ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ফিচার

পাখিদের শীতযাপন

সানজিদা সামরিন, ফিচার রিপোর্টার | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩০৮ ঘণ্টা, মার্চ ৬, ২০১৫
পাখিদের শীতযাপন

ঢাকা: একদিন ঘুম থেকে উঠে দেখলেন, আপনার বারান্দার সিলিংয়ে বাসা বেঁধেছে চড়ুই পরিবার। রোজ ভোরবেলায় তাদের পারিবারিক আলাপে আপনার ঘুম ভাঙছে।



বারান্দায় এসে তাকাতেই দেখলেন, চাদর জড়িয়ে ধোঁয়া ওঠা কফি মগ হাতে নিয়ে গল্পে মেতেছে চড়ুই দম্পতি। ছানারাও বসে নেই, কিচির-মিচির করে অস্থির।

কী, চোখ নিশ্চয়ই এতক্ষণে চড়কগাছ!


কথা হচ্ছে, শীতের দিনগুলোতে আমরা যদি এতটা কাতর হই, তাহলে পাখিরা কেন নয়! তারা তো সোয়েটার-চাদরও পরে না, কিন্তু শীত বলে কথা, কাঁপুনি তো হবেই!

শর‍ৎ এলেই পাখিরা পাড়ি জমায় উষ্ণ কোনো এলাকায়। আবার কিছু প্রজাতির পাখি সারাবছর অপেক্ষাই করে শীত মৌসুমের জন্য। কিন্তু প্রশ্ন উঁকি দেয়, কিভাবে তারা সহ্য করে শীতের তীব্রতা। সেটাই জেনে নেওয়া যাক।


আমাদের মতো পাখিরাও উষ্ণ রক্তবিশিষ্ট প্রাণী। অর্থাৎ তাদের শরীর সবসময় একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ তাপমাত্রা ধরে রাখে। পাখিদের শরীরের তাপমাত্রা ১৬০ ডিগ্রি ফারেনহাইট। শীতের প্রকোপ থেকে বাঁচতে আমরা উলের জামা পরি, কিন্তু পাখিরা তা পরে না। উলের জামা না পরলেও তারা নিজেদের শরীরকে গরম রাখার জন্য কিছু কৌশল অবলম্বন করে।


চড়ুই পাখি শীত এড়াতে তাদের বাসার ভেতর পরিবারের সবাই একসঙ্গে জড়োসড় হয়ে থাকে। এছাড়াও ডানা দিয়ে তারা ঢেকে রাখে মাথা ও পা।


অন্যদিকে কার্ডিনাল বেশ আনন্দের সঙ্গেই বরফ পড়ার দৃশ্য দেখে। ছোট পাখিরা শরীরকে ফুলিয়ে ছোট বলের মতো করে রাখে যাতে শরীরের ভেতরকার গরম বাইরে বেরিয়ে না যায়।


এ বিষয়ে ইউনিভার্সিটি অব সাউথ ডাকোটার শরীরতত্ত্ববিদ ডেভিড সোয়ানসনের মত, হাঁসের মতো বড় পাখিরা আমাদের মতোই শীত নিবারক ব্যবহার করে। তাদের এ শীত নিবারক মূলত অতিরিক্ত গজানো লোম। পাখিরা শরীরে চর্বি জমিয়ে তা শীত নিবারক তথা শক্তির যোগান হিসেবে ব্যবহার করে।


পাখিদের মধ্যে ১০ ভাগই শীতকালে তাদের শরীরে চর্বি জমায়। এদের মধ্যে ফিঙে অন্যতম। আর এ চর্বি জমাতে তারা সারাদিন চর্বিযুক্ত খাবারের সন্ধান করে।


শীতে কোন পাখিটি সবচেয়ে বেশি কঠিন সময় পার করে জানতে চাইলে সোয়ানসনের চটজলদি উত্তর, ব্ল্যাক ক্যাপড চিকেডি। অন্যান্য পাখিদের মতো তারা শরীরে তাপ জমা করতে পারে না বলে শীতকালে এরা খুব একটা সুবিধা করে উঠতে পারে না। বরং কনকনে শীতে ঠকঠক করে কাঁপতে থাকে।


অন্যদিকে সী-গাল অত্যন্ত সাহসী একটি পাখি। শীতে তার কোনো পরোয়া নেই। বরফের ওপর দিব্যি সে হেঁটে বেড়ায়। কখনো হিম শীতল বরফ সাগরের ওপর দিয়েও উড়ে বেড়ায়।


যেহেতু সূর্যই পাখিদের উষ্ণতা পাওয়ার একমাত্র মাধ্যম, তাই রাতে তুষারপাত হলে বেশকিছু পাখিকে একটু অসুবিধাতেই পড়তে হয়। তবে কিছু পাখি শরীরের ভেতরের তাপসংস্থাপক ব্যবহার করে ধরে রাখে সারাদিনের উষ্ণতা। হামিংবার্ড খুব সহজেই বাইরের পরিবেশের উষ্ণতাকে শরীরের ভেতরে নিতে পারে।

আবার শীত কমাতে খাবারের প্রতিও বিশেষ নজর দেয় ফিঙে ও ব্লাক খ্যাপারস পাখিরা। এসময় তারা সূর্যমুখীর বীজ খুঁজতে নেমে পড়ে সপরিবারে।
 
বাংলাদেশ সময়: ০৩০৭ ঘণ্টা, মার্চ ৬, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।