ঢাকা, রবিবার, ১৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ফিচার

‘ওস্তাদ হেলিকপ্টার চালায়’

এম. আব্দুল্লাহ আল মামুন খান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১২৯ ঘণ্টা, মার্চ ৪, ২০১৭
‘ওস্তাদ হেলিকপ্টার চালায়’ ‘ওস্তাদ হেলিকপ্টার চালায়’-ছবি- অনিক খান

ময়মনসিংহ: ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার শক্ত হ্যান্ডেল কচি হাতে ধরে শৈশব বিসর্জন দিয়েছে রাহাদ (১২)। জীবন-জীবিকার টানে নগরীর এক মোড় থেকে আরেক মোড়ে এখন তার নিত্য ছুটে চলা। বছরখানেক হলো পাট চুকিয়েছে পড়াশোনার।

পরিবারের অসচ্ছলতা আর অভাবের তাড়নায় রাহাদকে এ বয়সেই হতে হয়েছে অটোরিকশা চালক! রোজকার অভাব-অনটনে জর্জরিত হয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রাহাদের পথ ধরেছে আলম। তার বয়সও ৮ বা ১০-এর কাছাকাছি।

রাহাদ যখন অটোরিকশার হ্যান্ডেল হাতে শহর দাপিয়ে বেড়ায় তখন পাশে বসে নিবিষ্ট মনে তাকিয়ে থাকে আলম। অটোরিকশা চালানোর নিয়ম-কানুন শিখে নিচ্ছে সে ‘ওস্তাদ’-এর কাছে।

কঠিন বাস্তবতার মুখে উপার্জনের চিন্তায় এ বয়সে তাকেও দু’দিন বাদেই হয়তো বসতে হবে চালকের আসনে। অটোরিকশা চালনাতে হাত না পাকিয়েই রাহাদ যখন বেপরোয়া গতিতে চালায় তখন ভীষণ ভয় পায় আলম।

স্মিত হেসে বলেই ফেললো, ওস্তাদ মনে হয় হেলিকপ্টার চালায়!

মায়ের হাত শক্ত করে ধরে রাখার বয়সে রাহাদ বা আলমের হাত অটোরিকশার হ্যান্ডেলে ধরা। বিষয়টি নতুন নয়। তাদের মতো আরও প্রায় দু’শতাধিক শিশু খেয়ে-পরে বেঁচে থাকার জন্যই এসেছে এ পেশায়।

কোনো কোনো ক্ষেত্রে পরিবারের উদাসীনতার কারণেও শিশু-কিশোররা আসছে এমন ঝুঁকিপূর্ণ কাজে।

নগরীর নতুন বাজার মোড় এলাকায় আলাপ হয় রাহাদ ও আলমের সঙ্গে। নতুন বাজার মোড় থেকে সানকিপাড়ার শেষ মোড় এলাকায় যাত্রী নিয়ে যাচ্ছিলেন তারা।

‘ওস্তাদ হেলিকপ্টার চালায়’-ছবি- অনিক খাননগরীর সানকিপাড়া প্রাইমারি স্কুল সংলগ্ন এলাকায় ট্রাক ও বিপরীত দিকে থেকে আসা অটোরিকশার মাঝখান দিয়ে কোনমতে বের হয় রাহাদ। আতঙ্কে চেঁচিয়ে ওঠেন যাত্রীরা। ভয় আর আতঙ্ক ফুটে ওঠে সবার চোখেমুখে।

রাহাদ ও আলম জানায়, তাদের বাড়ি নগরীর মাদরাসা কোয়ার্টার এলাকায়। কয়েক বছর হলো অটোরিকশা চালানো শিখেছে রাহাদ। ড্রাইভিংয়ের ন্যূনতম ধারণা বা ট্রাফিক আইন সম্পর্কে জ্ঞান না থাকলেও বাধ্য হয়েই এ পথে নামতে হয়েছে তাকে। পড়াশোনা করেছে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত। বইপত্র নিয়ে যখন তার বিদ্যালয়ে ছুটে যাওয়ার কথা তখন জীবনের এমন রুঢ় বাস্তবতা মেনে নিয়েছে ওরা।

ময়মনসিংহ পৌরসভা সূত্রে জানা যায়, পৌরসভা থেকে ৭৪৫টি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে। আর লাইসেন্সবিহীন অটোরিকশার সংখ্যা প্রায় ১০ হাজার।

২০১০ সালে সরকারি নিষেধাজ্ঞার পর আর কোনো লাইসেন্স দেওয়া হয়নি।

এর মধ্যে কমপক্ষে দু’শতাধিক শিশু অটোরিকশা ভাড়া নিয়ে নগরীর বিভিন্ন সড়কে চালিয়ে একেকজন হয়ে উঠেছে চালক।

আবার অনেকেই কিস্তিতে কেনা এ যানবাহন চালিয়ে মাসিক কিস্তি পরিশোধ করে একসময় মালিক হয়েছে।

রাহাদের মতো আনাড়ি চালকদের কারণেই নগরীতে ছোটখাটো দুর্ঘটনা ঘটছে বলে অভিযোগ করেন একাধিক যাত্রী। তারা বলেন, এসব শিশুরা ট্রাফিক আইন জানে না। চালক হিসেবে যেমন দক্ষতা নেই, তেমনি ড্রাইভিং লাইসেন্সও নেই। তবুও প্রশাসনের নাকের ডগায় শিশুরা অটোরিকশা চালাচ্ছে। আর এর সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে।

বাংলাদেশ সময়: ০৭২৫ ঘণ্টা, মার্চ ০৪, ২০১৭
এমএএএম/আরআর/জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।