ঢাকা, শনিবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ফিচার

রাঙাবালির তরমুজ, স্বাদে ভরপুর

রহমত উল্যাহ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭১৪ ঘণ্টা, মার্চ ২৭, ২০১৬
রাঙাবালির তরমুজ, স্বাদে ভরপুর ছবি: আনোয়ার হে‍াসেন রানা- বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: ‘ওজন ৫ থেকে সর্বোচ্চ ২৫ কেজি। টকটকে লাল।

স্বাদেও ভরপুর। শ্বশুরবাড়ি যাবেন, দু’চারটা নেওয়ার প্রয়োজন কি একটা হলেই যথেষ্ট। এটা রাঙাবালির তরমুজ। ’

রাজধানীর সবচেয়ে বড় তরমুজের বাজার কদমতলীতে পটুয়াখালীর রাঙাবালি থেকে আসা তরমুজের বর্ণনা দিলেন আড়তদার মো. জাহিদুল ইসলাম।

জাহিদুল ইসলামের ভাষ্যমতে, রাঙাবালির তরমুজের সুনাম দেশজোড়া। রাজধানীতে আসা বেশিরভাগ তরমুজই রাঙাবালির। সম্পূর্ণ বিষমুক্ত হওয়ায় চাহিদা বেশি। রাজধানী ছাড়াও সারাদেশে যায় রাঙাবালির তরমুজ।

গত ১৫ দিন ধরে এ তরমুজ আসছে, আরো ১৫ দিন আসবে। রাঙাবালির পর দিনাজপুর, খুলনাসহ বেশ কয়েকটি জেলার তরমুজ আসবে বলে জানান জাহিদ।

জাহিদের ভাষ্য, মিষ্টি ও সুস্বাদু হওয়ায় বড় আকারের এ তরমুজের প্রতি একশ’টি ১৫ হাজার টাকায় বিক্রি হয়। প্রতিটি ১৫ থেকে ২০ কেজি হবে। মধ্যম ও ছোট আকারেরও হয়। তার অধীনে রাঙাবালিতে প্রায় ৩০ জন চাষি রয়েছেন যারা তার দাদন নিয়েছেন।

দাদনের কারণে প্রতি একশ‘ টাকায় ১০ টাকা কমিশন দিতে হয়। যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো ও পুরোপুরি গরমের কারণে লাভ খুবই বলে যোগ করেন জাহিদুল ইসলাম।

কদমতলীতে প্রায় ৮০টি আড়ত রয়েছে। প্রতিদিন তার আড়ত এ প্রায় ৫ থেকে ১০ হাজার তরমুজ বিক্রি হয়। গড়ে সব আড়তে লক্ষাধিকের বেশি এ তরমুজ বিক্রি হয় বলে জানায় জাহিদ।

ব্যাপারী নজরুল ইসলাম যোগ করে বলেন, দিনে এনে দিনেই বিক্রি করে চলে যাই। যারা একবার রাঙাবালির তরমুজ খেয়েছেন তারা এই তরমুজই বারে বারে খোঁজে।

এই তরমুজে কোন প্রকার ক্ষতিকর রাসায়নিক ব্যবহার করা হয় না। এজন্য ১০ দিন থাকলেও এ তরমুজ তেমন নষ্ট হয় না। তবে ২৪ ঘণ্টার আগেই বিক্রি হয়ে যায়।

ফলন ও ভালো দাম পাওয়ায় কৃষকরা খুবই খুশি। এবার চাহিদা বেশি, যোগান কম বলে দাবি করেন তিনি।

গভীর রাতে রাঙাবালি থেকে প্রায় ২ হাজার ৮শ‘ তরমুজ নিয়ে মো. শফিকুল ইসলামের আড়তে এসেছে একটি ট্রাক। ট্রাক থেকে তরমুজ খালাস করে ছোট, মাঝারি ও বড় আকারের গুলো বাছাই করে সাজাতে ব্যস্ত কর্মচারীরা।

মো. সাগর নামে একজন কর্মচারী বাংলানিউজ বলেন, ভোর হওয়ার আগেই শেষ হয়ে যাবে। বলা লাগে না, শুধু রাঙাবালির তরমুজ বললেই হলো।

বাজার ভালো হওয়া বড় আকারের একশ’ তরমুজ ১৫ হাজার, মাঝারি ৯ হাজার ও ছোট ৫ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এবার ফলন ও দাম দুটোই ভালো বলে জানান সাগর।

স্বাদ ও এত বড় আকারের তরমুজ কোন জেলায় হয় না। এজন্য চাহিদা বেশি। ট্রাকে কিছুটা নষ্ট হলেও লঞ্চ, কার্গোয় আনলে নষ্ট কম হয়। এতে কৃষক লাভবান হয় বলে জানান তিনি।

কলাবাগান এলাকার পাইকার মো. আরিফুল হাসান বাংলানিউজকে বলেন, প্রতিদিন দু’শ পিছের বেশি বিক্রি হয়, শুধু রাঙাবালির তরমুজ বলে। রাঙাবালির তরমুজে লাভ বেশি, নষ্ট বা ঝুঁকি কম।

গভীর রাতে কদমতলী এলাকা ঘুরে দেখা যায়, রাঙাবালির তরমুজ নিয়ে একের পর এক ট্রাক আসছে। ব্যাপারীদের সহায়তায় আড়ত কর্মচারীরা তরমুজ নামাতে আর সাজাতে ব্যস্ত।

ট্রাক ছাড়াও লঞ্চ, কার্গো থেকে ছোট নৌকা বোঝাই করে ঘাটে এনে রাখা হয়েছে। যেসব তরমুজ সামান্য ফেটে গেছে সেগুলোর দাম অর্ধেক। সেগুলো খুচরা বিক্রেতারা কিনে নিচ্ছে।

চড়া দামের কারণে খুব কম তরমুজই ফেলে দেওয়া হচ্ছে। পুরো কদমতলী এলাকার আড়তগুলোতে তরমুজ ছাড়া কিছুই দেখা যায় না। ভোর হওয়ার আগেই জমে উঠেছে বিকিকিনি।

বাংলাদেশ সময়: ০৫২১ ঘণ্টা, মার্চ ২৭, ২০১৬
আরইউ/আরআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।