ঢাকা, শনিবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ফিচার

সিংহ শাবকের পুরুষ মা!

মফিজুল সাদিক, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১০১ ঘণ্টা, অক্টোবর ১০, ২০১৫
সিংহ শাবকের পুরুষ মা! ছবি: জি এম মুজিবুর / বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক থেকে ফিরে: চিকিৎসা কেন্দ্রে ৩টি সিংহ শাবক। তাদের নিয়ে যেন খেলায় মেতেছেন এনিমেল কিপার নুরুন নবী মিন্টু।

তার জন্ম কক্সবাজারের ডুলহাজরায়। প্রায় এক যুগ ধরে পশু পালন পেশায় নিয়োজিত তিনি।
 
মিন্টুর ভালোবাসর কাছে বশ মেনেছে বনের পশু। সিংহের শাবক ৩টির মধ্যে একটি মাথার উপরে, আর একটি শরীরের উপরে বসে খেলা করছে। অপরটি আবার জিহ্বা দিয়ে মিন্টুর শরীরে বুলিয়ে দিচ্ছে মমতার পরশ। বাচ্চা ৩টিকে গুঁড়া দুধ খাওয়াচ্ছেন তিনি।
 
সাফারি পার্কে যেনো সিংহের বাচ্চাগুলোর মায়ের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন মিন্টু।
 
দুই মাস ২০ দিন আগে এই সাফারি পার্কেই জন্ম নিয়েছিল বাচ্চা ৩টি। কিন্তু মাকেসহ তাদের প্রতিনিয়ত আক্রমণ করছিল পুরুষ সিংহগুলো। একটি বাচ্চা ইতোমধ্যে আক্রমণের শিকারও হয়েছে।

তারপরই বাচ্চা ৩টিকে আলাদা করে বন্য প্রাণী চিকিৎসা কেন্দ্রে রাখা হয়। কারণ অনেক সময় শাবকদের মেরে ফেলে পুরুষ সিংহ।

মাস খানেক বন্য চিকিৎসা কেন্দ্রে পরিচর্যার পর ফের বাচ্চাগুলোকে তাদের মায়ের কোলে ফিরিয়ে দেয়ার উদ্যোগ নিয়েছিলো পার্ক কর্তৃপক্ষ। কিন্তু সেই উদ্যোগ সফল হয়নি। মাস খানেক পর বাচ্চা তিনটিকে আর গ্রহণ করেনি তাদের মা।
 
মিন্টুই এখন ২৪ ঘণ্টা দেখভাল করছে তাদের। পদ্মা, মেঘনা ও যম‍ুনা নামও মিন্টুরই রাখা। নাম ধরে ডাকলেই শাবকগুলো দৌড়ে চলে আসে মিন্টুর কাছে।
 
দুই মাস বয়স পযর্ন্ত শুধু থাইল্যান্ড থেকে কেনা গুঁড়া দুধ খেয়েছিল পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা। এখন প্রতিদিন সকাল ১১টায় গরু ও মুরগির মাংস খাওয়ানো হয়। এছাড়া প্রতি দুই ঘণ্টা পর পর তাদের গুঁড়া দুধ খাওয়ান মিন্টু।
 
পদ্মা মেঘনা ও যমুনার পরিচর্যা প্রসঙ্গে বাংলানিউজকে মিন্টু বলেন, জন্মের পর থেকেই দুধ খাওয়ানো থেকে শুরু করে এদের আদর যত্ন দিয়ে বড় করছি। আমার পায়ের আওযাজ পেলেই ওরা আমার কাছে ছুটে আসে। নাম ধরে ডাকলেই কোলে উঠার চেষ্টা করে। ঘাড়ের উপরেও উঠে বসে।
 
সিংহ শাবকগুলোকে খাবার খাওয়ানো প্রসঙ্গে মিন্টু বলেন, দুই মাস বয়সের পর থেকে প্রতিদিন সকাল ১১টার সময় গরু ও মুরগির মাংস দিতে হয়। এছাড়া দুই ঘণ্টা পর পর গুঁড়া দুধ খাওয়াতে হয়। নিজে নাস্তা না করে এখন তাদের খাবার খাওয়াতে ভালো লাগে। গভীর রাতে উঠেও তাদের খাবার দিতে হয়।
 
শাবক ৩টির চিকিৎসা করছেন সাফারি পার্কের সহকারী ভেটেরিনারি অফিসার ডা. হাতেম মোহাম্মদ জুলকার নাইন।
 
বাংলানিউজকে তিনি বলেন, সিংহের বাচ্চা ৩টিকে ৬ মাস পর্যন্ত হাসপাতালে রাখা হবে। এর পরে এরা ঝুঁকিমুক্ত হবে। পরে আমরা অন্য সিংহের দলের মধ্যে কয়েক ঘণ্টা করে ছেড়ে দেবো। এর পরেও গভীর পর্বেক্ষণে রাখবো। যতদিন এরা ভালো মতো সিংহের দলে ফিরতে না পারবে ততদিন এদের গভীর পর্যবেক্ষণে রাখবো। তবে সিংহ দল বেঁধে ঘুরতে ভালোবাসে।
 
চিকিৎসা কেন্দ্রে নিয়ে আসা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, দলের মধ্য থেকে না নিয়ে এলে বাচ্চাগুলোকে হারাতে হতো। এর পাশাপাশি এদের মায়েরাও আক্রমণের শিকার হতো। কারণ অনেক সময় পুরুষ সিংহ বাচ্চাদের মেরে ফেলে। তবে বাচ্চা তিনটির মায়ের অভাব মিন্টু কিছুতেই বুঝতে দেয় না। প্রাকৃতিকভাবেই যেন মিন্টুর সঙ্গে বাচ্চা তিনটির গভীর মিতালী তৈরি হয়েছে।
 
আজ থেকে প্রায় চার বছর আগে দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে ১৩টি সিংহ-সিংহী আনা হয়েছিল বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে। যখন আনা হয় তাদের বয়স ছিল গড়ে ১৮ মাস করে। সম্প্রতি পাঁচটি সিংহী বাচ্চা দিয়েছে।
 
বাচ্চা তিনটিকে কেউ দেখতে চাইলে দর্শনার্থীর শরীরে জীবানুনাশক ওষুধ নিজ হাতে স্প্রে করে দেন মিন্টু।   বাচ্চা ৩টি যতে কোনো রোগে আক্রান্ত না হয় সে জন্যই মিন্টুর এতো সাবধানতা।
 
তাদের দেখতে চাইলে চলে যেতে পারেন বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে। বন্য প্রাণীকে বনের মুক্ত পরিবেশে দেখার স্থান এই পার্ক। ঢাকা থেকে মাত্র ৪০ কিলোমিটার উত্তরে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের পাশে বাঘের বাজার। সেখান থেকে তিন কিলোমিটার পশ্চিমেই এই সাফারি পার্ক।

বাংলাদেশ সময়: ১০৪২ ঘণ্টা, অক্টোবর ১০, ২০১৫
এমআইএস/জেডএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।