ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ফিচার

বাংলা সিনেমা নয়, সত্যিকারে লটারি জেতা লিটনের গল্প!

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৪৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২২, ২০১৭
বাংলা সিনেমা নয়, সত্যিকারে লটারি জেতা লিটনের গল্প! লটারি জেতা লিটন

বরিশাল থেকে: দরিদ্র নায়কের লটারি জিতে রাতারাতি বড়লোক হয়ে যাওয়া বাংলা সিনেমার খুব পরিচিত দৃশ্য। সিনেমায় নায়কের লটারি ভাগ্য সবসময় ভালো হলেও, বাস্তবে লটারি জিতে সফলভাবে নিজের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটিয়েছেন- এমন লোকের দেখা মেলা ভার।

তবে বরিশাল শহরের লিটন বাংলা সিনেমার নায়ক না হলেও জিতেছেন লটারি। সে টাকা দিয়ে সফলভাবে পরিবর্তন করেছেন নিজের ভাগ্য।

পেশায় ইজি বাইকচালক চালক। তবে তার জীবনের গল্প বাংলা সিনেমাকেও হার মানায়!
 
লিটনের জন্ম সিলেটে। হতদরিদ্র পরিবারে ছিলেন বাবা-মা ও বড় একটি বোন। লিটনের বয়স যখন মাত্র সাত, বাবা-মার কাছে দশ টাকা চেয়ে তা না পেয়ে অভিমান করে বের হয়ে আসেন বাড়ি থেকে। সাত বছর বয়সী লিটন তখনও জানেন না এই বাড়ির মুখ দেখার সৌভাগ্য তার আর জীবনে আসবে না।
 
অভিমানী লিটন সিলেটের নানা জায়গা ঘুরে চেপে বসেন এক লঞ্চে। এদেশের নদীপথে লঞ্চে লঞ্চে কতদিন কেটেছিল সেই স্মৃতি আজ মনে করতে পারেন না তিনি। একদিন লঞ্চ থেকে নামলেন বরিশাল শহরে। এরপর বরিশালেই কাটতে থাকে তার দিন।
 
মসজিদের সামনে ভিক্ষা করে, কখনও খেয়ে-না খেয়ে চলতে থাকে লিটনের একাকী জীবন। একদিন স্থানীয় এক রিকশা মেরামতের দোকানে টায়ার পাম্প করার কাজ পেয়ে যান তিনি। সারাদিন রিকশার চাকায় হাওয়া ভরেই খাওয়া জুটে যেত। এর মধ্যে বাড়ির কথা মনে পড়লেও ফিরতে ইচ্ছা হয়নি, অথবা ফেরা সম্ভবও ছিল না কিশোর লিটনের।
 
বয়স যখন পনের, একদিন খেয়ালের বশে মাইকে লটারির টিকিট বিক্রেতার কাছ থেকে চারশো টাকা দিয়ে কিছু টিকিট কিনে ফেলেন। কোনোদিন স্কুলের গণ্ডিতে পা রাখার সুযোগ না পাওয়ায় পড়তে পারেন না পত্রিকা। এক শুভাকাঙ্ক্ষীর বরাতে জানতে পারলেন টিকিটের নম্বর মিলে গেছে, জিতেছেন দ্বিতীয় পুরস্কার চার লাখ টাকা।
 
লিটনের লটারি জেতার খবর পরিচিত মহলে ছড়িয়ে পড়লে শুরু হয় বিপদ। নিঃসঙ্গ লিটনের কাছ থেকে লটারির টাকা কেড়ে নেওয়ার মতো সুযোগসন্ধানী লোকের অভাব ছিল না। যে মহাজনের অধীনে কাজ করতেন, সেই মহাজন পর্যন্ত লোকবল নিয়ে লিটনকে খুঁজে বেড়িয়েছেন টাকার লোভে।
 
এমন বিপদের সময় লিটনের সম্বল হয়ে দাঁড়ায় তার এতদিনের নিষ্ঠা ও সততা। সব সময় সহজ-সরল থাকতেন ও সবসময় সত্যি কথা বলতেন বলে স্থানীয় অনেকেই লিটনকে পছন্দ করতেন। তাদেরই সহায়তায় বিপদ সামাল দিতে সক্ষম হয়েছিলেন।
 
লটারি জিতে সিনেমার নায়ক রাতারাতি বড়লোক হয়ে গেলেও, লিটন এতে বড়লোক হতে পারেননি। তাছাড়া চার লাখ টাকা তেমন বড় অংকের টাকা না। এদেশের ধনীদের একটা শখের জিনিস কিনতেই এ পরিমাণ টাকা ব্যয় করতে হয়। এ পরিস্থিতিতে লিটন বুদ্ধিমানের মতো নিজেকে স্বাবলম্বী করে তোলার সিদ্ধান্ত নিলেন। লটারির টাকা দিয়ে একটা ইজিবাইক কিনে চালাতে শুরু করেন।
 
বয়স এখন একুশ। গত ছয় বছর নিজের ইজিবাইক চালিয়েই কাটিয়েছেন। দিনে যতো টাকা আয় করেন সবটাই তার। এভাবে দিনে রিফুয়েলিং বাদে দেড় হাজার থেকে দুই হাজার টাকা আয় হয়। থাকা-খাওয়াসহ মোটামুটি সবকিছু মিলিয়েই স্বাচ্ছন্দ্যে চলে যাচ্ছে তার দিন।
 
দপদপিয়া ব্রিজ যাওয়ার পথে লিটনেরই ইজিবাইকে চেপে বসা। জন্ম সিলেটে এবং বেড়ে ওঠা বরিশালে হওয়ায়, কথায় দোমিষালী টান। লিটন জানালেন, বাবা-মার উপর থেকে অভিমানের মেঘ এখনো সরে যায়নি। গত চৌদ্দ বছর একবারও কথা হয়নি বাবা-মার সঙ্গে। শুধু বড় বোনটার সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা হয় মাঝে মধ্যে।
 
নিজের জীবনের কথা অকপটে বলে ফেলেন অপরকে। অবশ্য বলার মতোই কাজ করে দেখিয়েছেন লিটন। তবে ভবিষ্যৎ নিয়ে তেমন কোনো পরিকল্পনা নেই তার। মাত্র একুশ বছর বয়স। এ বয়সে স্বাধীন জীবনটাই বেশি উপভোগ করেন তিনি।
 

বাংলাদেশ সময়: ০২৪৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৩, ২০১৭
এনএইচটি/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।