ঢাকা, শনিবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ফিচার

হারায়নি শৈশব মাতানো ডাংগুলি

এম.আব্দুল্লাহ আল মামুন খান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪২৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৮, ২০১৬
হারায়নি শৈশব মাতানো ডাংগুলি ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

জোরবাড়িয়া, ফুলবাড়িয়া, (ময়মনসিংহ) থেকে ফিরে : শৈশবে ডাংগুলি খেলেননি এমন মানুষ নেহায়েতই কম। এখনকার শহুরে শৈশব জীবনের সঙ্গে একেবারেই অপরিচিত গ্রাম বাংলার জনপ্রিয় এ খেলা।

গ্রামীণ ঐতিহ্যের এ খেলা এখন বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। আধুনিকতার দাপটে এ খেলার অস্তিত্বও খুঁজে পাওয়া বেশ কঠিন।

তবে গ্রাম-গঞ্জের কোথাও না কোথাও এখনো চোখে পড়ে গ্রামীণ জীবনে শৈশব মাতানো এ লোকজ খেলা। ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার জোরবাড়িয়া উত্তর মধ্যপাড়া গ্রামে এক বাড়ির আঙিনায় এক চিলতে জায়গায় প্রায় হারিয়ে যাওয়া ডাংগুটি খেলায় মেতে উঠতে দেখা গেলো একদল শিশুকে।

মন-প্রাণ মাতানো এ খেলার মধ্য দিয়ে দুরন্ত শৈশবে নিজেদের শেকড়ের প্রতীকও যেন হয়ে উঠেছে এসব শিশু। বাঙালির স্বকীয়তা ও ঐতিহ্য ধরে রাখতেই সরকারিভাবেই ডাংগুলির মতো হারিয়ে যাওয়া গ্রামীণ খেলাগুলো টিকিয়ে রাখা প্রয়োজন বলে মনে করেন অনেকেই।

গ্রামীণ ক্রীড়া সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য ডাংগুলি খেলা একদা গ্রামবাংলার ডানপিঠে, দুরন্ত শিশু-কিশোরদের মধ্যে ছিল জনপ্রিয়। বয়স্ক লোকদের কাছে ডাংগুলি এখনো শৈশব স্মৃতি। গ্রাম-গ্রামান্তরে ক্রিকেট পৌছে যাওয়ায় ডাংগুলি, কানামাছি, দাঁড়িয়াবান্ধা, বৌচি, এক্কাদোক্কা, গোল্লাছুটসহ হরেক রকমের খেলার প্রচলন হ্রাস পাচ্ছে।

বৃহস্পতিবার (০৪ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে ফুলবাড়িয়া উপজেলার জোরবাড়িয়া মধ্যপাড়া গ্রামে এবড়ো-থেবড়ো মাটির সড়কের পাশে বাড়ির আঙিনায় উচ্ছল মনে একঝাঁক শিশুকে মেতে উঠতে দেখা গেলো ডাংগুলি খেলায়। নিত্যদিন এখানে ডাংগুলি খেলেন ইয়াছিন, শরীফ, জিহাদ, সাকিবুল, বিপ্লবসহ ৭ থেকে ৮ জন শিশু। তাদের গড় বয়স ৬ থেকে ৭ বছর।

দু’দলে ভাগ হয়ে মাটিতে ছোট গর্ত করে গুটি হিসেবে বসানো হয়েছে কলম। তার উপর দিয়ে চালানো হচ্ছে ডাং’র আদলে কঞ্চি। গর্তে রাখা কলমের নিচে ডাং রেখে সজোরে হাঁকানো হয় গুটি। এ সময় কেউ গুটি ক্যাচ ধরে ফেললেই আউট।

আবার যদি প্রতিপক্ষ গুটি ধরতে না পারে তবে সেখান থেকে নিক্ষেপ করে ডাং টুকতে পারলে মারার সুযোগ পায়। এ সুযোগ বঞ্চিত হলে তখন কী, জানতে চাইলে শিশু বিপ্লব জানায়, ডাং দিয়ে গুটিকে তিন বার বাড়ি দিয়ে দূরে পাঠানো হয়।

এমন সময় গুটিকে শূন্যের মধ্যেই ডাং দিয়ে আঘাত করতে পারলে অতিরিক্ত পয়েন্ট পাওয়া যায়। পাশেই দাঁড়ানো জিহাদ বিপ্লবের সঙ্গে যোগ করে বলে, গুটি যেখানে গিয়ে পড়বে সেখান থেকেই ডাং দিয়ে গুণে গুণে গর্ত পর্যন্ত আনা হয়।

এভাবে পয়েন্ট বেশি যার, সেই এ খেলায় ফার্স্ট’।

বিপ্লব স্থানীয় একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী।

জিহাদ ও বিপ্লবের সঙ্গে কীভাবে ডাংগুলি খেলা হয় এমন আলাপচারিতার সময়েই ‘এই লাইগ্যা পড়ছে’ বলে উল্লাস করতে শুরু করলো কচিকাঁচারা। কোলে ছোট ভাইকে নিয়ে উল্লাসে মেতে উঠলো সোনিয়াও। এ ক্ষুদে শিক্ষার্থীর প্র্রাণবন্ত হাসি মুখে যেন গ্রাম বাংলার চিরন্তন রূপ ফুটে উঠলো।

আনন্দে ডাংগুলি খেলায় মত্ত ইয়াছিন ও শরীফ জানান, তারা নিয়মিতই ডাংগুটি খেলেন। বড়দের কাছ থেকে তারা এ ডাংগুলি খেলা শিখেছেন। এ খেলা খেলতেই তাদের ভাল লাগে।

অনেকটাই হারাতে বসা গ্রামীণ ঐতিহ্যের জনপ্রিয় ডাংগুলি খেলা সম্পর্কে স্থানীয় বাসিন্দা অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আব্দুর রাজ্জাক জানান, শহুরের শিশু-কিশোরররা এ খেলার সঙ্গে পরিচিত নয়। গ্রাম থেকেও হারিয়ে যাচ্ছে এ খেলা। বেশিরভাগ শিশু-কিশোর এখন আর এ খেলার বিষয়ে মোটেও আগ্রহী না।

একই বিষয়ে স্মৃতিচারণ করে স্থানীয় বাসিন্দা প্রেসক্লাব ময়মনসিংহের সাধারণ সম্পাদক মো: শামসুল আলম খান বলেন, আগে গ্রামে জমজমাটভাবে ডাংগুলি খেলা আয়োজন হতো। অথচ সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগের অভাবে এখন ডাংগুটির মতো গ্রামীণ খেলাগুলো হারিয়ে যেতে বসেছে।

এসব খেলার জায়গা দখল করে নিচ্ছে ক্রিকেট কিংবা ফুটবল। শিশু-কিশোরদের পরিপূর্ণ মানসিক বিকাশের জন্যই এ খেলাগুলো টিকিয়ে রাখা প্রয়োজন, যোগ করেন বিশিষ্ট এ সাংবাদিক।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৩০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৮, ২০১৬
জেডএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।