বাংলানিউজকে চোখ আটকালো সেখানে ঘুমিয়ে থাকা এক শিশুর দিকে। এ যেন পথের ধারে সদ্য ফোটা এক শুভ্র ‘বুনোফুল’।
এগিয়ে দেখলাম শিশুটির নিষ্পাপ মুখ, কচি দু’হাতে বিস্কুটের প্যাকেট জড়িয়ে তার নিশ্চিন্ত ঘুম!
নাম তার জহির। মিয়ানমার থেকে ১৫ দিন হেঁটে মা, বাবা আর দাদির সঙ্গে পালিয়ে এসেছে এ শিশু! বাংলাদেশে এসে আশ্রয়ের জন্য এসেছে বালুখালি রোহিঙ্গা ক্যাম্পের রাস্তার পাশে। মা-বাবা অনেকক্ষণ ধরে গেছেন ত্রাণ আনতে। আর বৃদ্ধা বাচ্চাটিকে কোলে নিয়ে ত্রাণের জন্য দৌঁড়াদৌঁড়ি করতে পারে না। তাই ত্রাণের গাড়ি থেকে ছুঁড়ে দেওয়া দু’টো বিস্কুটের প্যাকেটই নাতি হাতে দিয়েছেন। ওই নিষ্পাপ শিশু সেই প্যাকেট জড়িয়ে ঘুমিয়ে পড়েছেন পথের ধারেই। বালুখালি পুরানো ক্যাম্পে আগে আসা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ভিড়ে পরিপূর্ণ। বর্তমানের এ সংকটাবস্থায় নতুন আসা রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ার জন্য চলছে নতুন জায়গার বন্দোবস্ত।
শরণার্থীরা ক্যাম্পের আশ-পাশে ফাঁকা জায়গা পেলেই একটু মাথা গোঁজার ঠাঁই করে নিচ্ছে। প্রয়োজনে পাহাড়ও কাটছে! কিন্তু অনেক শরণার্থীরা এখনও জায়গা পায়নি। এ বালুখালি ক্যাম্পের রাস্তার ওপারের সড়কের অনেকেই গাছের নিচে, ঝোপের ভেতরে আশ্রয় নিয়েছে।
শরণার্থী শিশুদের এ চিত্র সারা টেকনাফ, কক্সবাজার শহরের পথে পথেই। শিশুদের কান্না, ক্ষুধার কষ্ট, অপুষ্টিজনতিত শরীর আরো কত কি!বালুখালি ক্যাম্পে স্বেচ্ছাসেবকরা ত্রাণের প্যাকেট উড়িয়ে দেওয়ায় অনেকে ধরতে পারে না। অনেক খাবার যা মাটিতে পরে নষ্ট হচ্ছে। একদল শিশু মাটিতে পরে যাওয়া চিড়া কুড়াচ্ছে। ত্রাণের ট্রাক থেকে ভাইয়ের জন্য এ জামাটি পেয়েছে। নতুন জামা পেয়ে খুশি দু’জন। যেসব রোহিঙ্গারা প্রায় ৭-৮ মাস আগে এসে পরেছেন, ক্যাম্পে তারা ঘর মোটামুটি গুছিয়ে নিয়েছে। ক্যাম্পের পাহাড়ের চূড়ায় দাঁড়িয়ে এ শিশুর অনিশ্চিত চাহনি!আঞ্জুমান পারায় সীমান্ত পেরিয়ে আসা দুই মায়ের ভিটেমাটি হারানোর শূন্য মনের হাহাকার চাহনি। মিয়ানমার থেকে চার পাহাড় টপকিয়ে পনেরো দিন ধরে হাঁটছেন এ পরিবার। সবার সামনে পরিবারের বড় ছেলে যেন নেতৃত্ব দিচ্ছে!
বাংলাদেশ সময়: ১২৩০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৩, ২০১৭
এএটি/