মা গত হয়েছেন ২৭ বছর। কিন্তু আজও প্রায় প্রতিটি সকাল তাকে মনে করেই শুরু হয়।
যখন স্কুলে পড়তাম, তখন আম্মা আমাদের মাঝে ছিলেন। সকালে স্কুলে যাওয়ার আগে আমি ও আম্মা নাস্তা বানাতাম। আমি রুটি বেলে দিতাম আর আম্মা তা ভেজে নিতেন। সেসময় আমাদের মধ্যে কতো ধরনের সাংসারিক আলোচনা হতো।
আজ মা নেই। কিন্তু আছে তার স্মৃতি- যা কখনো হারিয়ে যায়নি, যাবেও না। আমরা ৫ বোন এবং ২ ভাই। ভাইয়েরা সবার ছোট। তাই আম্মা আমাকে বলতেন, ‘তুই আমার ছেলে, সেভাবেই বড় হবি এবং সবকিছু করবি’। আমি জানি না মায়ের ছেলে হয়ে উঠতে পেরেছি কিনা। তবে এখন তিনি থাকলে হয়তো অনেক খুশি হতেন।
১৯৯০ সালের শুরুতে আম্মা জন্ডিসে আক্রান্ত হলেন। চিকিৎসা শুরু হলো, কিন্তু কোনো কাজ হচ্ছিলো না। পাবনার চিকিৎসকরা বললেন, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যেতে। সেখানকার চিকিৎসকরা দেখে বললেন, এখানে নয় ঢাকা নিতে হবে। ক্যানসার জাতীয় কিছু হয়েছে বলে মনে হচ্ছে।
পরে আম্মা আর ঢাকায় যাননি। হতে পারে তখন ব্যয়বহুল চিকিৎসা করানোর মতো আর্থিক অবস্থা আমাদের ছিল না। একসময় পাবনা সদর হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানালেন ওনার লিভার সিরোসিস হয়েছে। তবে যখন রোগ নির্ণয় হলো ততক্ষণে তার সময় প্রায় শেষ।
১৯৯০ সালের ১১ জুলাই রাত ১২টা ২০ মিনিট তিনি আমাদের সবাইকে ছেড়ে চলে গেলেন না ফেরার দেশে।
তিনি জীবিত থাকা অবস্থায় চাকরি করতাম না, তাই তার জন্য কিছু করতে পারিনি। তবে টিউশনির টাকা দিয়ে একবার একটা ব্লাউজ বানিয়ে দিয়েছিলাম। তাতেই আমার কী আনন্দ!
আজ মনে হয় তিনি বেঁচে থাকলে তার জন্য কত কিছুই না করতাম। যা হোক ওপারে তুমি ভালো থাক মা। আমাদের জন্য দোয়া কোরো।
আর আমি এখনও প্রতিদিন সকালে রুটি বানাই, আর তোমাকেই মনে করি মা’গো।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৩০ ঘণ্টা, মে ১৪, ২০১৭
এএ