ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

অল্পের জন্য প্রাণে রক্ষা পেল মেছো বিড়াল

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৪০ ঘণ্টা, জুন ২৫, ২০২২
অল্পের জন্য প্রাণে রক্ষা পেল মেছো বিড়াল এভাবেই রশিতে ঝুলিয়ে মেছো বিড়ালটিকে পেটানো হচ্ছিল

হবিগঞ্জ: হবিগঞ্জের বানিয়াচং উপজেলায় বন্যার পানিতে ভেসে আসা একটি মেছো বিড়ালকে রশিতে ঝুলিয়ে বেধড়কভাবে পেটাচ্ছিল একদল গ্রামবাসী। তবে বন বিভাগের তড়িৎ পদক্ষেপের কারণে বন্যা কবলিত এই বন্য প্রাণীটি মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে।

 

শনিবার (২৫ জুন) বিকেলে বানিয়াচং উপজেলার মুরাদপুর ইউনিয়নের গানপুর গ্রাম থেকে মেছো বিড়ালটিকে ধরা হয়। পরে বন্যপ্রাণি ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ স্থানীয় জনপ্রতিনিধির মাধ্যমে সেটির সুরক্ষা নিশ্চিত করে।  

বন বিভাগ জানায়, গানপুর গ্রামে বন্যার পানিতে ভেসে আস কচুরিপানার মধ্যে একটি মেছো বিড়াল ভাসছিল। গ্রামের এক ব্যক্তি সেটিকে ধরে আনেন এবং কয়েকজন মিলে রশিতে ঝুলিয়ে প্রাণীটিকে মারধর করতে থাকেন। এই দৃশ্য দেখতে পেয়ে বানিয়াচং গ্যানিংগঞ্জ বাজারের ব্যবসায়ী এনামুল হাসান ঘটনাটি বন বিভাগকে অবগত করেন। পরে বন্যপ্রাণি ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ, হবিগঞ্জের রেঞ্জ কর্মকর্তা তোফায়েল আহমেদ চৌধুরী তড়িৎ পদক্ষেপ নেন। মিনিট পাঁচেকের মধ্যেই তিনি মুরাদপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মিজানুর রহমানের মাধ্যমে প্রাণীটিকে মারধর থেকে রক্ষা করেন।  

ব্যবসায়ী এনামুল হাসান বলেন, বন্যপ্রাণী সম্পর্কে গ্রামবাসীর অজ্ঞতার কারণে এই মেছো বিড়ালটি হিংস্রতার শিকার হয়েছে। তারা সেটিকে রশিতে ঝুলিয়ে পেটাচ্ছিলেন। মেছো  বিড়ালটি চেঁচাচ্ছিল। বন বিভাগ দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে সেখানে বন্যা কবলিত এই প্রাণীটির মৃত্যু ঘটতে পারতো।  

বন্যপ্রাণি ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ, হবিগঞ্জের রেঞ্জ কর্মকর্তা তোফায়েল আহমেদ চৌধুরী বলেন, দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে মারধরের কারণে মেছো বিড়ালটির মৃত্যু ঘটতে পারতো। ইউপি চেয়ারম্যানের মাধ্যমে প্রাণীটির সুরক্ষা নিশ্চিত করা হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, এটি বন্যার কারণে তার স্থান হারিয়েছে। রোববার (২৬ জুন) সেটিকে উদ্ধার করে আনা হবে।  

এ সম্পর্কে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ সোসাইটি (ডব্লিউসিএস) বাংলাদেশের বণ্যপ্রাণী অপরাধ দমন প্রোগ্রামের সমন্বয়কারী সামিউল মোহসেনিন বাংলানিউজকে জানান, মেছো বিড়ালকে কেউ কেউ মেছো বাঘ বা বাঘরোল বলেও ডাকেন। প্রাণীটির ইংরেজি নাম Fishing Cat, বৈজ্ঞানিক নাম Prionailurus viverrinus. মাঝারি আকারের বিড়ালগোত্রীয় এক ধরনের স্তন্যপায়ী বন্যপ্রাণী। ব্রাজিল, কোস্টা রিকা, বাংলাদেশ, ভারত, বলিভিয়া, ক্যাম্বোডিয়া, লাউস, শ্রীলঙ্কায় এরা স্থানীয়ভাবে বাঘরোল নামে পরিচিত। বিগত কয়েক দশকে এগুলোর সংখ্যা মারাত্মকভাবে হ্রাস পেয়েছে। জনবসতি স্থাপন, কৃষিজমিতে রূপান্তর, জলাভূমিগুলো দিন দিন সংকুচিত ও হ্রাস পাওয়াই এর মূল কারণ। তাই আইইউসিএন ২০০৮ সালে মেছো বিড়ালকে বিপন্ন প্রজাতির তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে। প্রাণীগুলো সাধারণত পাহাড়ি ছড়া এবং জলাভূমিতে বাস করে। এরা সাঁতারে পারদর্শী হওয়ায় এ ধরনের পরিবেশে সহজেই খাপ খাওয়াতে পারে। এদের গায়ে ছোপ ছোপ চিহ্ন থাকার জন্য চিতাবাঘ বলেও ভুল করা হয়। ভারতের পশ্চিমবঙ্গে এটিকে সেই রাজ্যের জাতীয় প্রাণী তকমা দেওয়া হয়েছে।  

বাংলাদেশ সময়: ২১২৫ ঘণ্টা, জুন ২৫, ২০২২
এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।