ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ফিচার

গর্ভাবস্থায় ওজনকে ‘না’

সানজিদা সামরিন, ফিচার রিপোর্টার | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১০২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০১৫
গর্ভাবস্থায় ওজনকে ‘না’

ঢাকা: আমি এত মোটা ছিলাম, ভাবতেই অবাক লাগে! বললেন, লেইলা মঞ্জি। গর্ভাবস্থায় শরীরের বাড়তি ওজন যে কত ক্ষতিকারক, তার গল্পটা শুনলেই বোঝা যাবে।



শোনা যাক, গর্ভাবস্থায় বাড়তি ওজনের কারণে প্রায় মরতে বসেছিল আমার অনাগত সন্তান বেলা। গর্ভসঞ্চারের ১৫ সপ্তাহে পাঁচ ফুট লম্বা লেইলার ওজন বেড়ে গিয়েছিল প্রায় কয়েকগুণ। শরীরের বিএমআই অর্থাৎ বডি মাস ইনডেক্সের অস্বাবিকতার জন্য ডাক্তাররা দ্রুত অস্ত্রোপচার করার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু সেখানেও সমস্যা দেখা দিল।

লেইলার মেরুদণ্ড ও স্পা‌ইনাল ফ্লুইডের মাঝে এপিডিওর্যাল প্রবেশ করানোর মতো কোনো ফাঁকা জায়গা ছিল না। এপিডিওর্যাল হচ্ছে এক ধরনের পাতলা টিউব যার মাধ্যমে ব্যথা নিরোধক ওষুধ শরীরে প্রবেশ করানো হয়। ফলে ডাক্তাররা অ্যানেস্থেসিয়া দেওয়ার জন্য ইঞ্জেকশন দিতে ব্যর্থ হন। তাই তাকে পেইন কিলার দেওয়া হয়। ২০১২ সালের জুলাইতে নানা ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে জন্ম হয় লেইলা মঞ্জির প্রথম সন্তান বেলার। এসব কারণে বেলার স্বাভাবিক শ্বাস-প্রশ্বাস ব্যাহত হয় ও পরবর্তীতে তাকে অক্সিজেন দেওয়ার প্রয়োজন পড়ে।


এত ধকল সামলে নেওয়ার পর ২৯ বছর বয়সী লেইলা ওজন কমানোর সিদ্ধান্ত নেন।

এ বিষয়ে ইংল্যান্ডের ডার্বিবাসী লেইলা জানান, জন্মের সময় নরকযন্ত্রণা পেয়েছে আমার বেলা। সে মারাও যেতে পারতো।

ডাক্তাররা বলেছিলেন, তাদের দেখা নবজাতকদের মধ্যে বেলার অবস্থা ছিল সবচেয়ে করুণ। তারা ভেবেছিলেন, বেলাকে বাঁচানো সম্ভব হবে না, কারণ তার হৃদপিণ্ড ও কিডনির ক্রিয়া বন্ধ হয়ে গিয়েছিল।

আবেগী সুরে লেইলা বলেন, সে আমার প্রথম সন্তান। তাকে এভাবে হারিয়ে যেতে দেওয়া আমার জন্য মোটেও সুখকর হতো না।



বিশেষজ্ঞদের মতে, কারো বিএমআই যদি মাত্রাতিরিক্ত হয় তাহলে অ্যানেস্থেসিয়া দেওয়ার জন্য সঠিক স্থান খুঁজে পাওয়া মুশকিল। আর অ্যানেস্থেসিয়া দেওয়ার পরও তা কার্যকর হওয়া নিয়ে যথেষ্ট শঙ্কা থেকে যায়। এছাড়াও এর নেতিবাচক প্রভাব সিজারিয়ান শিশুদের উপর পড়ে। বেলার ক্ষেত্রে ঠিক যেমন হয়েছিল।

বেলার জন্ম হয় রয়েল ডার্বি হাসপাতালে। অবস্থার অবনতির জন্য তাকে উত্তর যুক্তরাজ্যের শেফিল্ডে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে দুই সপ্তাহ লাইফ সাপোর্ট দেওয়া হয় তাকে। অবস্থার কিছুটা উন্নতি হলে আবার নিয়ে আসা হয় রয়েল ডার্বিতে।

লেইলা তার গর্ভসঞ্চারের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সব প্রতিকূল অবস্থার জন্য নিজের অতিরিক্ত ওজনকেই দায়ী করেন।

বললেন, শুরুতেই আমার ডাক্তার আমাকে বলেছিলেন, এই ওজন পরবর্তীতে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। অতিরিক্ত চাপের ফলে গর্ভস্থ শিশু নিচের দিকে নেমেও যেতে পারে।

শুধুমাত্র এ ঘটনাই নয়। বাড়তি ওজনের কারণে লেইলাকে শুনতে হয়েছে আশেপাশের মানুষের নেতিবাচক মন্তব্য ও কটুক্তি। তবে এত কিছুর পর লেইলা দমে যাননি। নিজেকে বদলে দেবেন বলে তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন। প্রসবের আট সপ্তাহ পরেই হয়ে উঠলেন নতুন নারী।

তিনি বলেন, আমি বেলাকে নিয়ে খুব চিন্তিত ছিলাম কিন্তু সে তুলনামূলক খুব দ্রুতই সেরে উঠেছে।

নিজের নতুন শারীরিক গঠন নিয়ে লেইলার উক্তি, আমার ওজন সত্যিই নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গিয়েছিল। আমাকে দেখে মনেই হয় না, আমি কখনো এত মোটা ছিলাম!

বাংলাদেশ সময়: ০১০২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।