ঢাকা, শনিবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ফিচার

ফুল চাষে ভাগ্যবদল

এম. আব্দুল্লাহ আল মামুন খান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭৩০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১০, ২০১৬
ফুল চাষে ভাগ্যবদল ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ময়মনসিংহ : ব্রহ্মপুত্র নদের ওপাড়ে চর জেলখানা। সেখানকার এক বসত বাড়ির আঙিনায় ঢুকলেই নানান ফুলের ঘ্রাণ ভরিয়ে দেয় মন।



ময়মনসিংহ শহরের কাছে এ গ্রামেই ফুল চাষের গোড়াপত্তন করেছেন রামকরণ বীন। ষাটোর্ধ্ব এ চাষি রঙিন ফুলের মতোই বদলেছেন জীবনের রঙ।

নিজের বাড়ির আঙিনায় গড়ে তুলেছেন চোখ জুড়ানো ফুলের বাগান। তার বাগানের নানা রঙ ও বর্ণের ফুলের চাহিদাও বছরজুড়ে।

শুধু অভিজ্ঞতাকে পুঁজি করে ফুল চাষে সংসারে স্বচ্ছলতা ফিরিয়ে আনার পাশাপাশি ভাগ্যবদল করেছেন। তার সাফল্য দেখে স্থানীয় অনেকেই ফুল চাষে অনুপ্রাণিত হয়ে উঠেছেন। পাল্টে যেতে শুরু করেছে এ গ্রামের দৃশ্যপট।

স্থানীয় সড়ক ও জনপথ বিভাগে (সওজ) এক সময় মালির কাজ করতেন রামকরণ। চাকরি করেছেন ৩৫ বছর। কর্মজীবন থেকে অবসর নেওয়ার পর সংসারের খরচ চালাতে হিমশিম খাচ্ছিলেন।

একমাত্র সন্তানের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে নিজের বাড়ির আঙিনায় শুরু করেন সবজি চাষ। কিন্তু সফল হতে পারেননি।

হঠাৎ একদিন মাথায় আসে চাকরি জীবনের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগানোর চিন্তা। ব্যাস, যেই চিন্তা সেই কাজ। ২০০৬ সালেই বাড়ির আঙিনায় স্বল্প পরিসরে শুরু করেন ফুলের চাষ।

সেই থেকেই বছরজুড়ে নানা রকমের ফুলের চাষ করে আসছেন তিনি। এখন ২০ শতাংশ জমিতে রয়েছে তার ফুলের বাগান।

রামকরণের ছোট্ট এ ফুলের সাম্রাজ্যে রয়েছে ডালিয়া, গোলাপ, গাঁধা, চন্দ্রমল্লিকা, ফলপদ্ম, কছমছ, মেরিগুল, জিনিয়াসহ ৮ থেকে ৯ প্রকারের ফুল। রামকরণ প্রতিদিন ভোরে ঘুম থেকে উঠেই বাগান থেকে ফুল তোলেন বিক্রির জন্য।

তার স্ত্রী বাস্তনীও জড়িয়ে পড়েছেন ফুল বিক্রির কাজে। স্থানীয় পৌর সুপার মার্কেটে প্রতিদিন সকালে ফুল বিক্রি করেন তিনি।

পঞ্চাশের কোটায় তার বয়স। প্রতিদিন মাত্র ঘণ্টা দু’য়েক সেখানে ফুল বিক্রি করে দুই থেকে আড়াইশ’ টাকা উপার্জন হয়। আর প্রতিমাসে ফুল বিক্রি করে তারা আয় করেন ৯ থেকে ১০ হাজার টাকা। এ টাকা দিয়েই চলে তাদের সংসার ও একমাত্র সন্তান জয়বীনের পড়াশুনার খরচ।

২৯ জানুয়ারি (শুক্রবার) বিকেলে ময়মনসিংহ নগরীর জয়নুল উদ্যান পার্ক ঘেঁষা ব্রহ্মপুত্র নদ পেরিয়ে স্থানীয় খাগডহর ইউনিয়নের চর জেলখানা এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, নিজ ফুল বাগানের পরিচর্যায় ব্যস্ত রামকরণ বীন।

আলাপচারিতায় জানান, এ বাগান শুরু করা ও অভাব থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প। রামকরণ বলেন, বাজারে প্রতি পিস ডালিয়া বিক্রি হয় ২ থেকে ৩ টাকা দরে। আর সরাসরি ক্রেতারা বাগানে চলে এলে একটু-আধটু বেশি দাম মেলে।

তবে শীতের কুয়াশায় গাঁধা ফুল নষ্ট হয়ে যাওয়ার কথা বলতে গিয়ে বিষণ্ন হয়ে ওঠে তার মন।

রামকরণের দৃষ্টিনন্দন ফুলের বাগান হাতছানি দিয়ে ডাকে নদের পাড়ে ঘুরতে আসা দর্শনার্থীদেরও। এতে করে অনেক সময় বিড়ম্বনার মুখে পড়তে হয় তাকে।

তবে এ নিয়ে দুঃখবোধ নেই তার। বললেন, ফুলের বাগানে এলে সবাই ছবি তুলবার চায়। আমিও না করি না।

ফুল চাষে তার স্বাবলম্বী হয়ে ওঠা দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে গড়বিন, বানুসহ এ গ্রামের আরো অনেকে ফুল চাষে নেমেছেন। তাদের বাড়ির আঙিনায়ও চোখে পড়ে ছোটখাটো ফুলের বাগান।

তবে রামকরণ আক্ষেপ করে বলেন, আমার যদি আরো জায়গা থাকতো তাহলে আমি জমজমা (জমজমাট) করে ফুলের চাষ করতে পারতাম। এজন্য সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা দাবি করেন তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ০৭১০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১০, ২০১৬
আরএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।