আশা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি সাহিত্যের ছাত্রী সানজানা ফারিহা তার বারান্দা সাজিয়েছেন বিভিন্ন প্রজাতির গাছ দিয়ে। গন্ধরাজ, বেলি, নয়ন তারা, কাঠ গোলাপের মতো ফুল গাছ ছাড়াও আছে ধনেপাতা, পুদিনা, ক্যাকটাস, টমেটো এবং আরও অনেক রকমের ইন্ডোরপ্ল্যান্ট।
সব মিলিয়ে প্রায় ৫০ প্রজাতির গাছ আছে ফারিহার সংগ্রহে। বারান্দার এক অংশে রয়েছে পাখির বিশ্রাম ও খাবারের ব্যবস্থা। শহরের আকাশে উড়ে বেড়াতে বেড়াতে ক্লান্ত পাখি একটু বিশ্রাম নিচ্ছে মনের শান্তিতে।
ফ্ল্যাট বাড়িতে বাগান করার ব্যাপারে ফারিহা জানান, প্রথমেই মাথায় রাখতে হবে যথেষ্ট আলো-বাতাসের সরবরাহ আছে কিনা। যেসব গাছের বেশি রোদ প্রয়োজন সেগুলো রক্ষণাবেক্ষণ করা একটু বেশি ঝামেলা। ওদিকে স্পাইডার প্ল্যান্ট, ড্রেসিনা, লাকি ব্যাম্বু, ক্যাকটাস, পিস লিলি, মানিপ্ল্যান্টের মতো ইন্ডোর প্ল্যান্টগুলো রক্ষণাবেক্ষণ করা খুবই সহজ। ইচ্ছা থাকলে শুধুমাত্র বারান্দাতেই নয়, জানালাতেও তৈরি করা সম্ভব সুন্দর উইন্ডো গার্ডেন।
বারান্দার অন্যান্য গাছদের মধ্যে টগর গাছটি বিশেষভাবে চোখে পড়ে। ঝমঝম বৃষ্টির দিনে অন্ধকার বারান্দা আলোকিত করে রেখেছে ঝাঁক ঝাঁক সাদা টগর ফুল।
টগর প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ক্লাসের ব্যস্ততায় গাছের যত্ন নেয়ার সময় পাই না। কয়েকটি টগর বৃক্ষমেলা থেকে কিনেছিলাম। বাগানের অন্যান্য গাছগুলোর মধ্যে টগর গাছ আমার বিশেষ পছন্দের। সব সময়ই এই গাছে ফুল ফুটে থাকে। আজ সকালে গাছে মোট ২৪টি ফুল ফুটেছে যা দেখলেই মন ভালো হয়ে যায়।
যেহেতু রোদের অভাব, স্থান সংকুলান, বৃষ্টির পানি জমে থাকা ইত্যাদি নাগরিক সমস্যা মাথায় রেখে বাগান করতে হয় ফ্ল্যাট বাড়িতে। তাই খুব কম যত্নে বাঁচে এমন গাছই টবের বাগানিদের পছন্দ। তেমনই এক ফুল টগর।
সারাবছর ফুল ফোটে টগর গাছে। তবে বর্ষায় ঝোপালো চিরসবুজ এই গাছ মেলে ধরে তার পূর্ণ সৌন্দর্য। এসময় শুভ্র সাদা ফুলে ভরে ওঠে এই গাছ। গুচ্ছ পাপড়ি আর একক পাপড়ি, দুই ধরনের টগর আমাদের দেশে বেশি দেখা যায়। গুচ্ছ পাপড়ির টগরে মৃদু সুগন্ধী থাকলেও একক পাপড়ি টগর গন্ধহীন।
টগর কলম করে চারা করা যায়। আবার বর্ষাকালে ডাল গুজে রাখলেও চারা হয়। টগর সমতল ভূমির গাছ হলেও পাহাড়ে এদের উপস্থিতি রয়েছে। বনে-জঙ্গলে অবাধে বেড়ে চলে এই গাছ এবং প্রকৃতির বিরূপ পরিবেশেও বেঁচে থাকে খুব সহজে।
ফারিহার মতো ফ্ল্যাট বাড়িতে বাগানকারীদের সহায়তা দিতে অভিজ্ঞ বৃক্ষপ্রেমীদের দেখা মেলে ফেসবুকে গাছ পালন ভিত্তিক বিভিন্ন গ্রুপে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু গ্রুপ হচ্ছে- বৃক্ষপ্রেমী, বাগান করি স্বপ্ন গড়ি, অন্দরে সবুজের ছোঁয়া ইত্যাদি।
বিভিন্ন ঔষধি গুণ রয়েছে টগরের। এর মূল ও শেকড়ে কৃমি ও চুলকানি দূর হয়। ঘামাচিতে প্রতিদিন টগর গাছের কাঠ চন্দনের মতো ঘষে লাগালে উপকার পাওয়া যায়। তবে ঔষধি চিকিৎসায় যেহেতু মাত্রা ও পরিমাণের সূক্ষ্ণ বিষয়াদি রয়েছে, তাই ঘরে গাছপালা দিয়ে এসব চিকিৎসা অনুৎসাহিত করা হয়।
বাংলাদেশ সময়: ০১২৩ ঘণ্টা, আগস্ট ১৪, ২০১৭
এনএইচটি/বিএসকে/