‘বাউল সম্রাট লালন শাহ তার প্রতিটি গানের মধ্য দিয়েই কিছু দর্শন জ্ঞান দিয়ে গেছেন মানুষকে। কেউ সেগুলো বুঝতে পারে, কেউ পারে না।
আলোচ্য গানের মর্মকথায় তিনি বলেন, ‘বাউলদের মধ্যে একটা কথা প্রচলিত আছে। আসলে সাধনের যে কথা, সে বড় গুপ্ত কথা, গোপন কথা। গোপনে যার সাধন করার ইচ্ছা জাগবে, এ শুধু তার কাছেই বলা যায়। ইশারা-ইঙ্গিতে বুঝিয়ে দেওয়া যায়। ’
উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, ‘ধর্মটা কী? বাউলের ‘বাও’ মানে বাতাস, ‘উল’ মানে সন্ধান। বাউল বাতাসের সন্ধান করে। নাসিকাতে চলে ফেরে। বাউল, ফকির একই স্তরেরই জিনিস। তো, আপন ধর্মকথা না কহিও যথা-তথা, তার মানে কী? আমার গুরু আমাকে যে পথ দেখিয়েছেন, সেই পথে আমি আছি কিনা জানার পর তিনি আমার যোগ্যতা বুঝে আমাকে দীক্ষা দিবেন। ’পাশ থেকে কথা বলে ওঠেন নহিরুদ্দিন ফকির। তিনি বলেন, ‘একটা মানুষের ধ্যান-ধারণা, তার বুঝ একটা নির্দিষ্ট সীমায় না আসা পর্যন্ত তার সামনে গুরুত্বপূর্ণ কথা রাখা হয় না। তাহলে সেটা তার ধারণায় নিতে চাইবে না। বরং সে একটা কু-মন্তব্য করবে অথবা অন্যরকম ভাববে। ’
‘সে কারণেই এগুলো যোগ্যতা ও জ্ঞানের গভীরতার ওপর নির্ভর করে উত্থাপন করা হয় ও করা প্রয়োজন। কারণ ক্লাস টু’র ছাত্রের কাছে নিশ্চয়ই ক্লাস ফোর-ফাইভের পাঠ্য উপস্থাপন হয় না। উপস্থাপন করলেও সে তা সঠিক ভাবে বুঝতে পারবে না। আগে বুঝতে হবে, পরিমাপ করতে হবে তার পরিধি কতটুকু, তারপর বাকি কথা। ’
এ পর্যায়ে ফের টুনটুন ফকির বলেন, ‘যোগ্য পাত্র ছাড়া কোনো কথাই কাউকে বলা যাবে না, বলা উচিত নয়। গুরুতে মনুষ্য জ্ঞান যার, অধপতন গতি হয় তার। গুরু কখনও মানুষ না। যে গুরুকে মানুষ ভাবে সে কখনও আল্লাহ পাবে না। কোনো কিছু পাবার আশায় প্রভুকে ডাকা বা অল্লাহকে ডাকা, ধর্ম করা। হ্যাঁ, এটা অবশ্যই পাবার আশায়, সব কিছু তো প্রভু তোমায় দিয়ে রেখেছে। তুমি ইহ-জগতে আসার পূর্বেই প্রভু তোমায় দিয়েছে। তুমি জানো না তাই। ’‘জ্ঞান প্রসারের মধ্য দিয়েই তুমি দেখতে পাবে তোমার কী ক্ষমতা আছে। তুমি যে আমি আমি করছো, সেই আমির কী ক্ষমতা আছে। সব ক্ষমতার উৎসই হচ্ছে প্রভু। তুমি যদি গুরুকর্ম না শিখেই গুরুকর্ম আরেকজনের কাছে ব্যক্ত করো, এটাতে বরং তোমার আরও ক্ষতি হবে। ’
টুনটুন ফকিরের কথা সূত্র ধরে নহিরুদ্দিন ফকির বলেন, ‘গুরু তো আমার চিন্তা-চেতনা-জ্ঞান। নিজের জ্ঞান-চেতনাকে যে যতো বেশি জাগ্রত করবে, সে দুনিয়া সম্পর্কে, পৃথিবী সম্পর্কে, প্রকৃতি সম্পর্কে ততো বেশি অবগত হতে পারবে, এটাই ব্যাপার। গুরু বলতে গেলে একটা ব্রহ্মশক্তি, একটা পাওয়ার। তার কথা, তার ভজন কথা যে কাউকে নিশ্চয়ই বলা যায় না। বাউলদের সাধন ভজন পদ্ধতি তো আর যে কেউ সাধারণ লোকে বুঝবে না। ’
বাংলাদেশ সময়: ১৫৪১ ঘণ্টা, অক্টোবর ২০, ২০১৭
এইচএমএস/এইচএ/
** শিলাইদহের কুঠিবাড়িতে রবীন্দ্রনাথের সান্নিধ্য!