এর দু’পাশে পদ-পদবিভেদে উজির-নাজিররা বসতেন। দ্বারে পাহারারত পাইক-পেয়াদা।
‘সিংহ+ আসন’ এর সন্ধি থেকে সিংহাসন। রাজা আসার আগে চোঙায় ফুৎকার লাগিয়ে হাঁক পাড়তো রাজভৃত্য। সবাই যে যার জায়গায় তটস্থ। ব্যক্তিগত পেয়াদাসহ মহল কাঁপিয়ে হাজির হতেন রাজা। এসে মখমলে চাদর বিছানো নরম গদিতে বসতেন বালিশে হেলান নিয়ে। অনেকটা সিংহের মতো গা এলিয়ে। এরপর নিচুস্বরে ভৃত্যকে আদেশ দিলে শুরু হতো সেদিনকার দরবার।
রাজ-প্রাসাদ, দরবার, সিংহাসন, উজির-নাজির, পাইক-পেয়াদা, ভৃত্য প্রভৃতি সবই ছিলো হায়দ্রাবাদের নিজাম তথা এ রাজ্যের রাজাদের। সৌখিনতা আর আভিজাত্যে তারা ছিলেন রাজাদেরও রাজা। মুঘলদের পরে সব অর্থেই তারা ছিলেন সেসময়কার সবচেয়ে ধনী পরিবার। আসাফ জাহ রাজবংশের প্রাসাদ হলো ‘চৌমহল্লা প্যালেস’। ঐতিহাসিকদের মতে, সুবিশাল এ প্রাসাদ, রাজ-দরবারসহ সবকিছু দেখভালের জন্য ১৪ হাজারেরও বেশি কর্মচারী ছিলো। এই না হলে রাজার হাল!
প্রাসাদের একটি ভবনের নাম ‘খিলওয়াত মুবারাক’। এটিই ছিলো রাজ-দরবার। বিদেশি ঐতিহাসিকরা ইংরেজিতে লেখেন ‘দরবার হল’ নামে। বলাই বাহুল্য, দরবার হলে থাকবে রাজ-সিংহাসন। নিজামদের দেওয়া নাম ছিলো, ‘তখত্-ই-নিশান’। দরবার হলজুড়ে ১৯টি ঝাড়বাতির রোশনাই। যখন দরবার চলতো মোববাতির আলোয় জ্বলে উঠতো একসঙ্গে। ক্রিস্টাল কাচের এ ঝাড়বাতিগুলো নিজাম আনিয়েছিলেন তৎকালীন বেলজিয়াম থেকে। চারিধারে বাতাস আসা-যাওয়ার জন্য কপাটবিহীন ছোট ছোট দরজা, এরও উপরে ছোট ছোট সুদৃশ্য জানালা। দরজা-জানলার চারপাশজুড়ে শিল্পীর নিপুণ হাতের নান্দনিক কারুকাজ। তখত্-ই-নিশান সম্পূর্ণ মার্বেল পাথরে তৈরি। গোটা দরবার হলও তাই। আজ রাজ-সিংহাসন খালি, নিজামরা চলে গেছেন ইতিহাসের পাতায়। এক সময়ের গমগমে রাজ-দরবারে এখন কেবলই পর্যটকদের ভিড়।
বাংলাদেশ সময়: ১৭১০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২১, ২০১৭
এসএনএস