প্রযুক্তির উন্নয়নের ফলে আজ টাইপ রাইটারের প্রয়োজন ফুরিয়ে গেছে। টাইপ মেশিন হারিয়ে গেছে কম্পিউটারের উদ্ভবে।
মূলত: গোটা সৈয়দপুরে তিনিই এখন একমাত্র টাইপ মেশিনে টাইপ করে গোটা পরিবারের জীবিকা নির্বাহ করছেন। বার্ধক্যের কারণে বাবা নেছার আনছারী যখন কাজকর্ম থেকে অবসরে তখন অল্প বয়সেই লাড্ডান টাইপ মেশিন নিয়ে পরিবারের হাল ধরেন। সৈয়দপুরের গোলাহাটের বাসিন্দা লাড্ডানের পুরো নাম ওয়াকার আহমেদ লাড্ডান।
নীলফামারী জেলা জজ আদালতের বারান্দায় টাইপের কাজ করেন তিনি। যদিও এখন তেমন কাজ না থাকায় বেশিরভাগ সময় কাটে বসে থেকে। তবে বাড়তি কাজ পেলে বাড়ি ফিরেও তিনি সারেন টাইপের কাজ। এই টাইপ মেশিনে কাজ করে কষ্ট করে হলেও ছোট ভাই-বোনদের মানুষ করেছেন তিনি। পড়িয়েছেন মাস্টার্স পর্যন্ত।
সরেজমিনে নীলফামারী আদালতপাড়ায় গিয়ে দেখা যায়, হাতে লেখা কাগজের দিকে তাকিয়ে একমনে টাইপ করে যাচ্ছেন লাড্ডান। মাত্র ৩ থেকে ৪ মিনিটে একটি পাতা টাইপ করে হাতে পাচ্ছেন ২০ টাকা। বাংলানিউজকে জানান, আগের মত টাইপের কাজ আর পাওয়া যায় না। ১৯৯৩ সাল থেকে আদালতপাড়ায় পেশাদার হিসেবে যখন টাইপিস্ট এর কাজে ঢুকি তখন এ কাজের প্রচুর চাহিদা ছিল। লাইন ধরে আসতেন অনেকে টাইপ করাতে। তখন কাজের চাহিদা থাকায় আয় রোজগারও ভালো ছিল। তখন দিন গেলে ৬০০ থেকে ৮০০ পর্যন্ত আয় হতো। আর এখন সারা দিনে দু’শ’ টাকা আয় করা মুশকিল। তবে বিদ্যুৎ চলে গেলে কদর বাড়ে টাইপের।
সৈয়দপুরে টাইপিস্টদের জন্য প্রশিক্ষণ কেন্দ্রও গড়ে উঠেছিল একসময়। শহরের শহীদ ডা. জিকরুল হক রোডে অবস্থিত অক্সফোর্ড কমার্শিয়াল কলেজ নামক প্রতিষ্ঠানে তখন টাইপের কাজ শেখার জন্য দূর দূরান্ত থেকে শিক্ষার্থীরা আসতো। প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানের সামনে বড়োসড়ো সাইনবোর্ড ঝুলানো থাকতো। সেখানে লেখা থাকতো 'এখানে অভিজ্ঞ প্রশিক্ষক দ্বারা টাইপ শিক্ষা দেয়া হয়'। একইসঙ্গে অফিস-আদালতের প্রয়োজন মাফিক কাগজপত্র টাইপ করা হতো সেখানে। কিন্ত এখন টাইপের কাজ দখল করেছে কম্পিউটার।
সৈয়দপুরস্থ অক্সফোর্ড কমার্শিয়াল কলেজের মো. ফিরোজ বলেন, এক সময় টাইপ করা বা প্রশিক্ষণের জন্য ভিড় লেগে থাকতো। কিন্ত সময়ের চাহিদায় সেই কবে টাইপ মেশিন সরিয়ে ফেলেছি আমরা। এখন কম্পিউটারে চলে যাবতীয় কাজ। লাড্ডান টাইপিস্টও ছিলেন একসময় এ প্রতিষ্ঠানের ছাত্র। যিনি আজও এ টাইপিস্ট এর কাজ জিইয়ে রেখেছেন।
এখনো টাইপমেশিন দিয়ে কিভাবে জীবিকা নির্বাহ করছেন- জানতে চাইলে পুরনো টাইপ রাইটারটি মুছতে মুছতে লাড্ডান টাইপিস্ট বলেন, টাইপের কাজ না থাকায় জীবিকা নির্বাহ কষ্টকর হয়েছে সত্য, কিন্ত মেশিনের সাথে, জায়গার সাথে, মনের সাথে একটা স্থায়ী সম্পর্ক হয়ে গেছে। কম্পিউটার নিতে গেলে অনেক টাকা প্রয়োজন। হয়তো একদিন টাকা জমা করে সেটাও হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৩১৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৪, ২০১৭
জেডএম/