ঢাকা, শনিবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ফিচার

ছাই থেকে সোনা আহরণকারীরা ভালো নেই

খন্দকার সুজন হোসেন, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭৩০ ঘণ্টা, মার্চ ২, ২০১৬
ছাই থেকে সোনা আহরণকারীরা ভালো নেই ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

মানিকগঞ্জ: দেশের বেশিরভাগ মানুষই এখন বিদেশি ও মেশিনে তৈরি রেডিমেট পণ্যের প্রতি দুর্বল হয়ে পড়েছে। বাদ পড়েনি স্বর্ণ ও রুপার বিষয়টিও।

মানুষ এখন বাহারি নকশায় তৈরি বিদেশি স্বর্ণ-রুপার অলঙ্কারের প্রতি বেশি আগ্রহী। ছাই থেকে সোনা আহরণে আর আগের মতো আয় নেই। শুধুই বাপ-দাদার পেশাকে আঁকড়ে বেঁচে থাকার চিন্তা।

অনেকটা খেদ নিয়েই এমন কথা বলছিলেন মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলার চারিগ্রাম এলাকার বাসিন্দা ছাই থেকে স্বর্ণ আহরণকারী মহিউদ্দিন মিয়া (৩৫)।

রোববার (২৮ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে চারিগ্রাম এলাকায় গিয়ে এ বিষয়ে আলাপ হয় মহিউদ্দিন মিয়াসহ আরো কয়েকজনের সঙ্গে।

চারিগ্রাম ও প্রতিবেশী গোবিন্দল গ্রামের অধিকাংশ পরিবার এ পেশায় নিয়োজিত।

নিজেদের বর্তমান বেহাল অবস্থা আর অতীতের সুদিনের প্রসঙ্গ তুলে মহিউদ্দিন মিয়ার সঙ্গেই সুর মেলান চারিগ্রামের আমিনুর রহমান, সোহরাব মিয়া ও মোক্তার হোসেন।

আলাপকালে কারিগর লাভলু মিয়া জানান, ছাই থেকে স্বর্ণ ও রুপা তৈরির সাতকাহন।

তিনি জানান, স্বর্ণের দোকান থেকে সংগ্রহ করা উচ্ছিষ্ট ছাই থেকে স্বর্ণ বের করে আনতে বেশ কয়েকটি ধাপ অতিক্রম করতে হয়। প্রথমেই রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে স্বর্ণকারের দোকান থেকে ছাই কিনে আনা হয়।

পরে সেই ছাই কাঠের একটি পাত্রে (চার) নিয়ে পুকুরের পানিতে ভালো করে পরিষ্কার করে ছাই থেকে ময়লা-আবর্জনা ফেলে দেওয়া হয়।

তৃতীয় ধাপে পরিষ্কার করা ছাই ছোট ছোট করে মুঠি করে ভালো করে রৌদ্রে শুকানো হয়। রৌদ্রে শুকানো মুঠিগুলো কয়লার আগুনে পুড়িয়ে নিয়ে সীসার সঙ্গে মিশিয়ে ছোট আকারের টুকরো করা হয়।

পরের ধাপে সেই সীসার টুকরোগুলো ঢেঁকিতে ভেঙে একেবারে মিহি করে ফের ছাইয়ের মতো করা হয়। এবার সেই মিহি ছাইয়ের সঙ্গে চুন মিশিয়ে আবারো বিশেষভাবে তৈরি চুলায় পোড়ানো হয়।

সবশেষ ধাপে ওই পোড়ানো ছাই থেকে নাইট্রিক অ্যাসিড ব্যবহার করে স্বর্ণ ও রুপা বের করে আনা হয়।

কয়েক ধাপে এভাবে স্বর্ণ ও রুপা তৈরি করতে তাদের অন্তত মাসখানেক সময় লাগে বলে জানান লাভলু মিয়া।

তিনি জানান, প্রতিটি স্বর্ণের দোকান থেকে চুক্তির মাধ্যমে তারা ছয় মাস অন্তর অন্তর ছাই সংগ্রহ করেন। অনেকে নিজেরাই ছাই ক্রয় করা থেকে শুরু করে পুরো ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করেন। আবার অনেক ছাই ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ছাই কিনে আনেন।

চারিগ্রাম এলাকার মৃত নুর ইসলামের ছেলে মহিউদ্দিন জানান, ছাই থেকে স্বর্ণ বের করে আনার বিষয়টি পুরোই ভাগ্যের ওপর নির্ভরশীল। কেননা অনেক সময় ভালো দোকানের ছাই থেকে চাহিদার চেয়ে অনেক বেশি স্বর্ণ পাওয়া যায়। আবার অনেক সময় খরচের টাকা তুলে আনতেই হিমশিম খেতে হয়।

তিনি জানান, গত জানুয়ারি মাসে ৩৫ হাজার টাকা দিয়ে ১০ বস্তা ছাই সংগ্রহ করেছেন। এরপর ২৫ দিন ধরে নিয়মিত ৩ জন ও খণ্ডকালীন শ্রমিক নিয়ে তিনি স্বর্ণ তৈরির কাজ করেছেন। সবমিলিয়ে তার খরচ হয়েছে ৬৫ হাজার টাকার মতো। বিনিময়ে তিনি ওই ছাই থেকে প্রায় ২ ভরি স্বর্ণ ও ২১ ভরি রুপা পেয়েছেন।

একই এলাকার আরেক বাসিন্দা আমিনুর রহমান বলেন, এখন আর আগের মতো সহজেই অনেক ছাই সংগ্রহ করা যায় না। কারণ মানুষ এখন স্বর্ণের দোকান থেকে খুব কম স্বর্ণের অলঙ্কার তৈরি করান। সবাই এখন রেডিমেট ও বিদেশ থেকে আসা স্বর্ণের অলঙ্কারে আগ্রহী।

এছাড়া পরিবহন ব্যবস্থা ও শ্রমিকের খরচ অতিরিক্ত বৃদ্ধির কারণে ছাই থেকে স্বর্ণ আহরণের পেশাটি কোনোরকমে টিকিয়ে রেখেছেন বলে মন্তব্য করেন তিনি।

তবে প্রয়োজন মতো সরকারি সাহায্য ও সহজ শর্তে ঋণ দেওয়া হলে তারা এই পেশায় সুনামের সঙ্গে টিকে থাকতে পারবেন বলে দাবি তার।

বাংলাদেশ সময়: ০৭৩২ ঘণ্টা, মার্চ ০২, ২০১৬
এসআর/জেডএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।