কথাগুলো বলছিল গাইবান্ধা সদর উপজেলার লক্ষীপুর হাটের বাঁশ-বেতের কুলা-ডালি-চালুন বিক্রেতা ১০ বছরের শিশু গোবিন্দ চন্দ্র। প্রচণ্ড রোদে হাটের এক কোণে ছাতা মাথায় বসে নিজেদের ঘরে তৈরি এসব কুটির শিল্প সামগ্রী বিক্রি করছিল সে।
লক্ষীপুর ইউনিয়নের ধনকুঠি গ্রামের ব্যবসায়ী সুশীল চন্দ্রের ছেলে ও লক্ষীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র গোবিন্দ আরও বলে, ‘বাড়িতে মায়, বাপ আর বোনে ডালি, কুলে, চালন, টোপা আর হোচা বানায়। এগলে জিনিসপত্র বাপে এক হাটে আর মুই আরেক হাটে নিয়ে যাম। তয়, হাফ স্কুল করি মুই হাটে হাটে যাম’।
গোবিন্দ চন্দ্র বাংলানিউজকে আরও জানায়, তার পড়াশোনা করার খুবই ইচ্ছা। সে স্কুলে যেতে চায়। কিন্তু সংসারের অভাব মেটাতে বাবা তাকে হাটে হাটে দোকান বসাতে বলেন। তাই সে স্কুল ফাঁকি দিয়ে জেলার বিভিন্ন হাটে এসব জিনিসপত্র বিক্রি করে।
গোবিন্দের পরিবারের সবাই সারাদিন তৈরি করেন কুটির শিল্প সামগ্রী। আর দুপুরে তার বাবা সুশীল এক হাটে আর সে অন্য হাটে সেগুলো বিক্রি করে। এতে দু’জনে মিলে ৫০০/৬০০ টাকা আয় হয়, যা দিয়েই চলে সংসারটি। হাটের ব্যবসায়ী রঞ্জিত কুমার দাস জানান, সপ্তাহে দু’দিন এ হাট বসে। প্রতি হাটে গোবিন্দ এসে দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এসব জিনিস বিক্রি করে বাড়ি যায়। মাঝে মাঝে গোবিন্দের বাবাও এ হাটে আসেন।
সরেজমিনে জানা গেছে, জেলার ঐতিহ্যবাহী এ হাটে গোবিন্দ চন্দ্রের মতো আরও অনেক শিশুই বিভিন্ন জিনিসপত্র বিক্রি করে। মূলত পরিবারে অভাব ও কোনো কোনো শিশুর অভিভাবক মারা যাওয়ায় এ বয়সেই বিভিন্ন ছোট ছোট ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে তারা। তবে ব্যবসার পাশাপাশি লেখাপড়া চালিয়ে যাচ্ছে তাদের বেশ কয়েকজন।
বাংলাদেশ সময়: ১২২৪ ঘণ্টা, আগস্ট ২৩, ২০১৭
এএসআর