কী এই চারমিনার? চারমিনার মানে চারটি মিনার। এটি একটি সৌধ ও মসজিদ।
চারমিনার সম্পর্কে এনসাইক্লোপিডিয়া বলছে, আইকনিক সিম্বল অব দ্য সিটিজ হেরিটেজ। শুধু তাই নয়, ৪শ বছরেরও বেশি পুরনো এ সৌধ বহির্বিশ্বে সবচেয়ে বেশি পরিচিত প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনের একটি।
কুতুব শাহী বংশের পঞ্চম সুলতান মুহাম্মাদ কুলি কুতুব শাহ মসজিদ ও মাদ্রাসা হিসেবে ব্যবহারের উদ্দেশ্যে চারমিনার তৈরির সিদ্ধান্ত নেন। তার প্রধানমন্ত্রী মীর মোমিন আস্তারাবাদী তৎকালীন সাম্রাজ্যের নতুন রাজধানী হায়দ্রাবাদে চারমিনারের নকশা পরিকল্পনায় প্রধান ভূমিকা পালন করেন। নবগঠিত রাজধানী শহরের পরিকল্পনা করার জন্য পারস্য থেকে স্থপতি আনা হয়। এই স্থাপনাটির ধরনও ইন্দো-ইসলামিক, যা পারস্যের স্থাপনাশিল্পের প্রমাণ বহন করে।
কথিত রয়েছে, মুহাম্মাদ কুলির শাসনামলে একবার মহামারী প্লেগের প্রাদুর্ভাব ঘটে। হাজার হাজার মানুষের প্রাণহানি ঘটছে। মুহাম্মাদ কুলি স্বপ্নে তার রাজ্যের তৎকালীন রাজধানী গোলকন্ডা সরিয়ে নেওয়ার আদেশ পান। সেইসঙ্গে নির্দেশ পান নতুন শহরের কেন্দ্রে একটি মসজিদ গড়ার। সঙ্গে সঙ্গে তিনি রাজধানী সরিয়ে নেন নতুন জায়গায়। সেটিই বর্তমান হায়দ্রাবাদ এবং নির্মিত সেই মসজিদটি হলো চারমিনার।
চারমিনার গড়ে ওঠে গোলকন্ডার ঐতিহাসিক বাণিজ্যিক পথের মিলিত স্থানে। হায়দ্রাবাদ শহরের পরিকল্পনাও করা হয়েছে চারমিনারকে কেন্দ্র করে। চার দিক থেকে চারটি রাস্তা এসেছে মিলেছে চার মিনারের ঠিক গোড়ায়। চারমিনার অঞ্চলেরও অন্যতম আকর্ষণ এই রাস্তাগুলো। সবগুলো রাস্তাজুড়ে বাহারি সব দোকান। পশ্চিমমুখী রাস্তাটির দু’পাশজুড়ে ঐতিহাসিক লাদবাজার।
১৫৯১ সালে প্রতিষ্ঠিত চারমিনার আকারে বর্গাকৃতির। এর প্রত্যেক দিকের দৈর্ঘ্য প্রায় ৬৬ ফুট। এর মধ্যে চারটি বড় বড় খিলান যা চারটি বড় রাস্তার নির্দেশক। প্রত্যেক কোণায় স্তম্ভগুলো সুন্দর কারুকাজ সম্পন্ন এবং দ্বিস্তর ব্যালকনি বিশিষ্ট মিনার। এগুলোর উচ্চতা প্রায় ১৮৪ ফুট। প্রত্যেকটি মিনারের মাথায় মুকুটের মতন সুন্দর কারুকাজ এবং ভিত্তিতে ফুলের পাপড়ির মতো নকশা। চারমিনারের চূড়ায় ওঠার জন্য ১৪৯ ধাপসম্পন্ন প্যাচানো সিঁড়ি রয়েছে। নজরকাড়া স্থাপনাটি গ্রানাইট, চুনাপাথর ও মার্বেল পাথর দিয়ে তৈরি।
চারমিনারের দ্বিতীয় তলাটি দু’টি অংশে বিভক্ত। একটি অংশ মাদ্রাসা এবং অন্য অংশটি ছোটখাটো মসজিদ। যেহেতু এটি একটি পর্যটন আকর্ষণী স্থাপনাও বটে তাই প্রথম তলা অব্দি বহিরাগতরা উঠতে পারে। পুরো জায়গাটি চক্রাকার করিডোরের মতো। চারমিনারের ভেতরে বাইরে আপনমনে খেলে বেড়ায় কবুতরের দল।
চারমিনারের ঠিক পাশেই রয়েছে প্রায় ৪শ বছরের পুরনো মক্কা মসজিদ। একটু হেঁটে গেলে ঐতিহাসিক চৌমহল্লা প্যালেস। চারমিনার দেখতে গিয়ে দেখা হয়ে যাবে এই প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনগুলোও।
চারমিনারের ভৌগলিক অবস্থান হায়দ্রাবাদ শহরের কেন্দ্রবিন্দুতে। শহরের যেকোনো স্থান থেকে ক্যাব ভাড়া করে যাওয়া যাবে। সহজে যাওয়া যাবে ট্রেনে। এজন্য নামতে হবে হায়দ্রাবাদ স্টেশনে। এটি নামপল্লী স্টেশন নামেও পরিচিত। স্টেশন থেকে মসজিদ প্রায় পাঁচ কিমি। যাওয়া যাবে ক্যাব বা অটোরিকশায়।
জানা গেলো, রমজানের সময় চারমিনার ও এর চারপাশের রূপ বদলে যায় কয়েকগুণ। জমজমাট বাজার আর হাজারো লোকসমাগমে অন্যরকম আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে পরিবেশ। সাধারণত সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত চারমিনার ওঠা যায়। এজন্য গুনতে হয় জনপ্রতি ১৫ রূপি। বিদেশি হলে অবশ্য ১০০।
যেকোনো পুরনো শহর, স্থাপনা বা ভবনে হাঁটলে মনে হয় যেনো ইতিহাস নিজ থেকে কথা বলে উঠছে। একেকটি পদক্ষেপ যেনো ইতিহাস বইয়ের পাতা ওল্টানোর মতো। কেনো চারমিনার হায়দ্রাবাদ তথা ভারতের গ্লোবাল আইকন হয়ে উঠেছে তা সৌধটি ঘুরেই অনুধাবন করা গেলো। স্থানীয় বাসিন্দাদের ‘চারমিনার গ্যায়ে হো কেয়া?’, প্রশ্নের উত্তরও মিলে যায়।
বাংলাদেশ সময়: ০৯৩০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৯, ২০১৭
এসএনএস