ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ফিচার

ফুল বিক্রিতে জীবনের চাকা ঘোরে আল-আমিনের

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪২৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৪, ২০১৯
ফুল বিক্রিতে জীবনের চাকা ঘোরে আল-আমিনের টিএসসি এলাকায় ফুল বিক্রি করছে আল-আমিন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘স্বোপার্জিত স্বাধীনতা চত্বরে’ উন্মুক্ত আকাশের নিচে যে শিশুটি রাতযাপন করে তার নাম আল-আমিন। বয়স এগারো না পেরুলেও পরিবারের প্রতিদিন রোজগারের একটি অংশ আসে তারই হাত ধরে। যে কারণে সকাল-সন্ধ্যা গোলাপ নিয়ে টিএসসির এদিক-সেদিক ছোটে সে। হাতে থাকা ছোট বালতিটা এগিয়ে দিয়ে একটি ফুল কেনার আকুতি জানায় আড্ডারত শিক্ষার্থীদের।

ভৈরবের বাসিন্দা হলেও ভিটাবাড়ি হারিয়ে মা মাজেদা বেগম আর ছোট ভাই রাব্বীকে নিয়ে ঠাঁই নেয় ঢাবি এলাকায়। দুই ভাই মিলে ভোরে শাহবাগ থেকে ফুল কেনে।

তারপর সকাল থেকে রাত প্রায় ৯টা পর্যন্ত তা বিক্রির উপর ঘোরে এই পথশিশুর জীবনের চাকা।

নিজের প্রাত্যহিক লড়াই-সংগ্রামের বর্ণনা দিয়ে বাবা হারানো আল-আমিন বাংলানিউজকে বলে, কোনোদিন বেশি বিক্রি হয়, আবার কমও। সর্বোচ্চ ৭০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করেছি। আমার ছোট ভাইও ২০০ টাকার মতো পায়। ফুল বিক্রির সব টাকা মায়ের হাতে তুলে দেই। মা অসুস্থ, তাই কোন কাজ করতে পারে না বলেও জানায় এ বয়সেই ‘জীবন সংগ্রামে’ নামা আল-আমিন।

তবে এতো সংগ্রামের মধ্যেও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে পথশিশুদের নিয়ে বিদ্যালয় ‘মজার স্কুলে’ প্রথম শ্রেণিতে পড়াশোনা করছে। ‘পড়তে ভালো লাগে। ভাইয়ারা সুন্দর করে ক্লাস নেন। আমি যতদিন পারি পড়বো’, বলে আল-আমিন।

শুধু আল-আমিন নয়, টিএসসি এলাকায় ইয়াছমিন, স্বর্ণা, মারিয়া, ভাবনা, শিলা, রাজীব, বৈশাখীসহ অনেক পথশিশুর দেখা মেলে। যে বয়সে তাদের স্বপ্ন দেখার কথা, দুরন্তপনায় বেলা গড়ানোর কথা, সেই বয়সে বাঁচার জন্য তাদের প্রতিনিয়ত সংগ্রাম করতে হয়। এসব শিশুরা কেউ বাবা হারিয়েছে, কেউ হারিয়েছে মা। তবে জিসান নামে যে শিশুটি রয়েছে সে মা-বাবা দু’জনকেই হারিয়েছে।  

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় পথশিশুদের নিয়ে কাজ করে ‘স্ট্রিট ল্যাম্প’ নামের একটি সংগঠন। এসব ছিন্নমূল শিশুদের জন্য নিজেদের কার্যক্রম সম্পর্কে জানতে চাইলে সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, এসব শিশুরা প্রচুর পরিশ্রম করে, দিনরাত কষ্ট করে। তারা মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত। আমরা বিভিন্ন মৌসুমে তাদেরকে সহায়তা দেওয়ার চেষ্টা করি। শীতের সময় জ্যাকেট, কম্বল দিই। সংগঠনের সদস্যরা সবাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। যে কারণে সীমাবদ্ধতা রয়েছে। তাই সাহায্যের হাত বাড়িয়ে এসব শিশুদের জীবন ‘সহজ’ করতে সমাজের বিত্তবানদের এগিয়ে আসা উচিত বলে মন্তব্য করেন হাবিবুর রহমান।

বাংলাদেশ সময়: ০৯২৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৪, ২০১৯
এসকেবি/জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।