ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ফিচার

শরৎ এলো কী উল্লাসে নামলো খুশির ঢল!

হোসাইন মোহাম্মদ সাগর, ফিচার রিপোর্টার | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১৩১ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৩, ২০১৭
শরৎ এলো কী উল্লাসে নামলো খুশির ঢল! কাশবনে শিশুদের উচ্ছ্বাস/ছবি: বাংলানিউজ

ঢাকা: হিন্দু ধর্মলম্বীদের শারদীয় দুর্গাপূজায় পদ্ম ফুল লাগে। তবে সে পদ্ম ফুলে থাকতে হয় নীল আভা। যা অষ্টমীর দিন দান করা হয় দেবী দুর্গাকে। আর নীল চোখের মতো ১০৮টি নীলপদ্ম দ্বারা রামচন্দ্র শরৎ কালে অকালবোধন করছিলেন দুর্গাপূজায়।

১০৮টি নীলপদ্মে রামচন্দ্রের দুর্গাপূজা অকালবোধনের কাহিনী সবাই না জানলেও ‘১০৮টি নীল পদ্ম’ বিখ্যাত হয়ে আছে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘কেউ কথা রাখেনি’ কবিতার জন্য। আর শরৎ বিখ্যাত তার কাশফুলে, প্রকৃতির নরম গায়ে বর্ষার আড়মোড়া ভাঙতে।

আকাশের বিস্তীর্ণ মাঠে নীলের আবছায়া ঘন থেকে ঘনতর হয়ে উঁকি মারে স্বচ্ছ রোদ দিবালোকে। সে নীলের মাঠে সাদা সাদা মেঘখণ্ড কোদাল পড়া জমির মতো ভেসে বেড়ায় নিবিড় ছন্দে। সেই সঙ্গে নদীর কূলঘেঁষে চরে চরে কাশের ফুল দোলে বাতাসের অনিন্দ্য এক দোলনায়। কাশের বনে ভরপুর হয়ে ওঠে বালুর অঞ্চল।

কাশবনে শিশুদের উচ্ছ্বাসশরতের ঝকঝকে নীল আকাশ, নদী পাড়ের সারি সারি সাদা কাঁশবন আর মৃদু বাতাস দোলা দিয়ে যায় শিউলি ফুলের নরম পাপড়িতে। তাইতো শিশিরভেজা সবুজ ঘাসের বিছানায় রাতের ঝলমলে তারা হয়ে খসে পড়ে রাশি রাশি শিউলি ফুল। মাটিতে মিশে যায় তার জাফরানি বোঁটার দুধসাদা ছয় পাপড়ির গন্ধ।

অপরদিকে শরতকে শারদীয় রঙে রাঙাতে অনেক মণ্ডপেই শুরু হয়ে গেছে দেবী দুর্গার প্রতিমা তৈরির কাজ। খড়-বাঁশ দিয়ে কাঠামো তৈরি করে মাটি বসানো হচ্ছে। অনেকে আবার আরেকটু এগিয়ে গিয়ে রঙের কাজও ধরে ফেলেছেন। কয়েকটা দিন পরেই সব ধর্মের মানুষের আগমনে মুখর হয়ে উঠবে পূজাঙ্গন।

মহালয়া দিয়ে শুরু হওয়া শারদীয় দুর্গাপূজা এখন দ্বারপ্রান্তে। এবার দেবী দুগা মর্ত্যলোকে আসবেন দোলায় (নৌকা) চড়ে। ঘরদোর পরিষ্কার আর নতুন পোশাক কিনতে এখন তাই ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন মায়ের ভক্তরা। ষষ্ঠী দিয়ে শুরু হওয়া শারদীয় এ উৎসবের জাঁকজমকপূর্ণ বর্ণিল আয়োজন থাকে সবার জন্য। উৎসব তো থাকেই, সঙ্গে থাকে পূজার নানা আচার। একই সঙ্গে চলতে থাকে প্রতিমা রাঙানোর জন্য তুলির শেষ আচড়ের রং।

শুধু কি নীলপদ্ম, কাশফুল, দেবী দুর্গা আর শিউলি? শরতের রাতকে আরো মধুর করে তোলে বর্ষার ফুল বেলি। তার সাজানো পাপড়ির ঘ্রাণে মৌ মৌ করে সমস্ত রাত। আর সেই একেকটি রাতকে পাড়ি দিয়ে চলতে থাকে শারদীয় এ উৎসবে যোগ দেওয়ার অপেক্ষা।

শরতের অনুপম রূপবৈভবের মাঝে বেজে ওঠে বাঙালির প্রাণের বাঁশি। আকাশে বাতাসে অনুরণিত হয় উদার মুক্তির আহ্বান। ঘরের বন্ধন ছিন্ন করে অফুরন্ত সৌন্দর্য জোয়ারে ভেসে যেতে চায় মন। শরতের স্পর্শে রূপে-রসে বৈচিত্র্যে ভরপুর হয়ে ওঠে প্রকৃতি।
প্রতিমায় আঁচড় টানায় ব্যস্ত শিল্পীর
সে রূপভাণ্ডার থেকে রং ছিটকে পড়ে কেবল প্রকৃতিকেই কখনও নীল, কখনও সাদা মেঘ আর কাশফুলে ফুলে রাঙায় না; রং কবির মনেও ছিটকে পড়ে। আর তাইতো শরতের রূপ দিয়ে কবিও আচড় কাটেন কবিতার শরীরে-

শরৎ এলো কী উল্লাসে কাঁপছে নদীর জল
পাখনা মেলে বেড়ায় খেলে প্রজাপতির দল!
বাজলো কাঁসর সাজলো আসর চলরে সবাই চল
মন-গালিচায় বন গালিচায় নামলো খুশির ঢল!!
[ভবানী প্রসাদ মজুমদার]

বাংলাদেশ সময়: ০৭২৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২২, ২০১৭
এইচএমএস/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।