ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ফিচার

হাজার বছরের শিবলিঙ্গ, সিংহাসন ও গণেশ ভাস্কর্য

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩৫৪ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৯, ২০১৭
হাজার বছরের শিবলিঙ্গ, সিংহাসন ও গণেশ ভাস্কর্য শিবলিঙ্গ স্থাপিত মন্দির, ছবি: শুভ্রনীল সাগর

ওয়ারাঙ্গাল (তেলেঙ্গানা) থেকে ফিরে:  ‘৯শ বছরকার ওয়ারাঙ্গাল ফোর্টের টুকরো পাথরের প্রতাপ’ ও‘কাকাতিয়া সাম্রাজ্য যেনো শেষ বিকেলের মুছে যাওয়া আলপনা!’ –

এ দুই প্রতিবেদনে আমরা জেনেছি কাকাতিয়া সাম্রাজ্যের কথা। তাদের উত্থান, বিস্তার ও পতন।

দেখেছি দিল্লি সালতানাতের বিরুদ্ধে যাওয়ায় কীভাবে ধ্বংস হয়ে গেছে তাদের তৎকালীন রাজধানী ওরুঙ্গালসহ (বর্তমান ওয়ারাঙ্গাল) ওয়ারাঙ্গাল দূর্গ। সেসব ইতিহাস আজ টুকরো পাথরের রূপে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে এখানে-ওখানে। এক সময়কার প্রতাপশালী সাম্রাজ্য আজ আক্ষরিক অর্থেই ধূলায় লুটিয়ে।

সেসব কথা আগেও হয়েছে, আজ বরং অন্য কথা। কাকাতিয়া সাম্রাজ্য পতনের পর সাতশো বছর কেটে গেলেও রয়ে গেছে কিছু অমূল্য প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন।

শোনা কথা, প্রতাপরুদ্র (১ম) বংশ পরম্পরায় পূর্বপুরুষদের কাছ থেকে একটি শিবলিঙ্গ পেয়েছিলেন। ৯০০ খ্রিস্টাব্দেদক্ষিণ ভারতের একটি অংশের রাজা ছিলেন কিংবদন্তি শাসক দূর্জয়। ঐতিহাসিকরা অনুমান করেন, তারই উত্তরপুরুষদের একটি ধারা থেকে এসেছেন কাকাতীয়রা। চালুক্য রাজবংশের সঙ্গেও কাকাতিয়াদের যোগ রয়েছে বলে অনেকের মত।  ১১৬৩ সালে প্রতাপরুদ্র (১ম) স্বায়ত্তশাসিত কাকাতিয়া সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার পর শিব মন্দির করে সেখানে শিবলিঙ্গটি স্থাপন করেন। ধারণা করা হয়, শিবলিঙ্গটি এক হাজার বছরেরও বেশি পুরনো। হওয়াটাও স্বাভাবিক কারণ, ১০৮৩ খ্রিস্টাব্দ থেকেই মূলত কাকাতীয়দের যাত্রা। কিন্তু আগেকার শাসকদের সম্পর্কে তেমন কোনো তথ্য মেলে না। গণপতি গণেশ, ছবি: শুভ্রনীল সাগরপরবর্তী কাকাতিয়া রাজারা তাদের প্রধান দূর্গের কলেবর বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে মন্দিরটিরও নতুন রূপ দেন। সম্পূর্ণ পাথরে রূপান্তরিত করা হয় মন্দির। সেইসঙ্গে মন্দিরে স্থান পায় গণ তথা শিবের পরিচারকদের প্রধান অর্থাৎ গণপতি গণেশের পাথুরে ভাস্কর‌্য। বাদ যায় না শিবের আবাসস্থল কৈলাসের দ্বাররক্ষী নন্দীও (ষাঁড়)।

শিব বা তার রূপী শিবলিঙ্গ যেখানে থাকবে সেখানে নন্দী অবশ্যই থাকবে। কারণ, শিব মন্দির করার অবশ্য করণীয় শর্ত হলো, শিব ছাড়াও সেখানে থাকবে গণেশ ও নন্দী। কাজেই শিবলিঙ্গ যদি হাজার বছরের পুরনো হয়, একইভাবে পুরনো এ দুই ভাস্কর‌্যও। কৈলাসের দ্বাররক্ষী নন্দী, ছবি: শুভ্রনীল সাগর১৩২৩ সালে গিয়াসউদ্দিন তুঘলক শাহের পাঠানো বাহিনীর এক মাসব্যাপী ধ্বংসলীলার পরও শত শত বছর কেটে গেছে। ভাগ্যক্রমে যে কয়েকটি জিনিস বেঁচে গেছে এর মধ্যে রয়ে গেছে এই কয়েকটি নিদর্শন। ধর্ম-বর্ণ-গোত্রের ঊর্ধ্বে এগুলো আসলে প্রত্নতাত্তিক সম্পদ। ভাস্কর‌্যশিল্পের জায়গা থেকে দেখলেও কোনো অংশে কম যায় না। পাথরের সিংহাসন, ছবি: শুভ্রনীল সাগরকাকাতিয়া সাম্রাজ্যের স্মৃতিচিহ্ন জড়ো করে যখন পার্ক করার কথা ভাবা হলো, তখন এগুলোর সঙ্গে রাজাদের সিংহাসনটিও খুঁজে পায় আর্কেওলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়া। বলাই বাহুল্য, সিংহাসনের সেই রাজারা নেই। ভেঙেও গেছে চারদিক থেকে। কিন্তু পাথরে গড়া সিংহাসনটি থেকে প্রতাপ-প্রতিপত্তি যেনো এখনও ঠিকরে বেরোচ্ছে!

বাংলাদেশ সময়: ০৯৫৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৯, ২০১৭
এসএনএস

**৯শ বছরকার ওয়ারাঙ্গাল ফোর্টের টুকরো পাথরের প্রতাপ

**‘কাকাতিয়া সাম্রাজ্য যেনো শেষ বিকেলের মুছে যাওয়া আলপনা!

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।