ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ফিচার

অবহেলায় নষ্ট হচ্ছে ঐতিহাসিক খঞ্জন দীঘি মসজিদ

নুর আলম হিমেল, জাবি করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৫৪৩ ঘণ্টা, আগস্ট ২১, ২০১৭
অবহেলায় নষ্ট হচ্ছে ঐতিহাসিক খঞ্জন দীঘি মসজিদ খঞ্জন দীঘি মসজিদ। ছবি: নুর আমল হিমেল

চাঁপাইনবাবগঞ্জ ঘুরে: শত বছরের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে বিশাল বিশাল আম গাছ। সেগুলোতে বড় বড় আম। এই ঘন আম্রকাননের মাঝে মুসলিম ঐহিত্য ধারণ করে দাঁড়িয়ে আছে খঞ্জন দীঘির মসজিদ।

মসজিদটি রাজশাহী বিভাগের চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ উপজেলায়। সোনা মসজিদ স্থল বন্দরের কাস্টমস অফিস মোড় থেকে পূর্ব দিকে আধা-মাইল পর বালিয়াদীঘি গ্রামের দিকে ৪০ গজ গিয়ে ২০০ গজ দূরুত্বে এক গম্বুজ বিশিষ্ট খঞ্জন দীঘি মসজিদ।

শাহ সুজা আমলের বিখ্যাত তাহখানা

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের শিক্ষক সহযোগী অধ্যাপক হোসনে আরা বাংলানিউজকে বলেন,  খঞ্জন দীঘির মসজিদ অনুমানিক ১৪৮০ সালের দিকে কোন এক রাজবিবি নির্মাণ করেন বলে ধারণা করা হয়ে থাকে। অনেকে মনে করেন, এটি সুলতান ইলিয়াস শাহের আমলের ইট নির্মিত একটি মসজিদ। ২০০৪-’০৫ সালে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর এর উদ্যোগে মসজিদটি সংস্কার করা হয়। ওই সংস্কারের পর এর অলংকরণ ও অঙ্গসজ্জা দারুণভাবে প্রস্ফূটিত হয়েছে।

খঞ্জন দীঘি মসজিদ।  ছবি: নুর আমল হিমেলমসজিদটি পূর্ব-পশ্চিমে ৬২ ফুট এবং উত্তর-দক্ষিণে ৪২ ফুট। মসজিদে সর্বমোট ৭টি দরজা রয়েছে। পূর্ব দিকে ৯.৬ ফুট মাপের একটি বারান্দা রয়েছে।

নয়নাভিরাম মুকুটের মতো একটি মাত্র প্রকাণ্ড গোলাকার গম্বুজ দ্বারা সম্পূর্ণ নামাজ স্থল আচ্ছাদিত এবং মসজিদের পূর্ব পাশের বারান্দায় এক সারিতে তিনটি ছোট আকারের গোলাকার গম্বুজ অপূর্ব শোভায় দর্শনাথীদের নয়ন তৃপ্ত করে।

খঞ্জন দীঘি।  ছবি: নুর আমল হিমেলপ্রাচীনকালের চৌকোনা ইট নির্মিত এ পূরাকীর্তির দেওয়াল লতা-পাতা, ফুল দ্বারা আবৃত।

স্থানীয়রা জানান, কথিত রয়েছে, মসজিদটি দুর্ভেদ্য জঙ্গলে আবৃত ছিল এবং হিংস্র জীব-জন্তুর আড্ডা ছিল এখানে। বড় বড় অজগর সাপের নিবাস ছিল এ মসজিদ। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পরে জঙ্গল পরিষ্কার করলে মসজিদের অস্তিত্ব ধরা পড়ে। মসজিদের ভেতরে ছিল বাদুড়ের রাজত্ব। বাদুড়ের দুর্গন্ধে বাতাস ভারী হয়ে থাকতো, যার কারণে এ  এলাকায় কেউ যেতো না। এ কারণে স্থানীয়রা সাধারণভাবে মসজিদটিকে ‘চামচিকা মসজিদ’ বা ‘বাদুড় মসজিদ’ নামে অভিহিত করে থাকে। আবার কেউ কেউ একে ‘রাজ বিবি মসজিদ’ হিসেবে বর্ণনা করে থাকে। প্রকৃতপক্ষে এটা খঞ্জন দীঘি মসজিদ।

খঞ্জন দীঘি মসজিদ।  ছবি: নুর আমল হিমেলএর পূর্ব প্রান্তে বিশাল আকারের একটি পুকুর রয়েছে। যা খঞ্জন দীঘি নামে পরিচিত।

মসজিদটি সম্পর্কে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী জাকির হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, মসজিদটি সঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করা হচ্ছে না। যদি এ মসজিদ সম্পর্কে সরকারি উদ্যোগে গবেষণা করা হতো তাহলে আমরা ইতিহাস-ঐতিহ্য সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারতাম।  

খঞ্জন দীঘি মসজিদ।  ছবি: নুর আমল হিমেলআরেক শিক্ষার্থী সুমাইয়া সাবিল বলেন,  মসজিদে  যাওয়ার রাস্তা নেই।  দীঘির পাড় ভেঙ্গে যাচ্ছে। এসব বিষয়ে নজর দেওয়া জরুরি।

বাংলাদেশ সময়: ১১৩৫ ঘণ্টা,  আগস্ট ১৯, ২০১৭
জেডএম/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।