বাংলাদেশের প্রত্নতাত্ত্বিক নির্দশন হিসেবে শাহ মখদুম (র:) এর মাজার নির্মাণের সময়কাল নিয়ে ঐতিহাসিকদের মধ্যে মতভেদ শ্যামপুর শিলালিপি ও একটি ফারসি শিলালিপির বরাত দিয়ে অনেকেই বলে থাকেন, সম্রাট শাহজাহানের রাজত্বকালে এটি নির্মিত। পরে আলী কুলী বেগ মাজারের আমূল সংষ্কার করে বর্তমান গম্বুজটি নির্মাণ করেন।
অবহেলায় নষ্ট হচ্ছে ঐতিহাসিক খঞ্জন দীঘি মসজিদ
তবে শাহ মখদুম রূপস (রঃ) চৌদ্দ শতকের একজন মুসলিম দরবেশ, যিনি বরেন্দ্র অঞ্চলে ইসলাম প্রচার করেছিলেন। ‘মখদুম’ অর্থ ধর্মীয় নেতা এবং ‘রূপস’ অর্থ আচ্ছাদিত। শাহ মখদুমের প্রকৃত নাম ছিল আব্দুল কুদ্দুছ জালালুদ্দীন। তিনি ছিলেন হজরত আব্দুল কাদের জিলানীর (রঃ) পৌত্র আজলা শাহের পুত্র। ৬৮৫ হিজরিতে (১২৮৬ খ্রিস্টাব্দে) তিনি তাঁর বড় ভাই সৈয়দ আহমদ ওরফে মীরন শাহকে নিয়ে বাগদাদ হতে এখানে আসেন।
প্রচলিত কাহিনী অনুসারে, চিশতিয়া তরিকার একটি উপদলের দরবেশদের মতো তিনি তাঁর মুখমণ্ডল একটুকরা কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখতেন এবং এজন্য তাঁকে রূপস বলা হতো।
৬৮৭ হিজরিতে (১২৮৮ খ্রিস্টাব্দে) শাহ মখদুম রূপস বাঘা হতে রামপুর বোয়ালিয়ায় চলে আসেন। তিনি ওই এলাকার অত্যাচারী তান্ত্রিক রাজাকে পরাজিত ও নিহত করে জনগণকে অত্যাচার হতে রক্ষা করেন।
প্রতি বছর ১০ মহররম শাহ মখদুমের দরগায় একটি মেলা অনুষ্ঠিত হয়। ওই দিন তাজিয়া বের করা হয় এবং লাঠি খেলা ও নকল তলোয়ার দিয়ে যুদ্ধের মহড়া অনুষ্ঠিত হয়। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি হলের নাম এ দরবেশের নামে রাখা হয়েছে।
মাখদুম শাহের মাজারটি বর্গাকারে নির্মিত। এর প্রত্যেক বাহুর দৈর্ঘ্য ৬.০৬ মিটার। এর দরজাটি কাঠের কারুকার্যে নকশা করা। মাজারের চারকোণে চারটি মিনার রয়েছে। মাজারের সামনে একটি মসজিদ রয়েছে। মাজারের পশ্চিম দিকে শাহ মাখদুমের হুজরাখানা এবং তান্ত্রিক দেওরাজ এর নরবলীতে ব্যবহৃত পাথরের যূপকাষ্ঠ ও নালাযুক্ত রক্তপাত্র রয়েছে। মাজাটির পূর্ব দিকে নারীদের নামাজের স্থান। মাজারের দক্ষিণ-পূর্ব কোণে বিশাল আকারের একটি দীঘি।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতিহাস বিভাগের অর্নাস শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী রকিবুল আলম বলেন, ইমারতের গঠন প্রণালী ও স্থাপত্য কৌশল দেখে এটিকে সুলতানি আমলের স্থাপত্য বলে ধরে নেওয়া হয়। সুলতান জালাল-উদ-দীন মোহাম্মদ শাহের ‘একলাখী’ সমাধি সৌধের প্রায় অনুকরণে নির্মিত হয়েছে এটি। সমাধি সৌধের ভেতরে ও বাইরে প্রতিবছর চুনকাম করা হয় বলে এর আদিরূপ সম্পর্কে সঠিক কোন তথ্য পাওয়া কঠিন।
শাহ মাখদুম সম্পর্কে ইতিহাস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক হোসনে আরা বলেন, এখানে শাহ মাখদুমের নির্দেশে শিয়া মতানুযায়ী মহরম অনুষ্ঠানাদির জন্য আলী কুলী বেগ ইমামবাড়া ও নহবৎখানা নির্মাণ করেছিলেন। আলী কুলী বেগের সময় এ দরগায় শিয়া অনুষ্ঠানের জন্য বিখ্যাত ছিল। এখনও শিয়া ধর্মাবলম্বীরা তাদের ধর্মানুষ্ঠান এ দরগায় পালন করে থাকে।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৩০ ঘণ্টা, আগস্ট ২২, ২০১৭
নুর আলম হিমেল/জেডএম