ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ফিচার

আবার স্কুলে যেতে চায় ফারিয়া

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৪৩ ঘণ্টা, মার্চ ১৬, ২০১৭
আবার স্কুলে যেতে চায় ফারিয়া ফারিয়া-ছবি: বাংলানিউজ

ঢাকা: বুধবার রাতের বিভীষিকা কেড়ে নিয়েছে সব। বেলা বাড়ার সাথে সাথে ধ্বংস্তূপ সরিয়ে মাথা গোজার ঠাঁইখানি খুঁজে বের করার চেষ্টা করছেন কড়াইল বস্তিবাসী। দুঃস্বপ্নের শেষে আহাজারি, দীর্ঘশ্বাসে তখনো ভারী পুরো এলাকা।

তবে এতোসব হারানোর হিসেব নিকেষ বোঝে না শিশু ফারিয়ার মন। পরিবারের অন্যরা ঘরের ভিটে থেকে পোড়া স্তূপ সরিয়েছেন।

লোহা ও টিনের অবশিষ্ট অংশগুলো একপাশে রাখা। চারদিকের পোড়া ধ্বংসাবশেষের তাপের সাথে যোগ হয়েছে মাথার উপর কড়া সূর্যের তাপ।

সূর্যের তাপ থেকে বাঁচতে একটি পোড়া টিন দেয়ালের সাথে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে ফারিয়া। তার আড়ালে বসে আনমনে কিছু করে চলছে সে। বেলা সাড়ে তিনটার দিকে কাছে গিয়ে দেখা গেলো, পোড়া ভিটেতে একটি চামচ দিয়ে কী যেন লিখে চলেছে সে।

পাকা ফ্লোরে একাধিকাবার ফারিয়া লেখা দেখে বুঝতে বাকি নেই তার নাম ফারিয়া। ‘কোন ক্লাসে পড়?’--- জিজ্ঞেস করতেই তার উত্তর, ‘ক্লাস ওয়ানে’।

পাশেই স্থানীয় ‘মায়ের দোয়া’ নামক একটি স্কুলে পড়তো সে। ভয়াবহ আগুনে ফারিয়ার স্কুলটিও পুড়ে গেছে। কথা প্রসঙ্গে ফারিয়া বাংলানউজকে বলে, আগুনে আমার বই-খাতা সব পুইড়া গেছে। স্কুলডাও পুইড়া গেছে। এখন স্কুলে যাব কেমনে? কি পড়মু?
ফারিয়া
সাত বছরের শিশু ফারিয়ার বাবা ফিরোজ রাজমিস্ত্রীর কাজ করেন ও মা রাবেয়া গৃহিনী। ফিরোজ বাংলানিউজকে জানান, তার একমাত্র মেয়ে ফারিয়া লেখাপড়ায় অনেক মনযোগী। আগুনে মেয়েটার বই-খাতা পুড়ে গেছে এজন্য তার মন খারাপ। তার অনেক পছন্দের স্কুল ড্রেসটাও পুড়ে গেছে।

গায়ের একটা কাপড় ছাড়া আর কিছুই অবশিষ্ট নেই তাদের। তাই কী খাবে, কই থাকবে, কীভাবে চলবে এসব ভেবেই বার বার দীর্ঘশ্বাস ছাড়ছিলেন ফারিয়ার মা রাবেয়া।

একই এলাকার আরেক শিশু শারমিন আক্তার ও ফারজানা আক্তার। স্থানীয় পাঠশালা নামের স্কুলে ৪র্থ শ্রেণীতে পড়ে তারা। আগুন তাদের স্কুল কেড়ে না নিলেও কেড়ে নিয়েছে বই খাতাসহ সর্বস্ব।

শারমিন আক্তার জানায়, স্কুলে যেতে তার ভালো লাগে। নিয়মিত স্কুলে যায়ও সে। স্কুলের শিক্ষকরা এসেছিল তাদের দেখতে। তারা শনিবার থেকে স্কুলে যেতে বলেছে। এখন বই-খাতা পোশাক ছাড়া কীভাবে স্কুলে যাবে জানে না সে।

শারমিন ও ফারজানাদের মতো কড়াইল বস্তির আরো অনেক শিশুরই হয়তো ভালো লাগে স্কুল। কিন্তু সব হারিয়ে নিরুপায় তারা। সুযোগ পেলেই হয়তো তাদের হাতে আবার উঠবে হারানো প্রিয় বই।

বুধবার (১৫ মার্চ) দিবাগত রাত ২টা ৫০ মিনিটে কড়াইল বস্তির বউবাজারের বড় মসজিদ সংলগ্ন দোতলা একটি বাসায় আগুনের সূত্রপাত। ফায়াস সার্ভিসের ১৮টি ইউনিটের কর্মীদের পাঁচ ঘণ্টার চেষ্টায় মধ্যরাতে লাগা ভয়াবহ এ আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে বৃহস্পতিবার (১৬ মার্চ) সকাল পৌনে ৮টায়। ততক্ষণে প্রায় দুই হাজার বাড়ি পুড়ে ছাই হয়ে যায়। কিছু বুঝে ওঠার আগেই নিঃস্ব হয়ে যায় হাজারো বস্তিবাসী।

বাংলাদেশ সময়: ০২৪১ ঘণ্টা, মার্চ ১৭, ২০১৭
পিএম/জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।