ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ফিচার

চকলেটখেকো গরুর ‘চকলেট মাংস’ ভোজন!

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯১৪ ঘণ্টা, জুলাই ১২, ২০১৭
চকলেটখেকো গরুর ‘চকলেট মাংস’ ভোজন! চকলেটখেকো গরুর ‘চকলেট মাংস’ ভোজন!

ঢাকা: চকলেটের লোভনীয় বারে দাঁত বসাননি এমন মানুষ পাওয়া দুষ্কর। কাউকে যদি জিজ্ঞাস করা হয় জীবনে চকলেট খেয়েছেন কিনা, তাহলে নিশ্চয় তিনি অবাক হবেন না। কিন্তু যদি বলা হয়, চকলেট গরুর মাংস খেয়েছেন কিনা- তবে নিশ্চয় একটু ভ্যাবাচ্যাকা খাবেন। ভাববেন মশকরা করা হচ্ছে তার সঙ্গে!

না একেবারেই তা নয়। চকলেট খাওয়ানো হয় এমন গরুর কথাই বলছি।

আর তার মাংসের স্বাদও চকলেটের মতোই। তবে বিশেষ এ গরুর মাংসের স্বাদ পেতে হলে যেতে হবে অস্ট্রেলিয়ায়। চকলেট স্বাদের গরুর মাংসের ৩২ পদ পাবেন সেখানে।

কোথায় যাবেন
ধরুন আপনি প্লেনের ভিতর বসে আছেন। এমন সময় কোনো যাত্রী পাশে এসে বললো, প্লেন থেকে নামার পর কারও কি ট্যাক্সি লাগবে? আপনার তখন কেমন লাগবে? ঠিক এরকম অভিজ্ঞতার দেখা পাবেন দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়ায়। যেখানে পাবেন চকলেট গরুর সন্ধান।

এটা পৃথিবীর এমন এক জায়গা যেখানে রয়েছে বন্ধুত্বসুলভ আচরণের জন্য সুখ্যাতি। প্রতিবেশী কিংবা আগন্তুক যেই হোক তার জন্য সবকিছু করতেও রাজি সেখানকার মানুষগুলো। অস্ট্রেলিয়ার ছোট মাউন্ট গেমবিয়ার বিমানবন্দরটি মেলবোর্ন আর অ্যাডিলেডের ঠিক মাঝখানে অবস্থিত। শহরটি আয়তনে বিশাল, ২শ মাইলেরও বেশি এলাকা জুড়ে ছড়িয়ে। বিশাল শহরে ৩০ হাজারের কম লোক বসবাস করে। চকলেটখেকো গরুর ‘চকলেট মাংস’ ভোজন!

আয়তন আর লোকসংখ্যাই বলে দিচ্ছে এখানকার মানুষেরা কতটা স্বাচ্ছন্দ্যে বসবাস করছেন। কি নেই শহরটিতে! নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপকূল রেখা, স্থানীয়ভাবে তৈরি হওয়া কনওয়ারা মদ, বড় সাইজের চিংড়ি, বাহারি প্রজাতির শামুক আর ব্যয়বহুল সামুদ্রিক মাছের সমাহার!

এ এলাকা থেকে রপ্তানি হওয়া যে খাদ্যটি সবচেয়ে প্রসিদ্ধ তা হলো ‘ওয়াগইয়ু বিফ’। ওয়াগইয়ু জাপানে উৎপাদিত বিশেষ প্রজাতির গরু। খুব দামি এ মাংসের স্বাদের সুখ্যাতি রয়েছে সারা বিশ্বে। এ প্রজাতির গরুগুলোকে চকলেট, ক্যান্ডি ও মিষ্টি কেক দিয়ে খাবার পরিবেশন করা হয়।

হৃদয় টানবে যেভাবে
শান্ত-সৌম্যভাবে দাঁড়িয়ে আছে সবুজ পাহাড়ের সারি। তার গায়ে পরানো হলুদ রঙের কার্পেট, ঠিক এমনি সৌন্দর্যের হাতছানি পাবেন অস্ট্রেলিয়ার মেইউরা স্টেশনে। সমুদ্রতীর থেকে মাত্র কয়েক মাইল দূরের এ জায়গাটাতে বসলে গায়ে এসে দোলা দেবে সমুদ্রের শীতল বাতাস। আর এখানকার সুস্বাদু ‘ওয়াগইয়ু বিফ’ একবার মুখে নিলে তো জীবনে ভুলবেন না! পান করার জন্য পাবেন গুহা থেকে পরিশোধিত স্বচ্ছ পানি। প্রকৃতির শতভাগ আমেজই এখানে পাবেন।

কি এই চকলেট মাংস
মুখরোচক ‘ওয়াগইয়ু’ মূলত জাপানি গরু। অতীতে এ প্রজাতির প্রাণীটি কঠোর পরিশ্রম বা ধান মাড়াইয়ের মতো কাজে ব্যবহার করা হতো। এ গরু দুই রঙের হয়, কালো আর লাল। কালো প্রজাতির গরুর মূল্যমান বেশি। জাপানের শগো তাকেদা শহর থেকেই এগুলো মেইউরা স্টেশনে নিয়ে আসা হয়। আর এ বিষয়ে স্টেশন কর্তৃপক্ষের রয়েছে ৫০ বছরেরও বেশি অভিজ্ঞতা। এখানে আপনাকে যে মাংস খেতে দেওয়া হবে তা শতভাগই ওয়াগইয়ু প্রজাতির, আপনি নিশ্চিন্তে খেতে পারবেন। চকলেটখেকো গরুর ‘চকলেট মাংস’ ভোজন!গরুটিকে জবাই করার দু’মাস আগে থেকেই মাংসের স্বাদ বাড়াতে প্রতিদিন ২ কিলোগ্রাম করে চকলেট, ক্যান্ডি ও মিষ্টি কেকের সমন্বয়ে তৈরি খাবার দেওয়া হয়। এছাড়া প্রতিদিনই ৭০ শতাংশ খাবার এরা মাঠেই পেয়ে থাকে যার সঙ্গে যুক্ত থাকে খড়, গম, ভূষি ও শিমের মিশ্রণ। খাবারে মিষ্টি সংযোজনের বিষয়টি নতুন।

অদ্বিতীয় স্বাদ
জাপানি এ গরুর মাংসের স্বাদ কতটা অতুলনীয় তা ঘ্রাণ নাকে লাগার সঙ্গে সঙ্গেই টের পাবেন। যখনই হাতের আঙুল দিয়ে তা মুখে পুরবেন তখনিই ব্যতিক্রমী আর্দ্র ও মিষ্ট স্বাদ আপনার জিভ পুড়িয়ে দেবে। মেইউরা এর খাবার দোকান যা ‘দ্য টেস্টিং রুম’ নামে পরিচিত, সাত দিনে তিন দিন খোলা পাবেন। রেস্টরুমগুলোর এক দরজায় লেখা পাবেন ‘বকনা বাছুর’ আর আরেক দরজায় ‘ষাঁড়’। দেয়ালের গায়ের আলমারিগুলোতে ঝোলানো বাহারি ছুরি বারবার মনে করিয়ে দেবে খাবারের কথা।

একবার তাজা মাংস আহরণের পর সেগুলোকে ৩২ স্টাইলে কেটে বিভিন্ন স্বাদের রেসিপি তৈরি করেন দক্ষ শেফরা। প্রতি রাউন্ড পরিবেশনার জন্য আপনাকে কমপক্ষে ৩শ ডলার (বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ২৫ হাজার টাকা) গুনতে হবে। চকলেটখেকো গরুর ‘চকলেট মাংস’ ভোজন!

বিশ্বজোড়া কদর
খাদক ও পাচক দু’জনেই জানে এ মাংসের স্বাদ। এর কদর এখন বিশ্ব জুড়ে। মেইউরা স্টেশনের ৭০ শতাংশ মাংসই বিদেশে রপ্তানি করে। বেশিরভাগ যায় চীন ও দুবাই। এছাড়া হংকংয়ের ওটো-ই মেজ্জো, এরকেইন, সেরগে এত লে পকোই এবং ক্যাপরাইস রেস্তোরাঁতে এর স্বাদ নিতে পারবেন।

গরুকে চকলেট খাওয়ালেতো স্বাদ মিষ্টি হবেই- একথা বলেও কেউ কেউ রসিকতা করতে পারেন! আসলেই এর স্বাদ কেমন? হংকংয়ের ফোর সিজনস হোটেলের শেফ এনড্রিয়া একড্রি বলেছেন, আমি এর আগে অনেক মাংসেই বাড়তি স্বাদ মিশিয়ে বৈচিত্র্য আনতে চেয়েছি। কিন্তু প্রায়ই এ বাড়তি স্বাদ থাকে না। জাপানি গরুর মাংসে আসলেই অনন্য স্বাদ, মনে হয় যেন চকলেটগন্ধি। আমরা আগুনে এটাকে ধীরে ধীরে পোড়াই, আর এটা মিষ্ট এক ধোঁয়ার তৈরি করে। কয়েক কামড় স্বাদ নেওয়ার পর মনে হবে না যে খাওয়া শেষ!

বাংলাদেশ সময়: ০১০৯ ঘণ্টা, জুলাই ১৩, ২০১৭
জিওয়াই/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।