কেন? অনন্য স্থাপত্য শৈলীর কারণে ব্রিজটি সারা বিশ্বের আর দশটি ব্রিজের চাইতে আলাদা। সেজন্যই হয়তো।
টুর্নামেন্ট চলাকালে খুবই ব্যস্ত থাকায় ব্রিজটি দেখার সুযোগ হয়নি। টুর্নামেন্ট শেষে সুবর্ণ সেই সুযোগটি এলো।
সোমবার (১৯ জুন) বিকেলে স্টেপনি গ্রিন থেকে উঠলাম ডিস্ট্রিক্ট লাইনে টিউবে। স্টেপনি থেকে মনুমেন্ট। সেখানে টিউব বদলে নর্দান লাইনে সোজা পৌঁছে গেলাম লন্ডন ব্রিজ আন্ডারগ্রাউন্ড স্টেশনে।
আন্ডারগ্রাউন্ড স্টেশনে নেমে উপরে উঠতেই দিক নিয়ে বিভ্রান্তির মধ্যে পড়ে গেলাম। কোন দিকে যাব? কতক্ষণই বা লাগবে? তবে মানুষের চলাচল দেখে সেই বিভ্রান্তি কিয়ৎক্ষণের মধ্যেই কেটে গেল।
পড়ন্ত বিকেলে অসংখ্য মানুষকে দলে দলে ছুটতে দেখে বুঝতে বাকি রইলো না, নিশ্চয়ই লন্ডন ব্রিজের দিকে যাচ্ছেন তারা। তাদের পিছু নিলাম। ধারণা ভুল হলো না। মিনিট দশেক হাঁটার পরই দৃষ্টি সীমানায় গোচর হলো, রাজকীয় সেই টাওয়ার ব্রিজ।
দূর থেকেই টাওয়ার ব্রিজের দ্যুতি চোখে এসে আছড়ে পড়ছিল। অসাধারণ এর স্থাপত্য! ব্রিটিশরা কতোটা ব্যতিক্রমী ও রুচিশীল ভাবনা থেকে ব্রিজটি নির্মাণ করা হয়েছিল, সে কথা ভাবতে ভাবতে এর কাছে এগিয়ে যাচ্ছিলাম। আমার মতো হাজার হাজার পর্যটক সেখানে ভীড় জমিয়েছিলেন। অধিকাংশকেই দেখলাম ব্রিজের সঙ্গে ছবি তোলায় মগ্ন। আবার কেউ কেউ এসেছেন মডেলিং করতে। পেশাদার ফ্যাশন হাউজগুলো তাদের মডেলদের নিয়ে এসে এখানেই ফটোশ্যুট করছেন। অনেকে আবার টেমস নদীর পাড় ঘেঁষা বেঞ্চিতে বসে অবলোকন করছেন টাওয়ার ব্রিজ।
টাওয়ার লন্ডনের পাশে টেমস নদীর উপর নির্মিত এই ব্রিজকে ঘিরে গড়ে উঠেছে অসংখ্য বাণিজ্যকেন্দ্র। এর মধ্যে রেস্টুরেন্ট ও পানশালার আধিক্য চোখে পড়ার মতো। ব্রিজের এপার ওপার দু’পার ঘেঁষে গড়ে ওঠা রেস্টুরেন্ট ও পানশালায় বসে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাটিয়ে দিচ্ছেন অনেকে। টাওয়ার ব্রিজটি মূলত টেমস নদীর উত্তর পাড়ের আয়রন গেট ও হর্সলি ডাউন লেনকে যু্ক্ত করেছে।
ব্রিজটির বিশেষত্ব হলো, এটি মাঝ বরাবর আলাদা হয়ে উপরে উঠে যেতে পারে। যাতে করে বড় জাহাজ নিচ দিয়ে কোনো ঝক্কি ছাড়াই চলাচল করতে পারে।
জানা যায়, এক সময় দিনে ৫০ বারও ব্রিজটির মাঝের অংশ উপরে ওঠানো হতো। কিন্তু এখন আর এতোবার প্রয়োজন হয় না, দিনে সাত থেকে আট বার ওঠানো হয়।
পর্যটকরা ব্রিজটির ওঠা-নামা দেখতেই মুখিয়ে থাকেন। ব্রিজের উপরে রয়েছে ৬৫ মিটার বিশাল দু’টি টাওয়ার। এই দুই টাওয়ারের সঙ্গে হাঁটার পথ সংযুক্ত। যেখানে হেঁটে হেঁটে লন্ডনের অপরূপ দৃশ্য অবলোকন করা গেলেও এখানে হাঁটা-চলা নিষেধ। এক সময় এখান থেকে লাফিয়ে নদীতে পড়ে আত্মহত্যা করার মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় এই নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়।
লন্ডনের ইতিহাস থেকে জানা যায়, নগরীর পূ্র্বাংশ যখন জনবহুল হয়ে পড়ে তখন নগরীর বর্ধিত জনসংখ্যার চাপ কমাতে অপরপাশে লন্ডনকে বাড়াতে ১৮৮৬ সালে ব্রিজটির নির্মাণ শুরু হয়। আট বছরের নির্মাণ কাজ শেষে ১৮৯৪ সালে ব্রিজটি সর্বসাধারণের চলাচলের জন্য উন্মু্ক্ত করে দেয়া হয়। ব্রিজের উদ্বোধন করেছিলেন রাজা এডওয়ার্ড-৪ ও রানী আলেকজান্ডারা। ব্রিজটি নির্মাণে সেই সময় ব্যয় করা হয়েছিল ১১ লাখ ৮৪ হাজার পাউন্ড।
স্থানীয় সময়: ১০২৬ ঘণ্টা, ২১ জুন, ২০১৭
এইচএল/এসআই