এর চার-পাঁচ বছর পর বাংলা ডাবিংয়ে ধারাবাহিকটি বাংলাদেশ টেলিভিশনেও প্রচারিত হলে ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে। বাচ্চা থেকে বুড়ো প্রতি রোববার রাত আটটার বাংলা সংবাদের পর টিপু সুলতানের অসীম সাহসিকতা আর শৌর্যন-বীর্য দেখতে বসে যেত পর্দার সামনে।
টিপু সুলতানকে ডাকা হতো শের-ই-মহীশূর। উপাধিটা ইংরেজদেরই দেওয়া। তাকে শের অর্থাৎ বাঘ ডাকার মূল কারণ ছিলো- তার অসাধারণ ক্ষীপ্রতা, দক্ষতা, বুদ্ধিমত্তা আর কৌশলপূর্ণ রাজ্য পরিচালনা। কথিত রয়েছে, ১৭৪৯ খ্রিস্টাব্দে ‘টিপু’ নামে এক ফকিরের দোয়ায় হায়দার আলী এক পুত্রসন্তান লাভ করেন এবং আনন্দচিত্তে ওই ফকিরের নামেই ছেলের নাম রাখেন ‘টিপু’। মহীশূরের স্থানীয় কান্নাড়া ভাষায় টিপু শব্দের অর্থ হলো বাঘ।
এমনিতেও ছোটবেলা থেকেই টিপু সুলতান বাঘের গল্প শুনতে ভালোবাসতেন। বাবাই তাকে বাঘের গল্প শোনাতেন। কিশোর বয়সে টিপু সুলতান বাঘ পুষতে শুরু করেন। বাঘ নিয়ে তার উদ্দীপনার শেষ ছিলো না। টিপু সুলতানের রাজ্যের প্রতীক ছিলো বাঘ। এই বাঘ ছিলো তার অনুপ্রেরণার মতো। বাঘ নিয়ে তার একটি বিখ্যাত উক্তিও রয়েছে, শিয়ালের মতো দু'শো বছর বাঁচার চেয়ে বাঘের মতো দু'দিন বেঁচে থাকাও ভালো।
যাইহোক, টিপু সুলতানকে মনে পড়ে যাওয়ার কারণ, তার নির্মিত ‘সামার প্যালেস’দর্শন। ভৌগলিক অবস্থানে প্যালেসটি ভারতের কর্ণাটকা রাজ্যের ব্যাঙ্গালোরে। তার শাসিত মাইসোর অর্থাৎ মহীশূর রাজ্যও বর্তমান কর্ণাটকা রাজ্যের অন্তর্গত ছিলো।
প্রচণ্ড গরম থেকে বাঁচতে নিজের মূল প্রাসাদ ও দূর্গ থেকে একটু দূরে খোলামেলা জায়গায় এ প্রাসাদটি নির্মাণ করেন। গরমের সময় টিপু সুলতান এখানে এসে থাকতেন। অবশ্য তার পিতা এটির উদ্যোগ নিলেও কাজ সম্পূর্ণ করেন তিনিই। ১৯৯১ সালে প্যালেসটির নির্মাণ কাজ শেষ হয়।
নয়নাভিরাম এ প্যালেসটি নির্মাণে পাথর, মর্টার ও প্লাস্টার ব্যবহৃত হলেও সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করা হয়েছে কাঠ। বাইরে থেকে দেখে একতলা ভবন মনে হলেও এটি আসলে দোতলা সিমেট্রিক্যাল নকশায় বানানো। পাথর আর কাঠের মজবুত পিলারগুলোতে ভর করে ২২৬ বছর ধরে দাঁড়িয়ে রয়েছে প্যালেসটি।
ইন্দো-ইসলামিক স্থাপত্যে গড়া প্রাসাদের পিলার, খিলান ও বালকনির নান্দনিক কারুকার্যগুলো কাঠ খোদাই করে করা। দু’টি ভিন্ন রঙে সেজে উঠেছে সেগুলো। খিলানগুলোতে অপূর্ব সুন্দর ফুলের মোটিফ।
গরমে থাকার পাশাপাশি টিপু সুলতান এটি দরবার হল হিসেবেও ব্যবহার করতেন। পশ্চিম ব্যালকনির উপরের ফ্লোর থেকে তিনি দরবার পরিচালনা করতেন। ইন্ডিয়ান আর্কেওলজিক্যাল সার্ভের তত্ত্বাবধানে নিচতলার রুমগুলো বর্তমানে ছোটখাটো জাদুঘর হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। সেখানে স্থান পেয়েছে টিপু সুলতান সম্পর্কিত তথ্য, তার কিছু দুর্লভ ছবি, তার ব্যবহৃত তলোয়ার ও লাঠি, জেমস হান্টারের বেশ কয়েকটি স্কেচ এবং একটি বাদ্যযন্ত্র।
নিচতলা থেকে দোতলা ওঠার জন্য রয়েছে চারদিক থেকে চারটি সিঁড়ি। প্যালেসের পরতে পরতে অনন্য সুন্দর নকশাগুলো মুগ্ধ করবে যে কাউকেই। এজন্যই রোজ শত শত মানুষ ঘুরতে আসে টিপু সুলতানের সামার প্যালেস। জনপ্রতি ১৫ রুপি টিকিট। ব্যাঙ্গালোর শহরের যেকোনো প্রান্ত থেকে ক্যাব বা অটোরিকশাযোগে যাওয়া যাবে। বললেই হবে, টিপু সুলতানের সামার প্যালেস যাবো।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৪০ ঘ্ণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৫, ২০১৭
এসএনএস