মৌলভীবাজার: এই পথ দিয়ে তেমন কেউ যাতায়াত করে না। কেননা, এই পথটি স্বাভাবিকভাবে পরিভ্রমণের জন্য নয়।
এ সমস্ত কিছুই যেন প্রাকৃতিক বনের মহাসম্পদ। তাতেই যেন চোখ জুড়ানো আরণ্যক শোভা আর প্রাণের চিরশান্তির সুবাতাস। সেই সাথে চৈত্র্যের সাথী শ্বেত বুনো ফুলের শোভা। পুনরাবৃত্তির উচ্চারণে অরণ্য তাই নিঃশব্দে যেন বারবার বলে উঠে কবি রফিক আজাদের সেই বিখ্যাত লাইন ‘ঐ বৃক্ষ অনন্তকাল ধরে যোগ্যপথিকের জন্যে প্রতীক্ষমান’।
বৈচিত্র্যময় লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান। তবে ওই বৈচিত্র্যময় শব্দটির বাস্তব তৎপর্য খুঁজতে সবাই যে পথে পা ফেলে সম্মুখে অগ্রগামী হয়, সেই পথে পা ফেললে কিন্তু হবে না! পা ফেলতে হবে অপথে! মানে যে পথ দিয়ে সর্বসাধারণের সবাই যায় না সেই পথে। তবে প্রকৃতিকুলের চির অদেখা সতেজ দৃশ্যগুলোর মুখোমুখি হওয়া যাবে।
অরণ্য দিবসের কথা মাথায় রেখে সম্প্রতি লাউয়াছড়ার অরণ্য ভ্রমণে খুঁজে পাওয়া গেল দুর্লভ শ্বেতশুভ্র বুনো ফুল। সে যেন সবার আড়ালে লুকিয়েই ফুটে! অরণ্যভ্রমণেচ্ছুক অধিকাংশ জনেরাই তা দেখে না।
‘বিউমনটিয়া’ (Beaumontia) এই দুর্লভ বুনো ফুলের নাম। এর উদ্ভিদ তাত্ত্বিক নাম বা বৈজ্ঞানিক নাম Beaumontia grandiflora। এ ফুলটি ‘নেপাল ট্রাম্পেট ফুল’ (Nepal Trumpet Flower) নামেও পরিচিত। লতানো উদ্ভিদ বলে এ ফুল গাছটির আকৃতি বেশ উঁচুতে। এমন একটি স্থানে ওরা একত্রে ফুটে আছে যে সাধারণভাবে তাকালে সহজে দেখাই যায়! অফ হোয়াইট অর্থাৎ হালকা সাদা রঙের পাপড়ির বিন্যাস।
লাউয়াছড়ার ওই নির্জন ফুটট্রেইলটা পাখিদের পাড়ার ভেতর দিয়ে গেছে। তখন অসংখ্য ঝিঁঝিঁপোকার ক্রমাগত ডাক! ডাকছে তো ডাকছেই! তাদের বিরতির নাম নেই। পাখির পাড়ায় গিয়ে গাছে গাছে পাখির খুঁড়ল অনুসন্ধান করতেই উঁচু ‘বিউমনটিয়া’ ফুলগুলো যেন উঁকি দিলো!
তারপর তো একপলক তাকানো নয়! ভালো করে দেখার সুযোগ হলো। বসন্ত প্রকৃতির অদেখা সৌন্দর্য হয়ে ওরা নীরবে প্রস্ফুটিত হয়ে আছে। একেবারে উঁচু শাখার কোণে কোণে। কোথা থেকে যেন হঠাৎ এসেছে ইরাবতী কাঠবিড়ালি (Irrawaddy Squirrel)! সে ফুলগুলোর রসের লোভে প্রতিটি ফুলের থোকায় থোকায় মুখ রেখে চলেছে। তখন ফুলগুলো বিচিত্রভাবে দুলে দুলে ওঠে! শিশুদের ‘কাতুকুতু’ দেওয়া মুহূর্তের মতো!
বাংলাদেশ সময়: ১৬২৫ ঘণ্টা, মার্চ ২১, ২০২৪
বিবিবি/এএটি