ওসমান আলী নিজাম হন ১৯১১ সালে। এর কয়েকবছর আগে ১৯০৪ সালে ম্যানচেস্টার ফ্যাক্টরিতে চার্লস রোলস ও হেনরি রয়েস বানান দুই সিলিন্ডারের বিলাসবহুল গাড়ি।
সেসময়কার ইংল্যান্ডের অভিজাত ও ধনী পরিবারগুলোর কাছে খবর চলে যায়। একটি রোলস রয়েস না থাকলে মান থাকছে না! খবর ইংল্যান্ড পেরিয়ে ভারতেও পৌঁছায়। তৎকালীন ভারতের সবচেয়ে ধনী পরিবার ছিলো নিজামরা। কাজেই তাদেরও একটি চাই!
শোনা গল্প, ওসমান আলী কোনো কাজে ইংল্যান্ড গিয়েছেন। সময় করে ঢু মারলেন রোলস রয়েসের শো-রুমেও। একে ভারত থেকে গিয়েছেন, ব্রিটিশ শাসনের অধীনস্ত প্রজা, এর উপর গিয়েছেন পায়জামা-চাপকান পরে। শো-রুমের লোকেরা ভাবলো, নেহাতই আরদালি— এ আবার কিনবে রোলস রয়েস! ভাগিয়ে দিলেন।
শরীরের রাজ-রক্ত। এতো বড় অপমান! কাওকে কিছু না বলে চলে এলেন নিজ রাজ্যে। এর কিছুদিন পর বাণিজ্যিকভাবে রোলস রয়েস ভারতে এলো। টার্গেট ক্রেতাশ্রেণি অবশ্যই সেসময়কার ঊর্ধ্বতন ব্রিটিশ কর্মকর্তারা। নিজাম খবর পাঠালেন তারও দু-তিনটি চাই।
হায়দ্রাবাদের নিজামদের শান-শওকত ওই মূর্খ শো-রুম কর্মচারীরা না জানলেও, ভারতের ভাইসরয়রা বিলক্ষণ জানতেন। পাঠিয়ে দিলেন রোলস রয়েস। ওসমান আলী সেই অপমান তখনও ভোলেননি। রোলস রয়েস হাতে পাওয়ার পর অদ্ভুত কাণ্ড করে বসলেন। সেসময় ভোরবেলা নিজামদের রাজ-প্রাসাদ চৌমহল্লা প্যালেস, এর চারপাশসহ রাজ্যের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ জায়গা পরিষ্কার করতে বেরোতেন ঝাড়ুদাররা। নিজাম ওসমান আলী নিয়ম করলেন, এখন থেকে ঝাড়ুদাররা যাবে রোলস রয়েসে চেপে। ব্যয়বহুল এ গাড়ি চেপেই রাস্তা ঝাড় দেবেন তারা। তাকে অপমানের বদলা তিনি নেন এভাবেই!
যথারীতি কানে যায় ভাইসরয়দের। তারা এসে নিজামের মান ভাঙান। এ গল্প ঐতিহাসিকরা স্বীকার না করলেও এটি সত্য, ঊর্ধ্বতন ব্রিটিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে নিজামদের সুসম্পর্ক ছিলো। রাজ্যের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে কর্মকর্তারা আসতেন, একইভাবে নিজামদেরও যাতায়াত ছিলো ইংল্যান্ডে।
যাইহোক, যে কথা বলতে এই গল্পের অবতারণা— ওসমান আলীর গাড়িপ্রীতি ছিলো সর্বজনবিদিত। এমনিতে নিজামরা খুবই সৌখিন ছিলেন, তিনি ছিলেন আরও এককাঠি সরস। সেসময়কার বিলাসবহুল ও অভিজাত সব গাড়িই যেমন- রোলস রয়েস, নেপিয়ার, ফোর্ড ট্যুরার, সেডান ডিলাক্স, ভলসবেলি, বুইক সুপার কনভার্টিবল কোপ, হার্লে ডেভিডসন বাইক প্রভৃতি আলো করে ছিলো তার বাগ্গিখানা অর্থাৎ গ্যারেজে।
জিপ গাড়ি, ঘোড়ায় টানা গাড়ি, পালকি প্রভৃতি তো ছিলোই। গাড়িগুলো এখনও তাদের সোনালি দিনের স্মৃতি হিসেবে রয়ে গেছে চৌমহল্লা প্যালেসের বাগ্গিখানায়।
তেলেঙ্গানা রাজ্য সরকারের তত্ত্বাবধানে গোটা প্যালেসটিই এখন যাদুঘর। স্থান পেয়েছে নিজামদেরই ব্যবহৃত জিনিসত্র, অস্ত্রশস্ত্র, ছবি, নথি, দলিল, ইত্যাদি। রোজ শতশত মানুষ জনপ্রতি ৫০ রুপি টিকিট কেটে দেখতে আসে। বিভিন্ন স্মৃতিচিহ্নের পাশাপাশি আভিজাত্য ও সৌখিনতার এরকম বহু গল্প প্রাসাদজুড়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১১৫৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৩, ২০১৭
এসএনএস