ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ফিচার

মিষ্টি ফেরি করেই চলে ফজলের সংসার

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০০২ ঘণ্টা, আগস্ট ৪, ২০১৭
মিষ্টি ফেরি করেই চলে ফজলের সংসার  ফেরি করে মিষ্টি বিক্রেতা ফজল হক

মৌলভীবাজার: ব্রাহ্মনবাড়িয়া জেলার মুকুন্দপুর এলাকার বাসিন্ধা ফজল হক (৬০)। থাকেন মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলার ভানুগাছ রেলওয়ে স্টেশন কলোনীতে। ৩৫ বছর ধরে ফেরি করে মিষ্টি বিক্রি করছেন।

সম্প্রতি এক পরন্ত বিকেলে মৌলভীবাজার জেলার এক চা বাগানে হঠাৎ করে চোখ পড়ে দাড়িওয়ালা এক বৃদ্ধ লোকের উপর। মাথায় থালে করে তিনি দোকানদারের কাছে একটি প্যাকেটে মোড়ানো কি যেন বিক্রি করছেন।

মোটর সাইকেল থেকে নেমে ছবি তুলতেই তিনি বলেন ছবি তুললেন কেন। সাংবাদিক বলতেই শুরু হলো তার কথা বলা। বললেন আপনি লিখলে আমি কিছু পাবো।

কথা বলতে বলতে তিনি কান্নায় ভেঙ্গে পড়লেন। শুরু হলো তার দুঃখের কাহিনী। তিনি বাংলানিউজকে বলেন দীর্ঘ ৩৫ বছর ধরে তিনি ব্রাহ্মনবাড়িয়ার মিষ্টি বিক্রি করছেন। প্রথমে তিনি জয়ন্তিকা ও উপবন ট্রেনে মিষ্টি বিক্রি করতেন। তার মিষ্টির নাম “ব্রাহ্মনবাড়িয়ার সন্দেস”। প্রথমে গাড়িতে এক হাজার থেকে বারশত টাকার সন্দেশ বিক্রি করতেন। কিন্তু বিভিন্ন কোম্পানির জিনিষে বাজার সয়লাব হয়ে যাওয়াতে এ মিষ্টির চাহিদা ট্রেনের গ্রাহকের কাছে কমে গেছে।

তাই বর্তমানে তিনি বিভিন্ন বাগান ঘুরে মিষ্টি বিক্রি করেন। কোনো দিন ৫ থেকে ৬শত টাকার বিক্রি হয়। আবার কোনো দিন দুইশত টাকা। স্ত্রী ছেলে মেয়ের কথা জিজ্ঞেস করতেই ডুকরে কেঁদে উঠে বলেন স্ত্রীর জন্যই আজ তার এ অবস্থা।  

তিনি বলেন,  তার চার ছেলে মজিবুর রহমান, দীপু মিয়া, বাদশা মিয়া এবং বাচ্চু মিয়া। তার দু’টি মেয়েও রয়েছে। বড় মেয়ে নিলুফা খাতুনকে বিয়ে দিয়েছেন। ছোট মেয়ে মেঞ্চু বেগমের বিয়ে ঠিক হয়েছিলো ময়মনসিংহে,কিন্তু ৫০ হাজার টাকা যৌতুক দিতে না পারায় বিয়ে দিতে পারেননি। মেয়েটি এখন তার সঙ্গেই আছে। স্ত্রী শাবানা বেগমের জন্যই তার সংসারে অশান্তি। স্ত্রীর কারনেই তার ছেলেরা আজ তার মাঝে নেই। একজন ভারতে থাকে বাকি ৩ জন থাকে ব্রাহ্মনবাড়িয়ায়। তারা কেহই তার খোঁজ করেনা। তিনি যা আয় করেন তা দিয়েই কোনো রকমে সংসার চলে।

তিনি আরও বলেন এই মিষ্টিগুলো তিনি ব্রাহ্মনবাড়িয়ার কাজিরবাজার থেকে কিনে আনেন। তিনি বলেন, ছোট রুলের মতো ওইগুলোর ৪ টাকা করে কিনে নিয়ে আসি, আর বিক্রি করি ৫ টাকা করে।

মিষ্টি ক্রেতা বাগানের এক দোকানদার মদরিছ মিয়া ও আরেক ক্রেতা  টিক্কা রেলী বাংলানিউজকে বলেন, কম দামে মিষ্টিগুলো পাওয়া যায় এজন্য তারা কিনেন। মিষ্টির মানও খারাপ না।

ফজল হক বলেন, শেষ বয়সে এসে পোলাপাইন রেখেও দেশে দেশে ঘুরে মিষ্টি বিক্রি করে সংসার চালাচ্ছি। তিনি জানেন না আর কতদিন এভাবে চলতে হবে।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৫৫৪ ঘণ্টা, আগষ্ট ০৪, ২০১৭
বিএস

 

 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।