ঢাকার মিরপুর থেকে যানজট আর মানুষের ভিড় ঠেলে সদরঘাট পৌঁছাতে যে ঝামেলা পোহাতে হবে, সে তুলনায় সদরঘাট থেকে লঞ্চে বরিশাল পৌঁছানোটা অনেক কম ঝামেলার। সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল থেকে বরিশাল রুটে যাতায়াতের জন্য রয়েছে বেশ কিছু বিলাসবহুল লঞ্চ সার্ভিস।
এগুলো মধ্যে সুন্দরবন-১১ অন্যতম। লোয়ার ডেক, আপার ডেক, কেবিন ও বিজনেস ক্লাসসহ চারতলা এ লঞ্চটি প্রায় ১২শ জন যাত্রী ধারণক্ষমতা সম্পন্ন।
সুন্দরবন-১১ যোগে বরিশাল থেকে ঢাকা আসার পথে কথা হয় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র লুৎফর আলমের সঙ্গে। বিভিন্ন ছুটিতে বরিশালে বাবা-মায়ের কাছে যাওয়ার জন্য লঞ্চই সবচেয়ে সুবিধাজনক মনে করেন তিনি। তার ভাষ্যমতে, বাসের তুলনায় লঞ্চে যাতায়াত অনেক বেশি সহজ এবং আনন্দেরও। রাতে যে কোনো একটা লঞ্চে উঠে পড়লেই হয়। লঞ্চে ডিনার সেরে এক ঘুম দিয়ে উঠতে না উঠতেই পৌঁছানো যায় বরিশালে।
লুৎফরের সহযাত্রী তার দু’জন বন্ধু। লঞ্চের ছাদে বসে চলতে থাকে এই তিনজনের আড্ডা। নদীপথের ঠাণ্ডা বাতাসের পরোয়া নেই কারও। মেঘমুক্ত আকাশে বসেছে নক্ষত্রের মেলা। আবহাওয়া পূর্বাভাস অনুযায়ী কোনো ঝড়-বৃষ্টির চিন্তা নেই। লঞ্চভ্রমণটা উপভোগ করতে ও খোলা বাতাসে সময় কাটাতে আরও অনেক যাত্রীদের ছাদে উঠতে দেখা গেলো। একই লঞ্চে বরিশাল থেকে ঢাকায় ফিরছেন বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার প্রায় হাজারখানেক মানুষ।
এ লঞ্চটিতে রয়েছে আধুনিক প্রযুক্তি ও বিভিন্ন ধরনের সুবিধা। এতে রয়েছে ডুপ্লেক্স কেবিন, ফুড কর্নার, যাত্রীদের জরুরি চিকিৎসাসেবার জন্য সিসিইউ ইউনিট, লিফটসহ আরও অনেক আধুনিক যাত্রীসেবা।
পুরো লঞ্চ জুড়েই রয়েছে উজ্জ্বল আলোকসজ্জা ও সাউন্ড সিস্টেম। নিচতলার প্রায় পুরোটাই সুবিশাল ডেক। ডেকের পিছনে রয়েছে রান্নাঘর ও ক্যান্টিন। ডেকের সিঁড়ি দিয়ে উঠলে দোতলার আপার ডেক। দোতলার বাকি অংশ ও তৃতীয়তলা জুড়ে রয়েছে কেবিন ও সোফা। চতুর্থ তলায় হুইল হাউজ ও কন্ট্রোল রুম।
তবে লঞ্চ দুর্ঘটনার হার বেশি হওয়ায় নৌভ্রমণ ঝুঁকিপূর্ণ মনে করা হয়। অন্য যেকোনো দেশের তুলনায় এদেশে লঞ্চডুবির হার একটু বেশি। আর লঞ্চে একসঙ্গে অনেক মানুষ যাতায়াত করে বলে লঞ্চডুবির পরিণতি হয় আরও ভয়াবহ।
এ বিষয়ে কথা হয় সুন্দরবন-১১ লঞ্চের সুপারভাইজর সিরাজের সঙ্গে। তিনি বলেন, দুর্যোগ-দুর্ঘটনা যে কোনো সময় ঘটতে পারে। সড়কপথেও অনেক বেশি দুর্ঘটনা ঘটতে দেখা যায়। কিন্তু লঞ্চ একসঙ্গে অনেক মানুষ পরিবহন করে এবং দুর্ঘটনার সময় মাঝনদীতে উদ্ধার কাজ অনেক কষ্টকর হয় বলে লঞ্চে দুর্ঘটনার এতো ভয়াবহতা।
নিয়মিত মেরামত না করা এবং যান্ত্রিক ত্রুটিই লঞ্চ দুর্ঘটনার প্রধান কারণ মনে করেন সিরাজ। নিয়মিত মেরামত ও কোনো প্রকার যান্ত্রিক ত্রুটি না থাকলে এবং নিয়মিত মেরামত করালে অনেক প্রবল ঝড়ও সামাল দেওয়া সম্ভব। তবে সবসময়ই সতর্ক থাকা উচিত লঞ্চ কর্তৃপক্ষ-যাত্রী উভয়েরই।
সিরাজ আরও জানান, সুন্দরবন-১১সহ বরিশাল রুটের আধুনিক লঞ্চগুলো দুর্যোগ মোকাবেলার জন্য বিশেষভাবে তৈরি। এসব লঞ্চের তলভাগে রয়েছে আলাদা আলাদা লেয়ার। ফলে এক অংশে পানি লিক করলে, অন্য অংশগুলোতে সে পানি ঢুকতে পারবে না। সুতরাং বরিশাল ভ্রমণে ইচ্ছুকরা নির্ভয়ে-নিশ্চিন্তে যাতায়াত করতে পারেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৪০০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৫, ২০১৭
এনএইচটি/এএ