবর্তে মূল শহরের অভ্যন্তরে সুবিধাজনক কোনো একটি জায়গায় হাটের কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার জন্য অনুমতি চেয়েছি।

আরেক ব্যবসায়ী ইউসুফ মিয়া বাংলানিউজকে বলেন, আগে আমাদের পাখির হাটে হাজার লোকের সমাগম হলেও এখন নির্দিষ্ট জায়গার অভাবে লোকজন তেমন আসেন না। তাই বেচাকেনাও অনেকটা কমে গেছে। এছাড়া শহরের ভেতর বিভিন্ন ফাঁকা স্থানে বসলেও পৌরসভার লোকজন ও পুলিশ তাড়িয়ে দেয়। প্রশাসন যদি জেলা শহরের ভেতরে পাখির হাটের নির্দিষ্ট স্থান করে দেয়, তাহলে আমরা উপকৃত হব।

মিনু বেগম নামে এক পাখি বিক্রেতা আক্ষেপ করে বাংলানিউজকে বলেন, কোনো স্থানে বসার জায়গা পাই না। যেখানে বসি, সেখান থেকেই উঠিয়ে দেয়। তাই বিক্রি অনেকটা কমে গেছে। পরিবার নিয়ে চলতে অনেক কষ্ট হচ্ছে। আমরা বসতবাড়িতে হাঁস, মুরগি, কুবুতর পুষছি। কিন্তু সেগুলো বিক্রি করার জন্য সুবিধাজনক স্থান পাচ্ছি না।

পাখি কিনকে আসা কয়েকজন ক্রেতা বাংলানিউজকে বলেন, পাখির হাটের নির্দিষ্ট জায়গা না থাকায় আমাদের বেকাদায় পড়তে হচ্ছে। ব্যবসায়ীদের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করে স্থানের নাম জেনে সে স্থানে এসে পাখি কিনতে হচ্ছে। পাখি ব্যবসায়ীদের নির্দিষ্ট হাটের ব্যবস্থা করার দাবি জানাচ্ছি।

পাখিপ্রেমী সৈয়দ মোহাম্মদ আকরাম বাংলানিউজকে বলেন, দেশে গরু-ছাগলের নির্দিষ্ট হাট থাকলেও পাখি বিক্রির কোনো হাট নেই। সম্প্রতি সৌখিন পাখি পালন যেমন বেড়েছে, তেমনি বেড়েছে খামারির সংখ্যাও। তারা হাটের অভাবে পাখিগুলো বিক্রি করতে পারছেন না। তাই সরকার ও প্রাণিসম্পদ বিভাগ যদি এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিয়ে এ ব্যবসাকে রক্ষায় এগিয়ে আসে, তাহলে পাখির খামারিরা উপকৃত হবেন।  

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. এ. বি. এম. সাইফুজ্জামান বাংলানিউজকে বলেন, পাখির ব্যবসাটি একটি সম্ভাবনাময় ব্যবসা। পাখি পোষা মনের খোরাক মেটানোর পাশাপাশি দেশের অর্থনীতিতেও ভূমিকা রাখে। অনেক বেকার যুবক বিশেষ করে যারা করোনার সময় বিদেশ থেকে দেশে এসেছেন, তারা স্বল্প পুঁজি বিনিয়োগ করে পাখি পুষছেন। এতে বেকারত্ব দূর হবে। পাখি ব্যবসায়ীরা স্থায়ী হাট নিয়ে তাদের সমস্যার কথা আমাদের জানিয়েছেন। আমরা বিষয়টি নিয়ে পৌরসভার সঙ্গে কথা বলেছি। বিষয়টি এখন পৌরসভার বিবেচনাধীন।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল কুদ্দস বাযলানিউজকে বলেন, পশুপাখির হাটের জন্য ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভার নির্দিষ্ট করে কোনো ব্যবস্থা নেই। তারপরও আমরা তাদের ভাদুঘর বাসস্ট্যান্ডে জায়গা দিয়েছি। কিন্তু তারা সেখানে যেতে চাচ্ছেন না। শহরে ভেতরে ফাঁকা কোনো জায়গা নেই।

বাংলাদেশ সময়: ১৩৩২ ঘণ্টা, মার্চ ১৮, ২০২২
এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।